ঢাকা ০৫:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোবায়েরের মৃত্যু: জীবনের শেষ লড়াইয়ে পাশে ছিল না জরুরি সেবা

আমির ফয়সালম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
  • প্রকাশঃ ০৬:০৮:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫
  • / 27

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জোবায়ের হোসাইন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার মৃত্যুকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একইসঙ্গে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি স্বাস্থ্যসেবার অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার অভিযোগ।

রবিবার (২২ জুন) সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর একদিন আগে, শনিবার (২১ জুন) সন্ধ্যায়, জোবায়ের প্রচণ্ড বুকব্যথা অনুভব করলে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে যান এবং সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের আবেদন করেন। কিন্তু একাধিকবার আবেদন করেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা পাননি তিনি।

মৃত্যুর পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শাকিল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে অভিযোগ করেন, জোবায়ের নিজেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাকে ফোন করে বলেন, “ভাই, আমি ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে চাই। আমার ক্যাম্পাসের অ্যাম্বুলেন্স দরকার।” কিন্তু মেডিকেল অফিসার ও অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনো কার্যকর সাড়া মেলেনি বলে দাবি করেন শাকিল।

শাকিল তার পোস্টে লেখেন, “চার ঘণ্টা ধরে যন্ত্রণায় কাতর জোবায়ের কোনো সহায়তা পায়নি। অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার কেবল আশ্বাসই দিয়েছেন, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” শাকিল মনে করেন, সময়মতো অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছালে হয়তো জোবায়েরকে বাঁচানো যেত।

জোবায়েরের সহপাঠীরা সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুসমিতা বিনতে মন্তব্য করেন, “কত যন্ত্রণায়, কত অবহেলায় চলে গেলো ছেলেটা। জাবির অ্যাম্বুলেন্সে শিক্ষকদের ব্যক্তিগত ট্রিপ চলে, অথচ একজন শিক্ষার্থী মৃত্যুর মুখে থেকেও সহায়তা পায় না। গতকাল অ্যাম্বুলেন্সগুলো কোন ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কাজে ব্যস্ত ছিল, তা খতিয়ে দেখা দরকার।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. শামছুর রহমান বলেন, “জোবায়েরকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। সে প্রায়ই চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতো। গতকাল যখন সে অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছিল, তখন আমাদের একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটি অন্য একজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে গিয়েছিল। অ্যাম্বুলেন্স ফিরলেই তাকে আনার চেষ্টা করা হয়।”

তবে ছাত্রছাত্রীদের দাবি, এমন জরুরি মুহূর্তে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকা এবং সময়মতো পদক্ষেপ না নেওয়াই অনাকাঙ্ক্ষিত এই মৃত্যুর কারণ।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”

শেয়ার করুন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোবায়েরের মৃত্যু: জীবনের শেষ লড়াইয়ে পাশে ছিল না জরুরি সেবা

প্রকাশঃ ০৬:০৮:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জোবায়ের হোসাইন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার মৃত্যুকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একইসঙ্গে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি স্বাস্থ্যসেবার অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার অভিযোগ।

রবিবার (২২ জুন) সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর একদিন আগে, শনিবার (২১ জুন) সন্ধ্যায়, জোবায়ের প্রচণ্ড বুকব্যথা অনুভব করলে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে যান এবং সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের আবেদন করেন। কিন্তু একাধিকবার আবেদন করেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা পাননি তিনি।

মৃত্যুর পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শাকিল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে অভিযোগ করেন, জোবায়ের নিজেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাকে ফোন করে বলেন, “ভাই, আমি ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে চাই। আমার ক্যাম্পাসের অ্যাম্বুলেন্স দরকার।” কিন্তু মেডিকেল অফিসার ও অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনো কার্যকর সাড়া মেলেনি বলে দাবি করেন শাকিল।

শাকিল তার পোস্টে লেখেন, “চার ঘণ্টা ধরে যন্ত্রণায় কাতর জোবায়ের কোনো সহায়তা পায়নি। অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার কেবল আশ্বাসই দিয়েছেন, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” শাকিল মনে করেন, সময়মতো অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছালে হয়তো জোবায়েরকে বাঁচানো যেত।

জোবায়েরের সহপাঠীরা সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুসমিতা বিনতে মন্তব্য করেন, “কত যন্ত্রণায়, কত অবহেলায় চলে গেলো ছেলেটা। জাবির অ্যাম্বুলেন্সে শিক্ষকদের ব্যক্তিগত ট্রিপ চলে, অথচ একজন শিক্ষার্থী মৃত্যুর মুখে থেকেও সহায়তা পায় না। গতকাল অ্যাম্বুলেন্সগুলো কোন ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কাজে ব্যস্ত ছিল, তা খতিয়ে দেখা দরকার।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. শামছুর রহমান বলেন, “জোবায়েরকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। সে প্রায়ই চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতো। গতকাল যখন সে অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছিল, তখন আমাদের একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটি অন্য একজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে গিয়েছিল। অ্যাম্বুলেন্স ফিরলেই তাকে আনার চেষ্টা করা হয়।”

তবে ছাত্রছাত্রীদের দাবি, এমন জরুরি মুহূর্তে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকা এবং সময়মতো পদক্ষেপ না নেওয়াই অনাকাঙ্ক্ষিত এই মৃত্যুর কারণ।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”