ভাবির দেওয়া তথ্যে ডাকাতির ছক, স্ত্রীসহ ডাকাত গ্রেপ্তার

- প্রকাশঃ ০৬:৩২:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫
- / 5
তুষার শেখ ওরফে ‘গোল্ড হৃদয় । ছবি: প্রজন্ম কথা
নড়াইলে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের অন্যতম মূলহোতা তুষার শেখ ওরফে ‘গোল্ড হৃদয়’কে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও লোহাগড়া থানা পুলিশ। তুষারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার দ্বিতীয় স্ত্রী রোকেয়া বেগম ওরফে জান্নাতকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রোববার (৬ জুলাই) রাত ৯টার দিকে লোহাগড়া থানার সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ভোরে ঢাকার বিমানবন্দর সংলগ্ন আজমপুর এলাকায় র্যাব-৪ ও লোহাগড়া থানার যৌথ অভিযানে তুষারকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে নোয়াগ্রামে নিজ বাড়ি থেকে লুণ্ঠিত স্বর্ণালংকারসহ গ্রেপ্তার করা হয় স্ত্রী রোকেয়া বেগমকে। তুষার শেখ লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের নোয়াগ্রামের ওয়াদুদ শেখের ছেলে। তার দ্বিতীয় স্ত্রী রোকেয়া খাগড়াছড়ির ইসলামপুরের নূর মাঝির মেয়ে।
পুলিশ জানায়, চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি লোহাগড়ার ঘাঘা গ্রামে প্রবাসী বাবলু শেখের বাড়িতে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন লুট করে একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দল। ওই ঘটনায় প্রবাসীর স্ত্রী শেফালী বেগম লোহাগড়া থানায় মামলা করেন। চার দিনের ব্যবধানে একই উপজেলার নোয়াগ্রামে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আবুল হাসান বিশ্বাসের বাড়িতেও ডাকাতি হয়। সেখানেও পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে লুট করা হয় নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন।
পুলিশ তদন্তে নেমে তুষার শেখ ওরফে গোল্ড হৃদয়ের সংশ্লিষ্টতা পায়। প্রযুক্তি বিশ্লেষণ ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার আজমপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তুষারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী লুণ্ঠিত স্বর্ণালংকার উদ্ধার ও স্ত্রী রোকেয়া বেগমের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে পুলিশের তদন্তে নতুন মোড় নেয়। উদ্ধার হওয়া স্বর্ণালংকারের মধ্যে রয়েছে একটি স্বর্ণের চেইন ও কানের একজোড়া দুল।
সংবাদ সম্মেলনে তুষার শেখ গণমাধ্যমকে জানান, ‘শুরুতে হাঁস-মুরগি, গাছের ফল চুরি করতাম। পরে ভাবি আসমা বেগম আদালতে হাজিরার সময় কয়েকটি বাড়ির তথ্য দেন। আসমার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ঘাঘা ও নোয়াগ্রামে ডাকাতির পরিকল্পনা করি। ডাকাতির মালামাল বিক্রি করে সবাইকে ভাগ দিয়েছি, ভাবি আসমাকে ৩ হাজার টাকা দিতাম।’
ঘাঘা গ্রামের ভুক্তভোগী শেফালী বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী বিদেশ থেকে রক্ত-ঘাম ঝরিয়ে টাকা পাঠিয়েছিলেন। ঘর তুলতে ৬ লাখ টাকা রেখেছিলাম। আসমা আমাদের বাড়িতে আসা–যাওয়া করতো, তার তথ্যেই সব গেছে। নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার সব লুট হয়ে গেছে।’
লোহাগড়া থানার ওসি মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘তুষার শেখ বিলাসী জীবনযাপন করতেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে দামি মোটরসাইকেল, ঘড়ি, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকার ভিডিও প্রচার করতে দেখা গেছে। তার নামে এক ডজনের বেশি মামলা রয়েছে। র্যাবের সহায়তায় আমরা তাকে গ্রেপ্তার করেছি। ডাকাত দলের অন্য সদস্যদেরও ধরতে অভিযান চলছে।’ পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং ডাকাত দলের সম্পূর্ণ চক্র শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।