ঢাকা ০১:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি জালিয়াতি চক্র, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ধরা খেল তিনজন

ইকবাল মাহমুদ । ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
  • প্রকাশঃ ০৭:৫৬:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫
  • / 6

ছবি: সংগৃহীত

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি জালিয়াতির অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে চূড়ান্ত ভর্তি প্রক্রিয়ার সময় ঘটনাটি ধরা পড়ে। আটকরা হলেন— ময়মনসিংহের ত্রিশালের ওবায়েত হাসান আফিক, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থানার পনির উদ্দিন খান পাভেল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী সালমান ফারদিন সাজিদ সিয়াম।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আফিক ভাইভা বোর্ডে নিজের স্বাক্ষর সঠিকভাবে দিতে না পারা, প্রবেশপত্রের ছবির সাথে চেহারার অমিল এবং বিজ্ঞান বিভাগের সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হওয়ায় শিক্ষকদের সন্দেহ হয়। অভিভাবক পরিচয়ে ডাকা হয় পাভেলকে। কথোপকথনে অসঙ্গতি ধরা পড়লে আফিকের ফোনে পাভেলের সঙ্গে ভর্তির লেনদেন ও স্বাক্ষর সংক্রান্ত নির্দেশনার হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পাওয়া যায়।

পাভেলের আইফোনে পিএসসি, ডাক্তার (বিসিএস), বিভিন্ন নিয়োগ ও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার প্রায় চার-পাঁচশো এডমিট কার্ড ও প্রার্থীর ছবি পাওয়া যায়। তদন্তের একপর্যায়ে ‘সিয়াম’ নামের একজন ফোন করলে অপরপ্রান্ত থেকে শোনা যায়, “ভর্তির কি অবস্থা ভাই?”— যা থেকে সনাক্ত হয় যে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী সালমান ফারদিন সাজিদ সিয়াম।

জিজ্ঞাসাবাদে সিয়াম স্বীকার করেন, তিনি লোক প্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগে ভর্তি হওয়া কৌশিক কুমার চন্দের হয়ে জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দেন। পাভেল তাকে এর বিনিময়ে প্রায় ১ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

তদন্তে আরও জানা যায়, সিয়ামের ফোনে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য ভর্তি হওয়া এক শিক্ষার্থীর ওএমআর শিটের ছবিও পাওয়া গেছে। পাভেল স্বীকার করেন, তিনি ‘বাবু’ নামে এক ব্যক্তির নির্দেশে এসব কাজ করেন এবং ওই ‘বাবুই’ ভর্তি সংক্রান্ত সব কিছু তদারকি করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান জানান, এই চক্রের মাধ্যমে ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আরেকজন ভর্তি হয়েছেন, তাঁর তথ্য যাচাই চলছে। আটক তিনজনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং তদন্তে পাঁচ-ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হবে।

ত্রিশাল থানার ওসি মনসুর আহাম্মদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে এবং মামলায় আসামিদের শুক্রবার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “ঘটনাটি জামালপুরে ঘটলেও আমাদের ক্যাম্পাসেই ধরা পড়েছে। তদন্ত করলে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসবে।”

শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, তদন্তের মাধ্যমে যেন পুরো জালিয়াতি চক্রের তথ্য প্রকাশ্যে আনা হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”

শেয়ার করুন

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি জালিয়াতি চক্র, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ধরা খেল তিনজন

প্রকাশঃ ০৭:৫৬:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি জালিয়াতির অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে চূড়ান্ত ভর্তি প্রক্রিয়ার সময় ঘটনাটি ধরা পড়ে। আটকরা হলেন— ময়মনসিংহের ত্রিশালের ওবায়েত হাসান আফিক, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থানার পনির উদ্দিন খান পাভেল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী সালমান ফারদিন সাজিদ সিয়াম।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আফিক ভাইভা বোর্ডে নিজের স্বাক্ষর সঠিকভাবে দিতে না পারা, প্রবেশপত্রের ছবির সাথে চেহারার অমিল এবং বিজ্ঞান বিভাগের সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হওয়ায় শিক্ষকদের সন্দেহ হয়। অভিভাবক পরিচয়ে ডাকা হয় পাভেলকে। কথোপকথনে অসঙ্গতি ধরা পড়লে আফিকের ফোনে পাভেলের সঙ্গে ভর্তির লেনদেন ও স্বাক্ষর সংক্রান্ত নির্দেশনার হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পাওয়া যায়।

পাভেলের আইফোনে পিএসসি, ডাক্তার (বিসিএস), বিভিন্ন নিয়োগ ও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার প্রায় চার-পাঁচশো এডমিট কার্ড ও প্রার্থীর ছবি পাওয়া যায়। তদন্তের একপর্যায়ে ‘সিয়াম’ নামের একজন ফোন করলে অপরপ্রান্ত থেকে শোনা যায়, “ভর্তির কি অবস্থা ভাই?”— যা থেকে সনাক্ত হয় যে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী সালমান ফারদিন সাজিদ সিয়াম।

জিজ্ঞাসাবাদে সিয়াম স্বীকার করেন, তিনি লোক প্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগে ভর্তি হওয়া কৌশিক কুমার চন্দের হয়ে জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দেন। পাভেল তাকে এর বিনিময়ে প্রায় ১ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

তদন্তে আরও জানা যায়, সিয়ামের ফোনে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য ভর্তি হওয়া এক শিক্ষার্থীর ওএমআর শিটের ছবিও পাওয়া গেছে। পাভেল স্বীকার করেন, তিনি ‘বাবু’ নামে এক ব্যক্তির নির্দেশে এসব কাজ করেন এবং ওই ‘বাবুই’ ভর্তি সংক্রান্ত সব কিছু তদারকি করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান জানান, এই চক্রের মাধ্যমে ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আরেকজন ভর্তি হয়েছেন, তাঁর তথ্য যাচাই চলছে। আটক তিনজনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং তদন্তে পাঁচ-ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হবে।

ত্রিশাল থানার ওসি মনসুর আহাম্মদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে এবং মামলায় আসামিদের শুক্রবার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “ঘটনাটি জামালপুরে ঘটলেও আমাদের ক্যাম্পাসেই ধরা পড়েছে। তদন্ত করলে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসবে।”

শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, তদন্তের মাধ্যমে যেন পুরো জালিয়াতি চক্রের তথ্য প্রকাশ্যে আনা হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”