ঢাকা ০২:৩১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গোপালগঞ্জ সহিংসতা: হত্যা মামলার সংখ্যা বেড়ে ৫, আসামি ছাড়াল ১০ হাজার, গ্রেপ্তার ৩১৪

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
  • প্রকাশঃ ০৮:৩৬:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
  • / 4

গোপালগঞ্জে এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা ও সমাবেশ’ ঘিরে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের ঘটনায় নতুন করে আরও একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। এতে মোট মামলা দাঁড়িয়েছে ১২টিতে। শনিবার (২৬ জুলাই) গুলিতে নিহত রিকশাচালক রমজান মুন্সীর (৩২) ভাই জামাল মুন্সী গোপালগঞ্জ সদর থানায় এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় কারও নাম উল্লেখ না থাকলেও অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মির মো. সাজেদুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত দায়ের হওয়া ১২ মামলায় আসামির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০,১৩৭ জনে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৬৮৭ জনের নাম রয়েছে, বাকিদের পরিচয় অজ্ঞাত। এই মামলাগুলোর ভিত্তিতে শনিবার পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩১৪ জনকে।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ১৬ জুলাই শহরের যানজটের কারণে রিকশা রেখে দুপুরের খাবারের জন্য বাড়ি ফিরছিলেন রমজান মুন্সী। বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে লঞ্চঘাট এলাকায় পৌঁছালে তিনি সহিংসতার মুখোমুখি হন। সেখানে কয়েক হাজার লোক ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ মিছিল করে এনসিপির সমাবেশস্থলের দিকে যাচ্ছিল। দোকানপাট ভাঙচুর ও পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়ার পর যৌথবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এই সময় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে এবং দুইপক্ষের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে যান রমজান।

পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেদিন রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৭ জুলাই দিবাগত রাত ১টা ৪৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।

এর আগে, নিহত ৪ যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ নিজেই ৪টি হত্যা মামলা করে। বাকি মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে সন্ত্রাস দমন আইনে ২টি, বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩টি, এবং কারাগারে হামলার ঘটনায় ১টি। সবমিলিয়ে মোট ১২ মামলায় ৩১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৭ জুলাই গোপালগঞ্জে ১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির কারণে শনিবার সকালে বিজিবিকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসন গত ২০ জুলাই কারফিউ এবং ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে। বর্তমানে গোপালগঞ্জে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরতে শুরু করেছে। চালু রয়েছে যানবাহন চলাচল, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত তিন দিনে নতুন করে গ্রেপ্তার হয়েছেন মাত্র ২ জন। এতে জেলাজুড়ে গ্রেপ্তার আতঙ্কও অনেকটাই কমে এসেছে।

উল্লেখ্য, ১৬ জুলাই এনসিপির ঘোষিত পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। ৫ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে প্রাণ হারান অন্তত ৫ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শহরে কারফিউ জারি করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও ওই ঘটনার বিচার ও দায়ীদের শনাক্ত করার দাবিতে দেশব্যাপী নানা মহল থেকে প্রতিবাদ ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”

শেয়ার করুন

গোপালগঞ্জ সহিংসতা: হত্যা মামলার সংখ্যা বেড়ে ৫, আসামি ছাড়াল ১০ হাজার, গ্রেপ্তার ৩১৪

প্রকাশঃ ০৮:৩৬:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

গোপালগঞ্জে এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা ও সমাবেশ’ ঘিরে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের ঘটনায় নতুন করে আরও একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। এতে মোট মামলা দাঁড়িয়েছে ১২টিতে। শনিবার (২৬ জুলাই) গুলিতে নিহত রিকশাচালক রমজান মুন্সীর (৩২) ভাই জামাল মুন্সী গোপালগঞ্জ সদর থানায় এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় কারও নাম উল্লেখ না থাকলেও অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মির মো. সাজেদুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত দায়ের হওয়া ১২ মামলায় আসামির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০,১৩৭ জনে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৬৮৭ জনের নাম রয়েছে, বাকিদের পরিচয় অজ্ঞাত। এই মামলাগুলোর ভিত্তিতে শনিবার পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩১৪ জনকে।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ১৬ জুলাই শহরের যানজটের কারণে রিকশা রেখে দুপুরের খাবারের জন্য বাড়ি ফিরছিলেন রমজান মুন্সী। বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে লঞ্চঘাট এলাকায় পৌঁছালে তিনি সহিংসতার মুখোমুখি হন। সেখানে কয়েক হাজার লোক ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ মিছিল করে এনসিপির সমাবেশস্থলের দিকে যাচ্ছিল। দোকানপাট ভাঙচুর ও পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়ার পর যৌথবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এই সময় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে এবং দুইপক্ষের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে যান রমজান।

পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেদিন রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৭ জুলাই দিবাগত রাত ১টা ৪৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।

এর আগে, নিহত ৪ যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ নিজেই ৪টি হত্যা মামলা করে। বাকি মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে সন্ত্রাস দমন আইনে ২টি, বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩টি, এবং কারাগারে হামলার ঘটনায় ১টি। সবমিলিয়ে মোট ১২ মামলায় ৩১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৭ জুলাই গোপালগঞ্জে ১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির কারণে শনিবার সকালে বিজিবিকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসন গত ২০ জুলাই কারফিউ এবং ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে। বর্তমানে গোপালগঞ্জে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরতে শুরু করেছে। চালু রয়েছে যানবাহন চলাচল, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত তিন দিনে নতুন করে গ্রেপ্তার হয়েছেন মাত্র ২ জন। এতে জেলাজুড়ে গ্রেপ্তার আতঙ্কও অনেকটাই কমে এসেছে।

উল্লেখ্য, ১৬ জুলাই এনসিপির ঘোষিত পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। ৫ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে প্রাণ হারান অন্তত ৫ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শহরে কারফিউ জারি করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও ওই ঘটনার বিচার ও দায়ীদের শনাক্ত করার দাবিতে দেশব্যাপী নানা মহল থেকে প্রতিবাদ ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”