এক ঝাপটায় সব শেষ” ঝড়ে ঘর হারিয়ে অসহায় রেজাউল
- প্রকাশঃ ০৩:৪২:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫
- / 71
“এক ঝাপটায় সব শেষ ছেলেমেয়ে লইয়া এহন কই যাইমু। ঘর যে বানামু—সেই সামর্থ্য নাই।”
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন নড়াইল সদর উপজেলার কলোড়া ইউনিয়নের আগদিয়া গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল মিনা (৪০)। গত রোববার (১ মে) রাতে হঠাৎ শুরু হওয়া ঝড়ের তাণ্ডবে তার টিনশেড ঘরটি সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়ে যায়। স্ত্রী ও চার সন্তানকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে অসহায়ভাবে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।
ঝড়ের সময় পরিবারসহ ঘরে ছিলেন রেজাউল। তিনি বলেন,
“রাতে ছেলে-মেয়ে নিয়া ঘুমায়াছিলাম। বৃষ্টি হচ্ছিল। হঠাৎ ঝড় উঠল। মাত্র ১০ মিনিটেই সব উড়ায় নিল। ছেলে-মেয়েকে নিয়া জানটা বাঁচানোই দায় হইছিল। পাশের বাড়িতে দৌড় দিয়া আশ্রয় নিছি।”
ঝড় শেষে সকালে দেখা যায়, ঘরের চালা, টিনের বেড়া সব ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। মাটির তৈরি মেঝেতে কাদায় ভেজা জামা-কাপড়, বই-খাতা, চালের ড্রামসহ অন্যান্য সামগ্রী কেবলই টিকে আছে। তবে নেই কোনো মাথা গোঁজার ঠাঁই।
ধারদেনা করে নির্মিত ঘরটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রেজাউল। সামনে ঈদ, অথচ মাথার উপর ছাদ নেই।
তিনি বলেন,
“ধার দিয়া কোনমতে ঘর বানাইলাম, এখন সেইটাও উড়ায় নিল। ঈদ সামনে, ছয়াল মায়াগো লইয়া কেমনে থাকব?”
স্থানীয় বাসিন্দা মিরন শেখ বলেন,
“রেজাউল খুব গরীব মানুষ। অনেক কষ্টে ধার করে একটা ঘর বানাইছিল। এই অবস্থায় তার এই ক্ষতি মেনে নেওয়া যায় না। সরকার যদি সহায়তা করত, তাহলে মানুষটা কিছুটা উপকৃত হইত।”
এ বিষয়ে কলোড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নেছার আলী জানান,
“রেজাউলের ঘর পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে এসেছি। তাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) বরাবর আবেদন করতে বলেছি।”
নড়াইল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন,
“প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কেউ যদি আমাদের কাছে আসে, তাহলে আমরা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আর্থিক সহায়তা প্রদান করি।”
সরকারি সহায়তা না আসা পর্যন্ত রেজাউল ও তার পরিবারকে রাত কাটাতে হবে খোলা আকাশের নিচে কিংবা আশপাশের প্রতিবেশীদের দয়ার উপর।
নুন আনতে পান্তা ফুরানো এই সময়টিতে মানবিক সহায়তা পেলে হয়তো তার মতো একজন অসহায় মানুষ নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস পেতেন।




























