এশিয়ান টেলিভিশনের একজন স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে পরিচিত মেহেদী হাসান কবিরকে ঘিরে সম্প্রতি একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠে এসেছে। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাগত নৈতিকতা ও অতীত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য প্রকাশ পাওয়ার পর নরসিংদীজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মেহেদী হাসান কবিরের শিক্ষাগত যোগ্যতা মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। অথচ গণমাধ্যমে দায়িত্ব পালনের জন্য বর্তমান সরকার ও সাংবাদিকতা সংশ্লিষ্ট নীতিমালায় ন্যূনতম স্নাতক পাসের যোগ্যতা থাকার বিধান রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে এমন একজন স্বল্প শিক্ষিত ব্যক্তি জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল এশিয়ান টেলিভিশনের মতো প্রতিষ্ঠানে “স্টাফ রিপোর্টার” পদে নিয়োগ পান?
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আমলাব গ্রামের বাসিন্দা মেহেদী হাসান কবির একাধিকবার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। ছাগল চুরি, অস্ত্রসহ ডাকাতি, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও জাল পরিচয় ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এক ঘটনায়, ভূয়া পুলিশ পরিচয়ে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর থেকে এক এনজিও কর্মীকে অপহরণের সময় এলাকাবাসীর সহায়তায় তাকে আটক করা হয় এবং গণপিটুনির শিকার হন কবির। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তার কাছে অস্ত্রও ছিল।
সূত্র মতে, বেলাব থানায় মেহেদী হাসানের নামে একাধিক চাঁদাবাজি ও প্রতারণার মামলা রয়েছে। বীমার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তিনি কয়েক মাস জেলও খেটেছেন বলে জানা যায়। সম্প্রতি একটি ঘটনায় অভিযোগ ওঠে, তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ প্রচারের ভয় দেখিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা দাবি করেন।
স্থানীয় সাংবাদিকদের দাবি, একটি বিরোধের জেরে কপালে হালকা আঁচড় লাগার ঘটনাকে বড় করে দেখাতে তিনি দীর্ঘদিন ব্যান্ডেজ পরে ঘুরে বেড়ান। বিভিন্ন দপ্তরে প্রভাব বিস্তার করতে এই ব্যান্ডেজ ব্যবহার করা হয়। এমনকি অভিযোগ রয়েছে, বেলাব হাসপাতালের ডাক্তারকে রিপোর্ট বদলাতে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করেন তিনি।
এশিয়ান টিভির এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিনিধি জানান, মেহেদী হাসান কবির চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত এবং তাকে মাসিক নির্ধারিত অঙ্কের টাকা চ্যানেলটিকে দিতে হয়। এই চুক্তির ভিত্তিতে তিনি গাড়ি, ক্যামেরা ও অন্যান্য সুবিধা ভোগ করছেন। প্রতিবেদকের দাবি অনুযায়ী, তিনি সংবাদ না করার শর্তে অনেকের কাছ থেকে অর্থ দাবি করেন।
এই সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে মিডিয়াগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়া কতটা স্বচ্ছ? একজন শিক্ষাগত ও নৈতিকভাবে অযোগ্য ব্যক্তি কীভাবে দায়িত্বশীল পদে আসীন হন? একাধিক মামলার আসামি কীভাবে স্বাধীনভাবে সাংবাদিক পরিচয়ে ঘুরে বেড়ান?
সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিক সমাজ মনে করছেন, সাংবাদিকতার আড়ালে ব্যক্তিগত ও অপরাধমূলক স্বার্থসিদ্ধির এ ধরণের অপচেষ্টা বন্ধে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নিয়োগে শিক্ষাগত ও নৈতিক মানদণ্ড কঠোরভাবে প্রয়োগ এবং অপরাধীদের তথ্য যাচাই ছাড়া কোনও প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব না দেওয়ার দাবি জানান সংশ্লিষ্টরা।