ঢাকা ০৯:৩১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুনামগঞ্জ শহরের গোপন আস্তানা থেকে মাদক চক্রের হোতাসহ আটক ৩, উদ্ধার ৩৫০ পিস ইয়াবা

  • প্রকাশঃ ০৯:২৮:১৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫
  • / 39

দীর্ঘদিন ধরে জনমনে কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সুনামগঞ্জ শহরের বড়পাড়ার একটি রহস্যজনক দুইতলা ভবনের পর্দা অবশেষে সরে গেছে। জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অভিযানে উন্মোচিত হয়েছে, ভবনটি ছিল একটি সুসংগঠিত ইয়াবা চক্রের গোপন কার্যালয়।

গত বুধবার রাতে ডিবি পুলিশের একটি দল পরিকল্পিতভাবে ভবনটি ঘেরাও করে তল্লাশি চালায়। এর আগে বিকেলে দক্ষিণ আরপিননগর এলাকা থেকে আটক করা হয় চক্রের মূল হোতা আসাদুজ্জামান পংকজ (৩৫) এবং তার দুই সহযোগী লিমন মিয়া (৩২) ও মো. শ্রাবনুজ্জামান (৩৪)-কে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৩৫০ পিস ইয়াবা।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পংকজের বিরুদ্ধে মাদক, নারী ও শিশু নির্যাতনসহ অন্তত ১৮টি মামলা রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সুনামগঞ্জ শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি সংগঠিত মাদক নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে আসছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, শহরের গুরুত্বপূর্ণ মানিক ডাত্তা পয়েন্টের নিকট অবস্থিত এই ভবনটি পংকজ প্রায় দুই বছর আগে ১৮ লাখ টাকায় ক্রয় করেন। এরপর থেকেই এটি ইয়াবা ব্যবসার নিরাপদ ঘাঁটিতে পরিণত হয়।

বাড়িটির মূল ফটক সবসময় তালাবদ্ধ থাকত। সন্ধ্যার পরপরই সেখানে বিভিন্ন যানবাহনে আগত অপরিচিত লোকজনের আনাগোনা দেখা যেত। ক্রেতাদের ফোন পেলে গেট খোলা হতো। অভ্যন্তরে ছিল আলাদা একটি ‘ভিআইপি আড্ডা কক্ষ’, যার চারদিকে ছিল নরম সোফা আর মাঝখানে ঝুলানো ছিল একটি দোলনা।

বিশেষভাবে নকশাকৃত এই ভবনটি বাহির থেকে প্রায় দুর্গের মতো সুরক্ষিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রবেশ ঠেকাতে ছিল বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রবেশের একমাত্র উপায় ছিল গেট ভেঙে ঢোকা, আর পেছনে ছিল বিকল্প সুরঙ্গপথ, যা ব্যবহারের মাধ্যমে অভিযানের সময় পালানোর চেষ্টা করা হতো বলে ধারণা।

মহল্লাবাসীদের দীর্ঘদিনের সন্দেহ থাকলেও ভয়, শঙ্কা ও হুমকির কারণে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। এক প্রতিবেশী জানান, তার এক আত্মীয়ের কাছ থেকেই পংকজ বাড়িটি কিনেছিলেন। তিনি জানান, “সবার জানা ছিল, পংকজ একজন পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আহম্মদ উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন বিশ্বস্ত সোর্সের মাধ্যমে তথ্য পেয়ে আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী অভিযান চালাই। বিকেলে মূল হোতাসহ তিনজনকে আটক করার পর রাতেই বড়পাড়ার ওই বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। বাড়িতে তখন কেউ না থাকলেও এটি যে ইয়াবা চক্রের গোপন আস্তানা ছিল, তা নিশ্চিত হওয়া গেছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের সুনামগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করে তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। আদালত তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রতিবেদক: তুর্য দাস

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন-“প্রজন্ম কথা

শেয়ার করুন

সুনামগঞ্জ শহরের গোপন আস্তানা থেকে মাদক চক্রের হোতাসহ আটক ৩, উদ্ধার ৩৫০ পিস ইয়াবা

প্রকাশঃ ০৯:২৮:১৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫

দীর্ঘদিন ধরে জনমনে কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সুনামগঞ্জ শহরের বড়পাড়ার একটি রহস্যজনক দুইতলা ভবনের পর্দা অবশেষে সরে গেছে। জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অভিযানে উন্মোচিত হয়েছে, ভবনটি ছিল একটি সুসংগঠিত ইয়াবা চক্রের গোপন কার্যালয়।

গত বুধবার রাতে ডিবি পুলিশের একটি দল পরিকল্পিতভাবে ভবনটি ঘেরাও করে তল্লাশি চালায়। এর আগে বিকেলে দক্ষিণ আরপিননগর এলাকা থেকে আটক করা হয় চক্রের মূল হোতা আসাদুজ্জামান পংকজ (৩৫) এবং তার দুই সহযোগী লিমন মিয়া (৩২) ও মো. শ্রাবনুজ্জামান (৩৪)-কে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৩৫০ পিস ইয়াবা।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পংকজের বিরুদ্ধে মাদক, নারী ও শিশু নির্যাতনসহ অন্তত ১৮টি মামলা রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সুনামগঞ্জ শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি সংগঠিত মাদক নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে আসছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, শহরের গুরুত্বপূর্ণ মানিক ডাত্তা পয়েন্টের নিকট অবস্থিত এই ভবনটি পংকজ প্রায় দুই বছর আগে ১৮ লাখ টাকায় ক্রয় করেন। এরপর থেকেই এটি ইয়াবা ব্যবসার নিরাপদ ঘাঁটিতে পরিণত হয়।

বাড়িটির মূল ফটক সবসময় তালাবদ্ধ থাকত। সন্ধ্যার পরপরই সেখানে বিভিন্ন যানবাহনে আগত অপরিচিত লোকজনের আনাগোনা দেখা যেত। ক্রেতাদের ফোন পেলে গেট খোলা হতো। অভ্যন্তরে ছিল আলাদা একটি ‘ভিআইপি আড্ডা কক্ষ’, যার চারদিকে ছিল নরম সোফা আর মাঝখানে ঝুলানো ছিল একটি দোলনা।

বিশেষভাবে নকশাকৃত এই ভবনটি বাহির থেকে প্রায় দুর্গের মতো সুরক্ষিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রবেশ ঠেকাতে ছিল বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রবেশের একমাত্র উপায় ছিল গেট ভেঙে ঢোকা, আর পেছনে ছিল বিকল্প সুরঙ্গপথ, যা ব্যবহারের মাধ্যমে অভিযানের সময় পালানোর চেষ্টা করা হতো বলে ধারণা।

মহল্লাবাসীদের দীর্ঘদিনের সন্দেহ থাকলেও ভয়, শঙ্কা ও হুমকির কারণে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। এক প্রতিবেশী জানান, তার এক আত্মীয়ের কাছ থেকেই পংকজ বাড়িটি কিনেছিলেন। তিনি জানান, “সবার জানা ছিল, পংকজ একজন পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আহম্মদ উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন বিশ্বস্ত সোর্সের মাধ্যমে তথ্য পেয়ে আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী অভিযান চালাই। বিকেলে মূল হোতাসহ তিনজনকে আটক করার পর রাতেই বড়পাড়ার ওই বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। বাড়িতে তখন কেউ না থাকলেও এটি যে ইয়াবা চক্রের গোপন আস্তানা ছিল, তা নিশ্চিত হওয়া গেছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের সুনামগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করে তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। আদালত তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রতিবেদক: তুর্য দাস

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন-“প্রজন্ম কথা