কর্ণফুলী লঞ্চে কলেজছাত্রী ইস্পিতার রহস্যমৃত্যু: ধর্ষণের পর নদীতে ফেলা, অভিযোগ পরিবারের

- প্রকাশঃ ০৬:৫৫:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫
- / 13
“আমি একজন অটোচালক, কিন্তু আমি কি আমার মেয়ে ইস্পিতার মৃত্যুর সঠিক কারণ জানবো?” — এই আর্তনাদ এখন ভোলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। হৃদয়বিদারক এই প্রশ্ন তুলেছেন ইস্পিতার বাবা, যিনি তার মেয়ে সুকর্ণা আক্তার ইপ্সিতাকে হারিয়ে শোক ও ক্ষোভে বিমর্ষ।
ভোলা সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অনার্স পড়ুয়া এবং সদ্য ছাত্রদল নেত্রী ইস্পিতা কর্ণফুলী-৪ লঞ্চ থেকে নদীতে পড়ে মৃত্যুবরণ করেন। ঘটনার পর থেকে উঠে এসেছে নানা গুঞ্জন, সন্দেহ এবং উদ্বেগ—তাকে কি নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল? নাকি নিজেই ঝাঁপ দিয়েছিলেন?
ইস্পিতা ছিলেন রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ও সচেতন এক শিক্ষার্থী। ফেসবুকে নিয়মিত লেখালেখি করতেন, সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে বলিষ্ঠ অবস্থান নিতেন। তার সর্বশেষ ফেসবুক পোস্ট ছিল ১৩ জুন, যেখানে তিনি হঠাৎ করেই রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। ঠিক সেই দিন থেকেই তিনি নিখোঁজ।
এরপরই গুঞ্জন ছড়ায়—কর্ণফুলী-৪ লঞ্চে এক ছাত্রীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, সেই মেয়েটিই ছিলেন ইস্পিতা।
ইস্পিতার পরিবার, সহপাঠী ও এলাকাবাসীর ভাষ্য—এটি কোনো নিছক আত্মহত্যা নয়, বরং এটি পূর্বপরিকল্পিত ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড। তাদের অভিযোগ, ইস্পিতার পরিচিত কিছু বন্ধুবান্ধবই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
তবে সবচেয়ে হতাশাজনক বিষয় হলো, এত বড় একটি ঘটনা ঘটার পরও ছাত্ররাজনীতির অঙ্গনে নেমে এসেছে নিরবতা। ইস্পিতার রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা কেউই মুখ খুলছেন না, নেই কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচি, মানববন্ধন কিংবা ন্যায়বিচারের দাবিতে কোনো পদক্ষেপ।
ইস্পিতার পরিবার প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করা হোক এবং যারা এই নির্মম ঘটনার জন্য দায়ী, তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।
এই মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো ভোলা জেলার বিবেককে নাড়া দিয়েছে। একজন শিক্ষার্থী, একজন কন্যা, একজন রাজনৈতিক কর্মী—ইস্পিতা এখন শুধুই একটি প্রশ্নের নাম: “এই ন্যায়বিচার কি কখনো আসবে?”