খুলনার বটিয়াঘাটায় জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেন নির্মাণের দাবিতে সরব স্থানীয়রা

- প্রকাশঃ ০৮:২৫:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫
- / 17
পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়ছে, দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ চায় এলাকাবাসী | ছবি: প্রজন্ম কথা
সাত-আট বছর ধরে এই এলাকায় বাস করছি। একটু বৃষ্টিতেই রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যায়। দূষিত পানি বের হওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। শুধু একটা প্রশস্ত ড্রেন থাকলেই এই দুর্ভোগ অনেকটাই কমে যেত, বলছিলেন খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউনিয়নের উত্তর হরিণটানা এলাকার বাসিন্দা মো. লিমন খান।
খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকার পার্শ্ববর্তী ঘনবসতিপূর্ণ উত্তর হরিণটানায় প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষের বসবাস। দীর্ঘদিন ধরে এলাকাটির প্রধান সড়কগুলোতে নেই কোনো কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা। বিশেষ করে সরকারি কেএএএম ফজলুল বারী প্রাইমারি স্কুল রোডে সুগঠিত পাকা ড্রেন না থাকায় বৃষ্টির পানি ও ব্যবহৃত নোংরা পানি নিষ্কাশনে চরম বিঘ্ন ঘটছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, কয়েক মিনিটের বৃষ্টিতেই অধিকাংশ রাস্তা হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়। কখনও পানি সরতে লাগে কয়েক ঘণ্টা, আবার কখনও কয়েক দিনও। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন পথচারী, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা।
ড্রেন নির্মাণের দাবিতে চলতি বছরের শুরুতে এলাকাবাসীর পক্ষে উপজেলা পরিষদে আনুষ্ঠানিক আবেদন করা হয়। এর প্রেক্ষিতে বটিয়াঘাটা উপজেলা পরিষদের মে মাসের ৩৫৫তম মাসিক সমন্বয় সভায় ‘উপজেলা শহর (নন-মিউনিসিপ্যাল) মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ও মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (UTMIDP)’-এর আওতায় ফজলুল বারী প্রাইমারি স্কুল রোড থেকে পূর্বপাড়া খাল পর্যন্ত (আজাদ মেম্বারের বাড়ির পাশ দিয়ে) প্রায় ১৪৪/২৮৪ মিটার দীর্ঘ আরসিসি ড্রেন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় (স্মারক নং ০৫.০০.৪৭১২.০০০.০১.০০২.২৪-৩৯৯)।
এর ধারাবাহিকতায়, গত ৩ জুন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বটিয়াঘাটা উপজেলা প্রকৌশলী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীর স্বাক্ষরিত নকশাসহ কারিগরি প্রতিবেদন খুলনা জেলা এলজিইডি দপ্তরে পাঠানো হয়। পরে সেটি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের আওতায় ২২ লাখ ৭৯ হাজার ৫০৫ টাকার (প্রাক্কলিত) প্রস্তাবিত স্কিম আকারে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এলজিইডির সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকের দপ্তরে পাঠানো হয় (স্মারক নং ৪৬.০২.৪৭০০.০০০.১৪.০৫৮.২৪-২২৮৬)। তবে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পটির অনুমোদন এখনো মেলেনি।
এলাকাবাসী বলছেন, আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু না হলে আবারও একই দুর্ভোগের মুখে পড়বেন তারা। জলাবদ্ধতার সঙ্গে ছড়াবে পানিবাহিত রোগও।
সরকারি কেএএএম ফজলুল বারী প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম রেজা বলেন, “স্কুলের সামনে প্রতিনিয়ত জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। দ্রুত ড্রেন নির্মাণ ছাড়া এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।”
উত্তর হরিণটানার ব্যাংকার রফিকুল ইসলাম বলেন, এমদাদুল উলুম মাদ্রাসা ও ফজলুল বারী স্কুল সড়কটি পুরো এলাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ড্রেন না থাকায় পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে, ফলে রোগব্যাধিও বাড়ছে। অবিলম্বে আরসিসি ড্রেন নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা মো. নাঈম বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দ্রুত হস্তক্ষেপ দরকার। পাশাপাশি ফজলুল বারী স্কুল সড়কটি পাকাকরণের ব্যবস্থাও নিতে হবে।
এলাকার ব্যবসায়ী আবু বকর বলেন, ফজলুল বারী স্কুল রোডই উত্তর হরিণটানার প্রধান প্রবেশপথ। এখানে ড্রেন না থাকায় মানুষের কষ্টের সীমা নেই। জলাবদ্ধতা দূর করতে এখনই উদ্যোগ না নিলে আগামী বর্ষায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
এ বিষয়ে খুলনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম সরদার বলেন, স্থানীয়দের আবেদনের ভিত্তিতে আরসিসি ড্রেন নির্মাণের জন্য আমরা একটি খসড়া প্রকল্প ও নকশা তৈরি করেছি। সেটি অনুমোদনের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন ও প্রাক্কলিত অর্থ বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করা হবে।