ঢাকা ০১:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মহানবী (সা.) এঁর জীবন: আল কুরআনের সরল ব্যাখ্যা

গোলাম মোস্তফা
  • প্রকাশঃ ০১:৩৫:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / 45

ছবি: (এআই) / প্রজন্ম কথা


মানবসভ্যতার ইতিহাসে আল কুরআনই হলো পরিপূর্ণ জীবনবিধান। ইহলৌকিক এবং পারলৌকিক মুক্তির প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। তবে এই নির্দেশনাগুলো শুধু তত্ত্বগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়; এগুলোকে বাস্তবে রূপ দিয়ে মানবতার সামনে এক জীবন্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁর জীবন ছিল কুরআনের সরল ও বাস্তব ব্যাখ্যা।

যেহেতু আল কুরআন হলো মানবতার জন্য সর্বশেষ ও পরিপূর্ণ হিদায়াতের গ্রন্থ। এটি শুধু পড়ার জন্য নয়, বরং অন্তরে ধারণ করার জন্য নাজিল হয়েছে। কিন্তু কুরআনের গভীর অর্থ ও যথার্থতা উপলব্ধি করার জন্য ওযু, গোসল ছাড়াও এক বিশেষ শর্ত রয়েছে—অন্তরের পবিত্রতা।

অন্তরে যদি গুনাহ, অহংকার, হিংসা, বিদ্বেষ, দুনিয়ার প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি থাকে, তবে সে অন্তর কুরআনের আসল হিদায়াত গ্রহণ করতে সক্ষম হবে না।

মহান আল্লাহ পাক বলেন- এটি স্পর্শ করে না, শুধুমাত্র যারা পবিত্র। (সূরা আল-ওয়াকিয়া, আয়াত ৭৯)

এখানে “স্পর্শ করা” শব্দটি শুধু বাহ্যিক স্পর্শ নয়; অন্তরের উপলব্ধি ও হৃদয়ে গ্রহণ করার দিকেও ইঙ্গিত করে।
মহান আল্লাহ পাক আরও বলেন – এ কিতাব, এতে কোনো সন্দেহ নেই; মুত্তাকিদের জন্যই হেদায়েত। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২)

কুরআনকে যথার্থভাবে বোঝা এবং ব্যাখ্যা করার জন্য শুধুমাত্র ভাষাজ্ঞানই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন আল্লাহ পাক ও রাসূল পাকের মহব্বতে পরিপূর্ণ পবিত্র অন্তর।

আরবি পণ্ডিতগণ যে কুরআনের অপব্যাখ্যা করেছেন, বিজ্ঞানী মরিস বুকাইলি তার বাইবেল, কোরআন ও বিজ্ঞান গ্রন্থে তা বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ কুরআনের যে ব্যাখ্যা করেছেন, তাতেও ভিন্নতা রয়েছে।

তাই আমরা যদি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনাদর্শ অনুসরণ করতে পারি, সেটিই হবে আমাদের জন্য কুরআনের আলোকে যথার্থ পথচলা।

মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন- তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের জীবনেই রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সূরা আহযাব, আয়াত ২১)

সূরা আন-নাজমের ৩–৪ নাম্বার আয়াতে মহান আল্লাহ পাক বলেন- আমার এ হাবিব নিজ প্রবৃত্তি থেকে একটি কথাও বলেননি, এটিতো কেবল ওহি, যা তার প্রতি নাযিল হয়েছে।

এ আয়াতের প্রেক্ষিতেও বোঝা যায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা বলেছেন এবং যা করেছেন তার কোনোটি কুরআনের বাইরে নয়।

মা আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে হযরত সা’দ ইবনে হিসাম রাদিয়াল্লাহু আনহু জিজ্ঞেস করেছিলেন— রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্র কেমন ছিল? উত্তরে তিনি বলেছিলেন— মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্র ছিল আল কুরআন।

সূরা আলে-ইমরানে মহান আল্লাহ পাক আরও বলেন- হে হাবিব! আপনি বলে দিন, তারা যদি আমার ভালোবাসা পেতে চায় তাহলে আপনার অনুগত হয়ে যাক, তাহলেই আমি তাদেরকে ভালোবাসবো। (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত ৩১)

উপরোক্ত আয়াত ও হাদিসের আলোকে আমরা বুঝতে পারি— মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র ছিল আল কুরআনের প্রতিফলন।

