বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন আরও তীব্র হয়েছে। পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রমও পুরোপুরি বন্ধ ছিল।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বুধবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন এবং বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক প্রতিবাদের মাধ্যমে তাদের দাবি তুলে ধরেন। এরপর দুপুর ২টার দিকে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে যান এবং সেখানে উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেন।
এদিকে, চলমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে অস্থিরতা আরও বেড়েছে। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে শেরে-ই বাংলা হলের প্রভোস্ট ড. আবদুল আলিম বছির এবং জীবনানন্দ দাশ রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক সঞ্জয় কুমার সরকার তাদের নিজ নিজ পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এটি উপাচার্যের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শিক্ষার্থীদের এক দফা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দশটিরও বেশি বিভাগ। তারা বিবৃতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন, যা আন্দোলনকে আরও বেগবান করেছে।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবি সিন্ডিকেট মিটিংয়ে মেনে নেওয়ার পরও কিছু শিক্ষার্থী নতুন নতুন দাবি তুলে আন্দোলন করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে নেই। যারা আন্দোলন করছে, তারা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার জন্য বাইরের ইন্ধন পাচ্ছে এবং এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা দিন দিন তাদের ওপর বিরক্ত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের প্রভোস্ট ও বিভিন্ন দপ্তরের পরিচালকদের একের পর এক পদত্যাগের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, এখানে কিছু ব্যক্তিগত অভিসন্ধি কাজ করছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তারা নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন।
উপাচার্য আরও অভিযোগ করেন যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক ও কর্মচারী আগের সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত এবং তাদের মধ্যে কারও কম, কারও বেশি “ফ্যাসিস্ট সংশ্লিষ্টতা” রয়েছে।
সবশেষে উপাচার্য কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যে বা যারা ইন্ধন দিয়ে এই আন্দোলন করাচ্ছে, তাদেরকে কোনোভাবেই ছেড়ে দেওয়া হবে না।
উপাচার্যের এই মন্তব্য পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। একদিকে শিক্ষার্থীদের অনড় অবস্থান এবং অন্যদিকে উপাচার্যের কঠোর মনোভাবের কারণে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ এখন গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
ববি প্রতিনিধি: আবদুল্লাহ আল শাহিদ খান