আইডি কার্ড দেখালেও নিস্তার মেলেনি: সেনা চেকপোস্টে মেরিটাইম শিক্ষার্থীকে নির্যাতন

- প্রকাশঃ ০৬:২২:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
- / 20
নির্যাতন আঙুল ও হাতে গুরুতর আঘাত লাগে । ছবি: প্রজন্ম কথা
টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির ১০ শিক্ষার্থী। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী তারা রাত ৩টা ৫ মিনিটে খিলক্ষেতে বাস থেকে নামেন এবং সেখান থেকে তিনটি সিএনজি অটোরিকশায় ভাগ হয়ে হলে ফিরছিলেন। কিন্তু রাতের এই যাত্রাপথ এক শিক্ষার্থীর জন্য পরিণত হয় এক দুঃস্বপ্নে। কালশী স্টিল ব্রিজ এলাকায় পৌঁছালে একটি সেনাবাহিনী চেকপোস্টে তাদের সিএনজিগুলো থামিয়ে নামিয়ে আনা হয়। সেখান থেকেই শুরু হয় ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতা যা স্মরণ করলেই আঁতকে উঠছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সাদি সায়েম, এলএলবি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
সেনা সদস্যরা সায়েমকে একাধিক প্রশ্ন করেন এবং তিনি তাৎক্ষণিকভাবে নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড প্রদর্শন করেন। তবুও তার পরিচয়কে সন্দেহজনক মনে করে সেনাসদস্যরা ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে প্রশ্ন করেন, স্কুলে বলে গেছেন? এবং হলে স্যার রুম চেক করেন না?
তিনি জানান, বন্ধুবান্ধব এবং পরিচিত একজন সেনা কর্মকর্তাকে ফোন দিলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে মোড় নেয়। আচরণ হয়ে ওঠে আরও আগ্রাসী, এবং তাকে অপেক্ষায় থাকতে বাধ্য করা হয় সিনিয়র অফিসারের আগমনের পূর্ব পর্যন্ত। ঘটনার মাত্র কয়েক মিনিট পর সেখানে এসে উপস্থিত হয় সেনাবাহিনীর দুটি পিকআপ ভ্যান, যেগুলোতে ছিল আনুমানিক ৩০–৪০ জন সদস্য। একজন অফিসার নিজেকে ‘ল স্টুডেন্ট’ পরিচয় দিয়ে শিক্ষার্থীর বক্তব্য শুনলেও সেখানেই থেমে থাকেনি নিপীড়ন।
সাদির ভাষ্যমতে, তাকে একাধিকবার সিএনজি থেকে টেনে নামিয়ে ৮–১০ জন মিলে শারীরিকভাবে আক্রমণ করেন। ৩০ সেকেন্ডে ৫০–৬০ বার লাঠির আঘাত পেয়েছি, বলেন তিনি। কারও ঘাড় নিচু করিয়ে মারধর, আঙুল ও হাতে গুরুতর আঘাত এবং কান ধরে বসিয়ে বলতে বাধ্য করা হয় আমার ভুল হইছে, আমার শিক্ষা হইছে। নির্যাতনের পর তিনি প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে যান এবং পরে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে বেড রেস্টে রাখা হয়েছে। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন।
সাদি সায়েম সামাজিক মাধ্যমে তার ওপর চালানো অমানবিক আচরণ, অপেশাদার জিজ্ঞাসাবাদ এবং নিরাপত্তার নামে নিপীড়নের ঘটনা তুলে ধরেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সহপাঠী ও সচেতন নাগরিকরা এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।