রাজশাহীতে বাড়ছে এইচআইভি সংক্রমণ: আক্রান্তদের বেশিরভাগই সমকামী সম্পর্কের মাধ্যমে সংক্রমিত
- প্রকাশঃ ০৮:৪৯:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫
- / 1
রামেকের এইচটিসি সেন্টার। ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহীতে ক্রমেই বাড়ছে এইচআইভি (এইডস) সংক্রমণ। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত নতুন করে ২৮ জনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে এইডসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে সমকামী সম্পর্কের মাধ্যমেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি ঘটছে।
এই পরিস্থিতিতে আক্রান্তদের চিকিৎসা ও পরামর্শ সেবা জোরদারে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে একটি ট্রিটমেন্ট সেন্টার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এখানে শুধু এইচআইভি টেস্ট ও কাউন্সেলিং করা হয়।
রামেকের এইচআইভি টেস্টিং অ্যান্ড কাউন্সেলিং (এইচটিসি) সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সাল থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১২ হাজার ৪৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯৩ জনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ২৫ জন পুরুষ, ২ জন নারী এবং ১ জন তৃতীয় লিঙ্গের। একই সময়ে এইডসে মারা গেছেন ৮ জন। আক্রান্তদের অধিকাংশের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে শনাক্ত ২৭ জনের মধ্যে ১৬ জনই সমকামী সম্পর্কের মাধ্যমে সংক্রমিত হন। আর চলতি বছর অক্টোবর পর্যন্ত শনাক্ত ২৮ জনের মধ্যে ১৭ জন সমকামী সম্পর্কের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন। এছাড়া যৌনকর্মীর মাধ্যমে ১০ জন এবং রক্তের মাধ্যমে ১ জন সংক্রমিত হয়েছেন।
একজন আক্রান্ত ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
রোগটি শনাক্ত হওয়ার পর মনে হয়েছিল জীবন শেষ। কিন্তু রামেকে কাউন্সেলিংয়ের পর বুঝেছি, এইচআইভি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিয়মিত ওষুধ নিলে ভালো থাকা যায়। তবে রাজশাহীতে চিকিৎসা ও ওষুধের ব্যবস্থা না থাকায় বগুড়ায় যেতে হয়—এটা বেশ কষ্টকর।
রামেকের এইচটিসি সেন্টারের কাউন্সেলর রেজাউল করিম বলেন, “অনেকেই রিপোর্ট পজিটিভ এলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। কেউ কেউ আত্মহত্যার কথাও ভাবেন। কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে আমরা তাদের মানসিকভাবে দৃঢ় থাকতে উৎসাহ দিই।”
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহাম্মদ বলেন,
এইচআইভি রোগীদের জন্য আমরা একটি ট্রিটমেন্ট সেন্টার চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। রুম রেনোভেশনের কাজ চলছে। শিগগিরই এটি চালু হলে রাজশাহীর রোগীদের আর বগুড়ায় যেতে হবে না।
রাজশাহী এইচটিসি সেন্টারের ফোকাল পারসন ডা. ইবরাহীম মো. শরফ বলেন,
অরক্ষিত যৌন সম্পর্ক—নারী-পুরুষে বা পুরুষ-পুরুষে—এইচআইভি সংক্রমণের প্রধান মাধ্যম। এছাড়া গর্ভকালীন সময়, সন্তান জন্ম ও বুকের দুধ পানের মাধ্যমেও মা থেকে শিশুর দেহে ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। তাই প্রতিরোধের মূল উপায় হলো সচেতনতা ও নিরাপদ যৌন আচরণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজশাহীতে সংক্রমণ বৃদ্ধির এ প্রবণতা এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তা ভবিষ্যতে বড় জনস্বাস্থ্য সংকটে রূপ নিতে পারে। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালানোর আহ্বান জানান তারা।



























