বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে মাভাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা

- প্রকাশঃ ১২:৩৯:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
- / 12
২২ বছরে মাভাবিপ্রবি | ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের ১২ তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় টাঙ্গাইল শহরের অদূরে মজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর স্মৃতিবিজড়িত সন্তোষে গড়ে উঠে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রসারের লক্ষ্যে ২০০৩ সালের ১৬ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে ৭টি অনুষদের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯টি বিভাগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নানারকম প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এখন দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি। গৌরব ও সাফল্যের ২২ বছরে ক্যাম্পাসের অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রসারে বিশ্ববিদ্যালয়টি এক অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করে আসছে।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস নিয়ে শিক্ষার্থীরা কি ভাবছেন, তাদের ভাবনা ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছেন বিজয় সরকার।
সম্ভাবনাময় মাওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে উচ্চ শিক্ষার জন্য তরুণদের অন্যতম আগ্রহের জায়গায় পরিণত হয়েছে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। যার ফলস্বরূপ দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা চাকরির পরীক্ষা, গবেষণা, বিসিএস, ব্যাংকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের সঙ্গে অবদান রেখে চলেছেন।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবস্থান সুদৃঢ় করায় বিশ্ববিদ্যালয়টি আজ সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এটি এমন একটি পরিবার, যেখানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একসঙ্গে আনন্দ-অনুষ্ঠানে মেতে ওঠেন পারিবারিক বন্ধনের উষ্ণতায়।
প্রিয় এই বিদ্যাপীঠটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে গৌরবময় এক যাত্রা শুরু করে বর্তমানে একুশে বছরের পথ পেরিয়ে আরও সম্ভাবনার দিগন্তে এগিয়ে চলছে। অল্প সময়ের এই যাত্রায় মাভাবিপ্রবির মেধাবী শিক্ষার্থীরা দেশের প্রশাসনিক, প্রযুক্তিগত, ব্যাংকিং ও গবেষণা খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।
এছাড়া সাংস্কৃতিক, সাংগঠনিক ও শিক্ষামূলক কার্যক্রমেও মাভাবিপ্রবি সবসময় এগিয়ে রয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এই সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও উজ্জ্বলভাবে পরিচিত হবে-একটি সম্ভাবনাময়, গৌরবময় ও স্বপ্নবাহী প্রতিষ্ঠান হিসেবে। (আশরাফুল ইসলাম অভি, পরিসংখ্যান বিভাগ)
আমি একজন গর্বিত মাভাবিপ্রবিয়ান- মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আমার কাছে শুধুই একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়-এটা আমার ভালোবাসা, আমার আবেগ, আমার প্রাণের স্পন্দন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হতে পেরে আমি নিজেকে গর্বিত মনে করি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নটা জেগেছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় থেকেই। কোনো এক শীতের সকালে ঝরাপাতার মতো নীরবে আমার আগমন ঘটেছিল এই প্রাঙ্গণে। মনে হয়েছিল, মাভাবিপ্রবি যেন আমাকে বরণ করে নিয়েছে পরম মমতায়। টাঙ্গাইল শহরের কাছাকাছি শান্ত, স্নিগ্ধ এই ক্যাম্পাস আমাকে দিয়েছে প্রাণের পরশ ও নির্ভরতার আশ্বাস।
আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে-আমি একজন গর্বিত মাভাবিপ্রবিয়ান। শিক্ষা জীবনের সবচেয়ে সোনালি সময় পার করছি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অমলিন ছায়ায়। ক্রমবর্ধমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাচ্ছে দৃপ্ত পদক্ষেপে।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস তাই প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে শুধু আনন্দের নয়, গৌরবেরও দিন।
শুভ জন্মদিন প্রিয় প্রতিষ্ঠান। শুভ হোক তোমার প্রতিটি আগামী। তোমার ছায়াতলে লালিত প্রতিটি শিক্ষার্থীর স্বপ্ন যেন আলো ছড়ায় সারা বিশ্বে।
এগিয়ে যাক প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়- বেঁচে থাকুক মাভাবিপ্রবির আকাশে ঝলমল করতে থাকা প্রতিটি গর্বিত মাভাবিপ্রবিয়ান। (সমাপ্তী খান, এফটিএনএস বিভাগ)
গবেষণায় আরও সুযোগ চাই গবেষণার ক্ষেত্রে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও সুযোগ সৃষ্টি হওয়া প্রয়োজন। গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা এবং অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব এখনো একটি বড় সীমাবদ্ধতা। আমি আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গবেষণা খাতে বিনিয়োগ বাড়াবে এবং শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহিত করবে।
একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকল্পে অংশগ্রহণের সুযোগও বাড়ানো দরকার, যাতে শিক্ষার্থীরা বৈশ্বিক পরিসরে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা তুলে ধরতে পারেন।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার পর চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষার্থী নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়। তাই, আমি আশা করি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সাপোর্ট-এর ওপর আরও গুরুত্ব দেবে। নিয়মিত ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং, ইন্টার্নশিপের সুযোগ এবং বিভিন্ন কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনের জন্য প্রস্তুত করা যেতে পারে।
সবশেষে, বিশ্ববিদ্যালয় হোক আরও শিক্ষার্থীবান্ধব, এবং প্রযুক্তিগত দিক থেকে আরও উন্নত-এটাই আমাদের প্রত্যাশা। চৈতী বাড়ৈ,আইসিটি বিভাগ
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস : স্মৃতির, গৌরবের ও আত্মচেতনার প্রতীক
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-শুধু একটি তারিখ নয়, এটি স্মৃতির, গৌরবের এবং আত্মচেতনার প্রতীক। এই দিনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ যেন নবজীবন পায়; সাজসজ্জা, শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক উৎসবে মুখরিত হয়ে ওঠে সমগ্র ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, প্রাক্তন- সকলের হৃদয়ে জাগে একই আবেগ, একই গর্ব।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস কেবল আনন্দের দিন নয়; এটি আত্মসমালোচনারও সময়। প্রশ্ন জাগে-আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কি জ্ঞান, গবেষণা ও নৈতিকতার আলোকবর্তিকা হয়ে উঠছে? নাকি আমরা উৎসবের উচ্ছ্বাসে আসল উদ্দেশ্য ভুলে যাচ্ছি?
এই দিনটি মনে করিয়ে দেয়, বিশ্ববিদ্যালয় কেবল ডিগ্রির কেন্দ্র নয়; এটি জাতির চিন্তার ভরকেন্দ্র। এখানেই গড়ে ওঠে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব, এখানেই জন্ম নেয় আলোর যাত্রা।
তবুও বলা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আনন্দে কিছু অপূর্ণতা রয়ে গেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও আগাম প্রস্তুতি ও অংশগ্রহণ থাকলে দিনটি হতে পারত আরও বর্ণিল, আরও অর্থবহ। তবু শেষ পর্যন্ত দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে-এই আনন্দই বড় প্রাপ্তি।
তাই বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের উদযাপন হোক শুধু রঙে নয়, ভাবনায়ও সমৃদ্ধ-যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থী নতুন প্রতিশ্রুতিতে উচ্চারণ করতে পারে, “আমিই পরিবর্তনের অংশ।” নাবী হোসেন,পরিসংখ্যান বিভাগ
ভাসানীর আদর্শের বিশ্ববিদ্যালয় হোক
“মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় এক মহান মানুষকে-
যিনি সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন মানুষের মুক্তি, শিক্ষার প্রসার ও সত্যের প্রতিষ্ঠার জন্য।
তাঁর নামের এই বিশ্ববিদ্যালয় আজ হয়ে উঠেছে তরুণদের উদ্ভাবন ও অগ্রগতির প্রতীক।
বিজ্ঞানচর্চা, গবেষণা আর মানবিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ এই যাত্রা হোক আরও দীপ্ত, আরও অগ্রসর।
শুভ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-ভাসানীর চেতনা চির অম্লান থাকুক আমাদের হৃদয়ে।” (নাজমুস সাকিব সাফিয়ান,রসায়ন বিভাগ)
উন্নয়নের প্রত্যাশায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়
নিজের বিশ্ববিদ্যালয় বা ক্যাম্পাস সবার কাছেই ভালো লাগার ও আবেগের জায়গা। তবে দিনদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স বাড়লেও শিক্ষার পরিবেশ, আবাসন সুবিধা, শিক্ষক সংকট, ল্যাব ও লাইব্রেরিসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা এখনো আশানুরূপভাবে প্রসারিত হয়নি।
একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিটি বিভাগে মানসম্মত ল্যাব থাকা অত্যন্ত জরুরি, কিন্তু বাস্তবে সব বিভাগে সেই সুযোগ এখনো সীমিত। এছাড়াও প্রতিষ্ঠার ২২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো গড়ে ওঠেনি অডিটোরিয়াম, টিএসসি, জিমনেসিয়ামসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে আমার একটাই প্রত্যাশা-সব ধরনের সীমাবদ্ধতা ও সংকট দ্রুত নিরসন হোক। একই সঙ্গে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গবেষণা, উদ্ভাবন এবং দেশের সরকারি-বেসরকারি খাতে অবদান রাখবে-আর এই অগ্রযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয় হবে আরও সমৃদ্ধ, আরও গৌরবময়। (বন্যা হালদার,সিপিএস বিভাগ)