জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের একটি অংশ বিদেশ পাঠানোর তালিকা ও অনুদান বণ্টন নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার (২৭ মে) দুপুরে এই দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায়, যখন হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষের সামনে পেট্রোল ঢেলে আত্মহননের চেষ্টা করেন আন্দোলনে আহত একজন যুবক।
ঘটনার দিন দুপুর দুইটার দিকে আন্দোলনে আহতদের একটি পক্ষ হাসপাতালের পরিচালক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরীকে অবরুদ্ধ করে। জানা যায়, এর আগে ২৫ মে রবিবার চারজন আহত যুবক পরিচালকের কক্ষে ঢুকে বিষপান করেছিলেন। যদিও তারা দ্রুত চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন।
পরিচালক ডা. খায়ের আহমেদ জানান, আহতদের দুই পক্ষের মধ্যে বিদেশ যাওয়ার তালিকা ও অনুদান বিতরণ নিয়ে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। তিনি বলেন, আহতদের একজন অভিযোগ করেন, আমি নাকি তালিকা করে বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অথচ এটা আমার একার সিদ্ধান্ত নয়, এজন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি রয়েছে। তালিকা তারা করে।
তিনি আরও জানান, প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন হঠাৎ আমার কক্ষে প্রবেশ করেন এবং নিজেদের মধ্যে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় আকতার হোসেন নামের একজন পেট্রোল নিয়ে এসে আত্মহননের হুমকি দেয়। আমি পরিস্থিতির অবনতি দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি জানাই। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনার পরপরই আহতদের একটি অংশের সহায়তায় পরিচালক নিরাপদে কক্ষ ত্যাগ করেন।
আন্দোলনে আহতদের মধ্যে হিল্লোল নামের একজন বলেন, কিছু আহতদের এমন আচরণ খুবই দুঃখজনক। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই আন্তরিকভাবে চিকিৎসা দিয়ে আসছে। তবে পুনর্বাসন এবং অনুদান কার্যক্রম খুব ধীরগতিতে চলছে, যা হতাশার জন্ম দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই সরকারের কাছ থেকে কিছু পেতে হলে আন্দোলন করতে হয়। শান্তিপূর্ণভাবে কিছু চাওয়া যায় না।
এদিকে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আহতদের মনোসামাজিক সহায়তার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা কর্মসূচি গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই সাহসী যোদ্ধাদের জীবনের প্রতি ভালোবাসা ফিরিয়ে দিতে রাষ্ট্র ও সমাজকে একযোগে দায়িত্ব পালন করতে হবে, যেন তারা আর কখনো নিঃসঙ্গতায় না হারিয়ে যান।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্রদের একটি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে চোখ হারান এবং গুরুতর আহত হন বেশ কিছু যুবক। এরপর থেকে তারা জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে পুনর্বাসন, চিকিৎসা ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য অনুদান বণ্টন নিয়ে আন্দোলনকারীদের মধ্যে বিভাজনও প্রকট হয়ে উঠেছে।