ঢাকা ০১:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অর্থনীতির অদৃশ্য অন্ধ বিন্দু

শাহ মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন
  • প্রকাশঃ ১০:৩৪:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫
  • / 46

ছবি: এআই / প্রজন্ম কথা


বিশ্ব অর্থনীতি আজ যে অচলাবস্থার মুখে দাঁড়িয়ে, তার মূল চালিকা শক্তিকে অনেক নীতিনির্ধারকই এখনো উপেক্ষা করছেন। পৃথিবীর প্রায় ৩,০০০ বিলিয়নেয়ারের হাতে জমে আছে প্রায় ১৬ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ। অথচ বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রাণশক্তি আসছে ৪ বিলিয়ন সাধারণ ভোক্তার ব্যয় থেকে। পারিবারিক ভোগব্যয় থেকেই আসে বৈশ্বিক জিডিপির ৬০ শতাংশের বেশি।

অর্থনীতির মৌলিক নিয়মটি সহজ—যত বেশি মানুষের আয় বাড়ে, তত বেশি খরচ হয়। খরচ বাড়লে ব্যবসার প্রবৃদ্ধি ঘটে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, মুনাফা বাড়ে। এমনকি শীর্ষ ধনী শ্রেণির সম্পদও সেই প্রবাহে বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ পুরো ব্যবস্থায় সবাই লাভবান হয়।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, বৈশ্বিক নীতিমালা চলছে একেবারেই বিপরীত পথে। একদিকে মজুরি দমন, অন্যদিকে কৃচ্ছ্রসাধনমূলক ব্যয়ছাঁটাই; এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ধনীদের জন্য করছাড়। ফলাফল হিসেবে দেখা দিচ্ছে দ্রুত বাড়তে থাকা বৈষম্য, সঙ্কুচিত মধ্যবিত্ত, এবং এমন এক ভঙ্গুর অর্থনীতি যা ভোক্তাদের সামান্য চাহিদা কমলেই ধসে পড়ার ঝুঁকিতে থাকে।

ভাবুন, যদি একসাথে বিশ্বজুড়ে ভোক্তারা তাদের ব্যয় অর্ধেকে নামিয়ে আনে, তবে বৈশ্বিক জিডিপি প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যাবে। একই সঙ্গে বিলিয়নেয়ারদের সম্পদ থেকে উড়ে যাবে ৫–১০ ট্রিলিয়ন ডলার। ক্ষতি হবে সবার—প্রথম ধাক্কা লাগবে নিম্নবিত্ত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপর, ধীরে ধীরে সেই অভিঘাত পৌঁছাবে ধনীদের কাছেও।

নীতিনির্ধারকেরা এত স্পষ্ট সত্যও উপেক্ষা করেন মূলত তিন কারণে—

  • মতাদর্শের জড়তা: পুরোনো অর্থনৈতিক মতবাদ আঁকড়ে ধরা।

  • ক্ষমতার প্রভাব: অভিজাত শ্রেণির লবিং ও রাজনৈতিক দখল।

  • স্বল্পদৃষ্টিসম্পন্নতা: দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধির চেয়ে স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনৈতিক উত্থান কিংবা এশিয়ার মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান—প্রতিটি উদাহরণ প্রমাণ করে সাধারণ মানুষের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বাড়লেই আসে টেকসই সমৃদ্ধি।

সত্যিটা খুবই সহজ- যখন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ভালো থাকে, তখন সবার জন্য সমৃদ্ধি আসে। আর যখন সংখ্যাগরিষ্ঠকে চেপে ধরা হয়, তখন পুরো ব্যবস্থাই ভেঙে পড়ে—বিলিয়নেয়ারসহ।

এটা কোনো উগ্র মতবাদ নয়, কোনো কল্পলোকও নয়— এটাই অর্থনীতির সাধারণ জ্ঞান।

– ফটো সাংবাদিক: শাহ মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”

শেয়ার করুন

অর্থনীতির অদৃশ্য অন্ধ বিন্দু

প্রকাশঃ ১০:৩৪:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫

ছবি: এআই / প্রজন্ম কথা


বিশ্ব অর্থনীতি আজ যে অচলাবস্থার মুখে দাঁড়িয়ে, তার মূল চালিকা শক্তিকে অনেক নীতিনির্ধারকই এখনো উপেক্ষা করছেন। পৃথিবীর প্রায় ৩,০০০ বিলিয়নেয়ারের হাতে জমে আছে প্রায় ১৬ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ। অথচ বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রাণশক্তি আসছে ৪ বিলিয়ন সাধারণ ভোক্তার ব্যয় থেকে। পারিবারিক ভোগব্যয় থেকেই আসে বৈশ্বিক জিডিপির ৬০ শতাংশের বেশি।

অর্থনীতির মৌলিক নিয়মটি সহজ—যত বেশি মানুষের আয় বাড়ে, তত বেশি খরচ হয়। খরচ বাড়লে ব্যবসার প্রবৃদ্ধি ঘটে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, মুনাফা বাড়ে। এমনকি শীর্ষ ধনী শ্রেণির সম্পদও সেই প্রবাহে বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ পুরো ব্যবস্থায় সবাই লাভবান হয়।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, বৈশ্বিক নীতিমালা চলছে একেবারেই বিপরীত পথে। একদিকে মজুরি দমন, অন্যদিকে কৃচ্ছ্রসাধনমূলক ব্যয়ছাঁটাই; এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ধনীদের জন্য করছাড়। ফলাফল হিসেবে দেখা দিচ্ছে দ্রুত বাড়তে থাকা বৈষম্য, সঙ্কুচিত মধ্যবিত্ত, এবং এমন এক ভঙ্গুর অর্থনীতি যা ভোক্তাদের সামান্য চাহিদা কমলেই ধসে পড়ার ঝুঁকিতে থাকে।

ভাবুন, যদি একসাথে বিশ্বজুড়ে ভোক্তারা তাদের ব্যয় অর্ধেকে নামিয়ে আনে, তবে বৈশ্বিক জিডিপি প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যাবে। একই সঙ্গে বিলিয়নেয়ারদের সম্পদ থেকে উড়ে যাবে ৫–১০ ট্রিলিয়ন ডলার। ক্ষতি হবে সবার—প্রথম ধাক্কা লাগবে নিম্নবিত্ত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপর, ধীরে ধীরে সেই অভিঘাত পৌঁছাবে ধনীদের কাছেও।

নীতিনির্ধারকেরা এত স্পষ্ট সত্যও উপেক্ষা করেন মূলত তিন কারণে—

  • মতাদর্শের জড়তা: পুরোনো অর্থনৈতিক মতবাদ আঁকড়ে ধরা।

  • ক্ষমতার প্রভাব: অভিজাত শ্রেণির লবিং ও রাজনৈতিক দখল।

  • স্বল্পদৃষ্টিসম্পন্নতা: দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধির চেয়ে স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনৈতিক উত্থান কিংবা এশিয়ার মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান—প্রতিটি উদাহরণ প্রমাণ করে সাধারণ মানুষের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বাড়লেই আসে টেকসই সমৃদ্ধি।

সত্যিটা খুবই সহজ- যখন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ভালো থাকে, তখন সবার জন্য সমৃদ্ধি আসে। আর যখন সংখ্যাগরিষ্ঠকে চেপে ধরা হয়, তখন পুরো ব্যবস্থাই ভেঙে পড়ে—বিলিয়নেয়ারসহ।

এটা কোনো উগ্র মতবাদ নয়, কোনো কল্পলোকও নয়— এটাই অর্থনীতির সাধারণ জ্ঞান।

– ফটো সাংবাদিক: শাহ মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”