প্রিয় নবীর জীবন ছিল বহুমাত্রিক ও পূর্ণাঙ্গ। শিশুকাল থেকে ইন্তেকাল পর্যন্ত তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল কুরআনের আলোকে আলোকিত। ধৈর্য, দয়া, সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও উদারতা— এসব গুণাবলি তিনি শুধু মুখে প্রচার করেননি, বরং নিজ জীবনে রূপ দিয়ে দেখিয়েছেন। শত্রুর প্রতি ক্ষমা, দরিদ্রের প্রতি ভালোবাসা, এবং মজলুমের প্রতি সহমর্মিতা ছিল তাঁর চরিত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কুরআন যেমন ন্যায়বিচারের আদেশ দেয়, তেমনি নবীজিও তা বাস্তবায়ন করেছেন— এমনকি নিজের আত্মীয়স্বজনের ক্ষেত্রেও কোনো পক্ষপাত করেননি।

পারিবারিক জীবনে তিনি ছিলেন আদর্শ স্বামী ও দায়িত্বশীল পিতা। সামাজিক জীবনে তিনি ছিলেন সকলের আস্থার কেন্দ্রবিন্দু। নেতৃত্বের মঞ্চে তিনি ছিলেন ন্যায়নিষ্ঠ শাসক ও দূরদর্শী কৌশলী। এমন সর্বাঙ্গীন ব্যক্তিত্ব ইতিহাসে বিরল, আর তাই তিনি মানবতার জন্য চিরকালীন রোল মডেল।

আজকের বিশ্বে নৈতিক অবক্ষয়, হিংসা, বৈষম্য ও অন্যায়ের মূলে রয়েছে কুরআন ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ থেকে বিচ্যুতি। মানুষ যদি আবারও তাঁর জীবনকে মডেল হিসেবে গ্রহণ করে, তবে ব্যক্তিগত জীবনে শান্তি, সামাজিক জীবনে ন্যায় এবং বিশ্বসমাজে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন চলমান কুরআন— তাঁর প্রতিটি বাক্য, প্রতিটি আচরণ, প্রতিটি সিদ্ধান্তে কুরআনের আলো প্রতিফলিত হয়েছে। তাই আল কুরআনের সরল ব্যাখ্যা জানতে চাইলে আমাদের নবীজির জীবন অধ্যয়ন ও অনুকরণ ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। প্রকৃত মুক্তি ও কল্যাণ নিহিত রয়েছে তাঁর জীবনধারায়।

 -গোলাম মোস্তফা ফিচার্স রাইটার ও কলামিস্ট

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”

শেয়ার করুন

মহানবী (সা.) এঁর জীবন: আল কুরআনের সরল ব্যাখ্যা

প্রকাশঃ ০১:৩৫:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ছবি: (এআই) / প্রজন্ম কথা


মানবসভ্যতার ইতিহাসে আল কুরআনই হলো পরিপূর্ণ জীবনবিধান। ইহলৌকিক এবং পারলৌকিক মুক্তির প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। তবে এই নির্দেশনাগুলো শুধু তত্ত্বগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়; এগুলোকে বাস্তবে রূপ দিয়ে মানবতার সামনে এক জীবন্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁর জীবন ছিল কুরআনের সরল ও বাস্তব ব্যাখ্যা।

যেহেতু আল কুরআন হলো মানবতার জন্য সর্বশেষ ও পরিপূর্ণ হিদায়াতের গ্রন্থ। এটি শুধু পড়ার জন্য নয়, বরং অন্তরে ধারণ করার জন্য নাজিল হয়েছে। কিন্তু কুরআনের গভীর অর্থ ও যথার্থতা উপলব্ধি করার জন্য ওযু, গোসল ছাড়াও এক বিশেষ শর্ত রয়েছে—অন্তরের পবিত্রতা।

অন্তরে যদি গুনাহ, অহংকার, হিংসা, বিদ্বেষ, দুনিয়ার প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি থাকে, তবে সে অন্তর কুরআনের আসল হিদায়াত গ্রহণ করতে সক্ষম হবে না।

মহান আল্লাহ পাক বলেন- এটি স্পর্শ করে না, শুধুমাত্র যারা পবিত্র। (সূরা আল-ওয়াকিয়া, আয়াত ৭৯)

এখানে “স্পর্শ করা” শব্দটি শুধু বাহ্যিক স্পর্শ নয়; অন্তরের উপলব্ধি ও হৃদয়ে গ্রহণ করার দিকেও ইঙ্গিত করে।
মহান আল্লাহ পাক আরও বলেন – এ কিতাব, এতে কোনো সন্দেহ নেই; মুত্তাকিদের জন্যই হেদায়েত। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২)

কুরআনকে যথার্থভাবে বোঝা এবং ব্যাখ্যা করার জন্য শুধুমাত্র ভাষাজ্ঞানই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন আল্লাহ পাক ও রাসূল পাকের মহব্বতে পরিপূর্ণ পবিত্র অন্তর।

