বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ত্রিমুখী সংঘর্ষে আহত ১১ — মার্কেটিং বিভাগের ৮ শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার

- প্রকাশঃ ০৩:২৩:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
- / 17
সংঘর্ষের পর রাতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে তিনটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১১ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। সোমবার (১৩ অক্টোবর) রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক এলাকায় মার্কেটিং, পদার্থবিজ্ঞান ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি শেষ হওয়া ‘জেন-জি আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট’-এর এক ম্যাচে মার্কেটিং ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার জের ধরে সোমবার বিকেলে পরিসংখ্যান বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী চকবাজার এলাকায় মার্কেটিং বিভাগের ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই মারধরের খবর ছড়িয়ে পড়লে উভয় বিভাগের শিক্ষার্থীরা শহীদ আবু সাঈদ চত্বরে জড়ো হন। একপর্যায়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। এতে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী প্রান্ত ঘোষ মাথায় গুরুতর আঘাত পান এবং তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সাজানো ফটকের ভেতরে থাকা ছবির ফ্রেমও ভাঙচুর করা হয়।
সংঘর্ষের এক পর্যায়ে স্বাধীনতা স্মারক মাঠে অবস্থানরত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইউসুফ আলী পালানোর চেষ্টা করলে মার্কেটিং বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী তাঁকে পিটিয়ে আহত করেন। পরে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরাও সংঘর্ষে যুক্ত হয়ে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন। একপর্যায়ে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রাণভয়ে একাডেমিক ভবন–৩-এ আশ্রয় নেন।
পরিসংখ্যান ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী যৌথভাবে ভবনটি ঘেরাও করে বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরবর্তীতে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ভবনের নিচতলার সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শ্রেণিকক্ষগুলো ভাঙচুর করেন। এ সময় মার্কেটিং বিভাগের ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নিলয় চোখে গুরুতর আঘাত পান।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. ফেরদৌস রহমান, রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন-অর-রশিদ, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াছ প্রামানিকসহ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তবে শিক্ষার্থীরা তাঁদের আহ্বানে সাড়া না দিলে উত্তেজনা আরও বাড়ে।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন, তবে পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাতেই শৃঙ্খলা কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকে। বৈঠক শেষে উপাচার্য অধ্যাপক শওকাত আলী সাংবাদিকদের জানান, সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে মার্কেটিং বিভাগের আটজন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন—
সাফায়েত শুভ, শাহরিয়ার অপু, সজিব, সৌরভ, নাজমুজ সাকিব, রোহান সরকার রোহান, জিহাদ ও আশরাফুল — সকলেই মার্কেটিং বিভাগের ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী।
উপাচার্য বলেন, বহিষ্কারের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আমরা সংশ্লিষ্ট ভিডিও ফুটেজ ও তথ্য যাচাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।