ফেঞ্চুগঞ্জে ঘিলাছড়া ইউনিয়ন পরিষদে দুস্থ গোষ্ঠীর উন্নয়ন (ভিজিডি) কর্মসূচির ১৬০ জন কার্ডধারীর দুই বছরের সঞ্চয়ের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার ঘিলাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্যবৃন্দসহ মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের মাঠকর্মীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে।
জনপ্রতি ৫ হাজার ২৮০ টাকা করে মোট ৮ লাখ ৪৪ হাজার ৮০০ টাকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সচিব ও ইউপি সদস্যরা আত্মসাৎ করেছেন বলে দাবি ভুক্তভোগীদের। ভুক্তভোগী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর পরিচালিত ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের উপজেলায় ১৬০ দুস্থ নারীকে ঘিলাছড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে কার্ড দেওয়া হয়। ভিজিডি কার্ডধারী এক ব্যক্তিকে এক মাসে ৩০ কেজি চাল দেওয়া হয়। এর বিপরীতে ২২০ টাকা সঞ্চয় হিসাবে ইউনিয়ন পরিষদে জমা করা হতো।
এভাবে গত দুই বছরে চব্বিশবার চাল উত্তোলনের পরিপ্রেক্ষিতে একেকজন কার্ডধারী দুই বছরে সঞ্চয় হিসাবে ৫ হাজার ২৮০ টাকা জমা দেন। অধিকাংশ কার্ডধারী সঞ্চয়ের অর্থ ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের মাঠ কর্মী শারমিন আক্তারের কাছে জমা দেন। গত বুধবার ভিজিডির এ কর্মসূচির চাল দেওয়ার কার্যক্রম শেষ হয়।
এরপর গত বৃহস্পতিবার কার্ডধারী ব্যক্তিরা তাঁদের সঞ্চয়ের টাকা নিতে ইউপিতে যান। এ সময় তাদের ব্যাংকে যাওয়ার জন্য বলা হয়। পরে ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা ব্যাংকে যান। সেখানকার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ইউপির ভিজিডি কার্ডধারীদের সঞ্চয়ের অর্থ জমা দেওয়া হয়নি বলে জানান।
বিষয়টির খোঁজ নিতে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু সঞ্চয়ের টাকার কোনো সুরাহা না পেয়ে তাঁরা ফেঞ্চুগঞ্জের গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে জানতে ঘিলাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা রেজাউল করিমকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
ঘিলাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ইলিয়াস আহমদ বলেন, ভিজিডি কার্ডধারীদের সঞ্চয়ের টাকা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের মাঠকর্মী শারমিন আক্তারের কাছে জমা দেওয়া হতো। ভিজিডি কার্ডধারীরা নিজেরা ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কেন শারমিন আক্তারের কাছে জমা দেওয়া হতো, এমন প্রশ্নে ইলিয়াস আহমদ বলেন, ঘিলাছড়া থেকে ফেঞ্চুগঞ্জ সদরে যেতে যাতায়াত ভাড়া বেশি খরচ হয় বিধায় কার্ডধারীদের সুবিধার্থে ইউনিয়ন পরিষদে শারমিন জমা নিতেন। শারমিন নিজে ব্যাংকে টাকা জমা দিতেন।
ব্যাংকে টাকা জমা দিলে কখনো জমা রশিদ দেখতে চাননি কেন, এমন প্রশ্নে ইউপি সচিব ইলিয়াস আহমদ মুখ খুলতে রাজি হননি।
অভিযুক্ত শারমিন আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে তার মুঠোফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পায়নি। ভিজিডি কার্ডধারীদের সঞ্চয়ের টাকা আত্মসাৎ এর খবর পেয়ে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে কার্ডধারীদের সঞ্চয়ের টাকা ফেরত দিতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ভিজিডির কার্ডধারী দুস্থদের সঞ্চয়ের অর্থ আত্মসাতের কোনো সুযোগ নেই। অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দ্রুত কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া নেওয়া হবে।
প্রতিবেদক:করিম উদ্দিন