উত্তরায় সেনা সদস্যদের হাতে তিন ‘জুলাই যোদ্ধার’ নির্যাতনের অভিযোগ

- প্রকাশঃ ১০:৫৭:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫
- / 15
আহত ভুক্তভোগীরা | ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর উত্তরায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাতে ‘জুলাই বিপ্লব’-সংযুক্ত তিন ব্যক্তির ওপর অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্রের দাবি, গত ৪ অক্টোবর রাত আড়াইটার দিকে উত্তরা হাজীক্যাম্প আর্মি ক্যাম্পের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর টানা চব্বিশ ঘণ্টা ধরে তাদের নির্যাতন করেন।
অভিযোগ রয়েছে, রেড চিকেন রেস্টুরেন্টে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার সূত্র ধরে আকাশ নামে একজনকে লক্ষ্য করে অভিযান চালানো হলেও, ওই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট নয় এমন কয়েকজনকেও গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করা হয়।
সূত্র জানায়, ৪ অক্টোবর রাত সাড়ে ১টার দিকে প্রায় ১৮টি গাড়িবহর নিয়ে সেনা সদস্যরা উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের একটি বাসায় অভিযান চালায়। আকাশের বন্ধু ফরিদ, নিরাপত্তাকর্মী দারোয়ান, ও স্থানীয় ব্যবসায়ী রবিনকে ওই সময় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, ফরিদকে রুম থেকে টেনে বের করে মারধর করা হয়। এরপর চোখ বেঁধে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। ফরিদের শরীরে হাত-পা ও পিঠে আঘাতের চিহ্ন এখনো রয়েছে বলে জানান স্বজনরা। নির্যাতনের সময় ফরিদ তার ‘জুলাই যোদ্ধা কার্ড’ দেখালে এক সেনা সদস্য তাকে উদ্দেশ করে বলেন, “তোরা দেশটাকে শেষ করছোস।” এরপর নির্যাতনের তীব্রতা আরও বাড়ানো হয়।
ভুক্তভোগীরা জানান, রাতে তাদের শুধু খিচুড়ি দেওয়া হয়, সেটিও ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে খেয়ে নিতে বলা হয়। এরপর বোতলের মুখ দিয়ে পানি খেতে দেওয়া হয়। সারারাত জিজ্ঞাসাবাদের নামে চলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
অন্যদিকে, ভবনের দারোয়ানকেও হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয় বলে অভিযোগ। এখনো তার শরীরে ক্ষতের দাগ দেখা যাচ্ছে।
আরেক ভুক্তভোগী রবিন, যিনি ফুটপাতে ব্যবসা করতেন, জানান—সেনা সদস্যরা তার বাসায় ঢুকে আকাশের ছবি দেখিয়ে চেনেন কিনা জানতে চান। তিনি ‘না’ বললে শুরু হয় মারধর। ঘুষি, লাঠির আঘাতের পর দেয়ালে ছুড়ে মারা হয় তাকে। পরে গাড়িতে তুলে চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়। সারারাত দাঁড় করিয়ে রাখা হয়, বসলে বা কথা বললে নতুন করে পেটানো হয়। বর্তমানে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন, পরিবারও লজ্জা ও ভয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ফরিদের কাছ থেকে নেওয়া ৪ হাজার টাকার মধ্যে ৭০০ টাকা ফেরত দেওয়া হয়, বাকিটা রাখা হয়। রবিনের কাছ থেকে নেওয়া এক হাজার টাকাও ফেরত দেওয়া হয়নি।
তিনজনের কারোর বিরুদ্ধেই কোনো আনুষ্ঠানিক মামলা ছিল না। তারা শুধু আকাশের পরিচিত হওয়ায় টার্গেট হয়েছেন বলে অভিযোগ। আকাশ নিজেও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আছেন, তার পেটে লাইভ বুলেট ঢুকে সেলাই দেওয়ার পরও নাকি নির্যাতন অব্যাহত থাকে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ পরিষদের (BHRO) এক মুখপাত্র বলেন, আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে কাউকে নির্যাতন করা স্পষ্টভাবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
তিনি আরও জানান, সংস্থাটি ভুক্তভোগীদের চিকিৎসা ও আইনি সহায়তা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এই বিষয়ে সেনাবাহিনীর কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে আর্মি ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।