ঢাকা ০৭:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

UIU শিক্ষার্থীদের ৫ দফা দাবিতে নতুনবাজার অবরোধ, পুলিশের লাঠিচার্জে আহত বহু শিক্ষার্থী

হেলালুজ্জামান
  • প্রকাশঃ ০৭:২৮:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫
  • / 102

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (UIU) শিক্ষার্থীদের ৫ দফা দাবিতে আয়োজিত নতুনবাজার অবরোধ কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিচার্জে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়পাড়া। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, পুলিশের হামলায় একাধিক শিক্ষার্থীর মাথা ফেটে যায় এবং অনেকে গুরুতর আহত হন।

তবে আহত অবস্থাতেই অনেক শিক্ষার্থী আন্দোলনে অংশ নিতে ফিরে আসেন এবং দ্রুত ক্যাম্পাস ও আশপাশে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখেন।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনী—যারা জনগণের করের টাকায় পরিচালিত—তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের উপর বর্বর হামলা চালিয়েছে। শিক্ষার্থীদের ভাষায়, “এ যেন আরেক ১৮ জুলাই”— যেদিন ইতিহাসে ছাত্ররা রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অভ্যুত্থান গড়ে তুলেছিল।

২০২৪ সালের ৯ আগস্ট থেকে UIU-তে শুরু হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ‘রিফর্ম আন্দোলন’। এটি শুরু হয় ১৩ দফা দাবির মাধ্যমে, যার মধ্যে গ্রেডিং পদ্ধতির সংস্কার, রিসার্চ সুযোগ, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং ছাত্রসংসদ গঠনের মতো দাবিগুলো প্রাধান্য পায়। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু আশ্বাস দেওয়া হয়, বাস্তবায়নের অভাবে আন্দোলন আরও বিস্তৃত হয়।

বর্তমানে শিক্ষার্থীরা যে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, তা হলো:

১. সব বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার ও ক্ষতিপূরণ প্রদান
২. বহিষ্কারে জড়িত ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরপেক্ষ তদন্ত ও শাস্তি
৩. প্রশাসনিক অনিয়মের বিরুদ্ধে রিফর্ম দাবির বাস্তবায়ন
৪. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য স্বাধীন সংস্কার কমিশন গঠন
৫. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ১৫% কর বাতিল

বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম মিয়ার নিয়োগকে ঘিরেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে অতীতে বুয়েটে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগদানের অভিযোগ ছিল। UIU-তে তাঁর নিয়োগের ক্ষেত্রেও একই রকম অভিযোগ উঠেছে—যার পেছনে রয়েছে শিক্ষা উপমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ ও প্রভাব।

এছাড়া, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নার্গিস জাহানের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। যদিও তাঁকে অপসারণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তিনি এখনো বহাল রয়েছেন এবং বহিষ্কার কমিটির সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করছেন।

Private University Students Alliance of Bangladesh (PUSAB) এক বিবৃতিতে বলেছে শিক্ষার্থীদের মুখ বন্ধ করতে বহিষ্কার ও সার্টিফিকেট বাতিলের হুমকি বর্বরতা ছাড়া কিছুই নয়। UIU প্রশাসন এখন আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, যেন রাজনৈতিক দমনযন্ত্রে পরিণত হয়েছে।”

এছাড়া বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ এক বিবৃতিতে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে পুলিশি হামলা ও প্রশাসনিক হয়রানির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

শুক্রবার রাতে পর্যন্ত আন্দোলন চলমান ছিল এবং শিক্ষার্থীরা জানায়, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না। আন্দোলন আরও বড় পরিসরে বিস্তৃত হওয়ার আভাসও পাওয়া যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”

শেয়ার করুন

UIU শিক্ষার্থীদের ৫ দফা দাবিতে নতুনবাজার অবরোধ, পুলিশের লাঠিচার্জে আহত বহু শিক্ষার্থী

প্রকাশঃ ০৭:২৮:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (UIU) শিক্ষার্থীদের ৫ দফা দাবিতে আয়োজিত নতুনবাজার অবরোধ কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিচার্জে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়পাড়া। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, পুলিশের হামলায় একাধিক শিক্ষার্থীর মাথা ফেটে যায় এবং অনেকে গুরুতর আহত হন।

তবে আহত অবস্থাতেই অনেক শিক্ষার্থী আন্দোলনে অংশ নিতে ফিরে আসেন এবং দ্রুত ক্যাম্পাস ও আশপাশে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখেন।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনী—যারা জনগণের করের টাকায় পরিচালিত—তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের উপর বর্বর হামলা চালিয়েছে। শিক্ষার্থীদের ভাষায়, “এ যেন আরেক ১৮ জুলাই”— যেদিন ইতিহাসে ছাত্ররা রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অভ্যুত্থান গড়ে তুলেছিল।

২০২৪ সালের ৯ আগস্ট থেকে UIU-তে শুরু হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ‘রিফর্ম আন্দোলন’। এটি শুরু হয় ১৩ দফা দাবির মাধ্যমে, যার মধ্যে গ্রেডিং পদ্ধতির সংস্কার, রিসার্চ সুযোগ, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং ছাত্রসংসদ গঠনের মতো দাবিগুলো প্রাধান্য পায়। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু আশ্বাস দেওয়া হয়, বাস্তবায়নের অভাবে আন্দোলন আরও বিস্তৃত হয়।

বর্তমানে শিক্ষার্থীরা যে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, তা হলো:

১. সব বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার ও ক্ষতিপূরণ প্রদান
২. বহিষ্কারে জড়িত ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরপেক্ষ তদন্ত ও শাস্তি
৩. প্রশাসনিক অনিয়মের বিরুদ্ধে রিফর্ম দাবির বাস্তবায়ন
৪. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য স্বাধীন সংস্কার কমিশন গঠন
৫. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ১৫% কর বাতিল

বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম মিয়ার নিয়োগকে ঘিরেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে অতীতে বুয়েটে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগদানের অভিযোগ ছিল। UIU-তে তাঁর নিয়োগের ক্ষেত্রেও একই রকম অভিযোগ উঠেছে—যার পেছনে রয়েছে শিক্ষা উপমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ ও প্রভাব।

এছাড়া, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নার্গিস জাহানের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। যদিও তাঁকে অপসারণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তিনি এখনো বহাল রয়েছেন এবং বহিষ্কার কমিটির সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করছেন।

Private University Students Alliance of Bangladesh (PUSAB) এক বিবৃতিতে বলেছে শিক্ষার্থীদের মুখ বন্ধ করতে বহিষ্কার ও সার্টিফিকেট বাতিলের হুমকি বর্বরতা ছাড়া কিছুই নয়। UIU প্রশাসন এখন আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, যেন রাজনৈতিক দমনযন্ত্রে পরিণত হয়েছে।”

এছাড়া বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ এক বিবৃতিতে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে পুলিশি হামলা ও প্রশাসনিক হয়রানির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

শুক্রবার রাতে পর্যন্ত আন্দোলন চলমান ছিল এবং শিক্ষার্থীরা জানায়, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না। আন্দোলন আরও বড় পরিসরে বিস্তৃত হওয়ার আভাসও পাওয়া যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”