৩ হাজার কবর খোঁড়ার সেবক এখন শয্যাশায়ী, দুর্বৃত্তের হাতে প্রাণ গেল প্রিয় ঘোড়ার

- প্রকাশঃ ০৮:১০:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
- / 45
জীবনভর অন্যের শেষ বিদায়ের কাজ করে যাওয়া একজন নিঃস্বার্থ মানুষ এখন নিজেই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। নাম মনু মিয়া। কিশোরগঞ্জের ইটনার এই মানুষটি গত ৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়েছেন নিঃস্বার্থভাবে, বিনা পারিশ্রমিকে। এমন সেবার প্রতিদান কীভাবে দেওয়া হয়? দুর্বৃত্তরা যেন জবাব দিল নিষ্ঠুরভাবে মনু মিয়ার প্রিয় ঘোড়াটিকে হত্যা করে।
মৃত্যুসংবাদ পেলেই খুন্তি-কোদাল হাতে ঘোড়ায় চেপে ছুটে যেতেন যেকোনো গ্রামে, হাওরের দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে। কারও অনুরোধ লাগত না, কোনো প্রতিদান লাগত না। শুধু মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতাই তাঁকে তাড়িয়ে নিয়ে যেত।
মনু মিয়ার নিজের লেখা ডায়েরি বলছে, ৩ হাজার ৫৭টি কবর খুঁড়েছেন তিনি। শুধু কবর খুঁড়েই ক্ষান্ত হননি, যাঁদের কবর খুঁড়েছেন তাঁদের নাম ও মৃত্যুর তারিখ লিখে রেখেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে।
৬৭ বছর বয়সে এসে জীবনভর মানুষকে সেবা করতে গিয়ে নিজের শরীরের যত্ন নিতে পারেননি। জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ১৪ মে তাঁকে ভর্তি করা হয় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে। শয্যাশায়ী এই মানুষটির পাশে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী রহিমা বেগম। নিঃসন্তান এই দম্পতির জীবনে ভরসা ছিল একটি ঘোড়া কবর খোঁড়ার যাত্রার অনন্য সহচর।
কিন্তু গত ১৭ মে সকালে পাশের মিঠামইন উপজেলার হাশিমপুর ছত্রিশ গ্রামের একটি মাদ্রাসার পাশে পানিতে পড়ে থাকতে দেখা যায় ঘোড়াটির মৃতদেহ। বুকে ধারালো অস্ত্রের আঘাত স্পষ্ট এটা দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত হত্যা।
মনু মিয়া এখনো জানেন না তাঁর প্রিয় ঘোড়াটির মৃত্যুর খবর। স্ত্রী ও স্বজনেরা তাঁর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে বিষয়টি গোপন রেখেছেন।
রহিমা বেগম বলেন, উনি কারও কোনো ক্ষতি করেননি, সারাজীবন মানুষের জন্য কাজ করেছেন। আমরা জানতাম মানুষ উনাকে ভালোবাসে। এই অসুস্থ অবস্থায় ঘোড়াটাকে কেউ মেরে ফেলবে, এটা আমরা কল্পনাও করিনি। খবরটা দিলে উনি সহ্য করতে পারবেন না।
দীর্ঘ পাঁচ দশকের সেবা আর সুনাম ছড়িয়ে রয়েছে ইটনা, মিঠামইন, শাল্লা, আজমিরীগঞ্জসহ পুরো হাওর অঞ্চলে। এমনকি বনানী কবরস্থানেও মনু মিয়া কাজ করেছেন বহুবার। তাঁর নিঃস্বার্থ সেবার প্রশংসা করেন সবাই।
প্রতিবেশী এস এম রিজন বলেন, মনু মিয়া শুধু কবর খুঁড়েন না, একজন মানবসেবক। তাঁর প্রিয় ঘোড়াটাকে এভাবে মারা খুবই দুঃখজনক ও নিন্দনীয়।
এদিকে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মুকিত সরকার জানিয়েছেন, মিঠামইন থানাকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।