আরবি পণ্ডিতগণ যে কুরআনের অপব্যাখ্যা করেছেন, বিজ্ঞানী মরিস বুকাইলি তার বাইবেল, কোরআন ও বিজ্ঞান গ্রন্থে তা বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ কুরআনের যে ব্যাখ্যা করেছেন, তাতেও ভিন্নতা রয়েছে।

তাই আমরা যদি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনাদর্শ অনুসরণ করতে পারি, সেটিই হবে আমাদের জন্য কুরআনের আলোকে যথার্থ পথচলা।

মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন- তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের জীবনেই রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সূরা আহযাব, আয়াত ২১)

সূরা আন-নাজমের ৩–৪ নাম্বার আয়াতে মহান আল্লাহ পাক বলেন- আমার এ হাবিব নিজ প্রবৃত্তি থেকে একটি কথাও বলেননি, এটিতো কেবল ওহি, যা তার প্রতি নাযিল হয়েছে।

এ আয়াতের প্রেক্ষিতেও বোঝা যায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা বলেছেন এবং যা করেছেন তার কোনোটি কুরআনের বাইরে নয়।

মা আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে হযরত সা’দ ইবনে হিসাম রাদিয়াল্লাহু আনহু জিজ্ঞেস করেছিলেন— রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্র কেমন ছিল? উত্তরে তিনি বলেছিলেন— মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্র ছিল আল কুরআন।

সূরা আলে-ইমরানে মহান আল্লাহ পাক আরও বলেন- হে হাবিব! আপনি বলে দিন, তারা যদি আমার ভালোবাসা পেতে চায় তাহলে আপনার অনুগত হয়ে যাক, তাহলেই আমি তাদেরকে ভালোবাসবো। (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত ৩১)

উপরোক্ত আয়াত ও হাদিসের আলোকে আমরা বুঝতে পারি— মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র ছিল আল কুরআনের প্রতিফলন।

প্রিয় নবীর জীবন ছিল বহুমাত্রিক ও পূর্ণাঙ্গ। শিশুকাল থেকে ইন্তেকাল পর্যন্ত তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল কুরআনের আলোকে আলোকিত। ধৈর্য, দয়া, সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও উদারতা— এসব গুণাবলি তিনি শুধু মুখে প্রচার করেননি, বরং নিজ জীবনে রূপ দিয়ে দেখিয়েছেন। শত্রুর প্রতি ক্ষমা, দরিদ্রের প্রতি ভালোবাসা, এবং মজলুমের প্রতি সহমর্মিতা ছিল তাঁর চরিত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কুরআন যেমন ন্যায়বিচারের আদেশ দেয়, তেমনি নবীজিও তা বাস্তবায়ন করেছেন— এমনকি নিজের আত্মীয়স্বজনের ক্ষেত্রেও কোনো পক্ষপাত করেননি।

পারিবারিক জীবনে তিনি ছিলেন আদর্শ স্বামী ও দায়িত্বশীল পিতা। সামাজিক জীবনে তিনি ছিলেন সকলের আস্থার কেন্দ্রবিন্দু। নেতৃত্বের মঞ্চে তিনি ছিলেন ন্যায়নিষ্ঠ শাসক ও দূরদর্শী কৌশলী। এমন সর্বাঙ্গীন ব্যক্তিত্ব ইতিহাসে বিরল, আর তাই তিনি মানবতার জন্য চিরকালীন রোল মডেল।

আজকের বিশ্বে নৈতিক অবক্ষয়, হিংসা, বৈষম্য ও অন্যায়ের মূলে রয়েছে কুরআন ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ থেকে বিচ্যুতি। মানুষ যদি আবারও তাঁর জীবনকে মডেল হিসেবে গ্রহণ করে, তবে ব্যক্তিগত জীবনে শান্তি, সামাজিক জীবনে ন্যায় এবং বিশ্বসমাজে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন চলমান কুরআন— তাঁর প্রতিটি বাক্য, প্রতিটি আচরণ, প্রতিটি সিদ্ধান্তে কুরআনের আলো প্রতিফলিত হয়েছে। তাই আল কুরআনের সরল ব্যাখ্যা জানতে চাইলে আমাদের নবীজির জীবন অধ্যয়ন ও অনুকরণ ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। প্রকৃত মুক্তি ও কল্যাণ নিহিত রয়েছে তাঁর জীবনধারায়।

 -গোলাম মোস্তফা ফিচার্স রাইটার ও কলামিস্ট

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”