ঢাকা ১০:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ছাত্র হলের ছাদ ধস: আহত ১১ শ্রমিক, গঠিত তদন্ত কমিটি

ইকবাল মাহমুদ । ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
  • প্রকাশঃ ১০:৫৩:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
  • / 3

ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন একটি দশতলা ছাত্র হল ভবনের ছাদ ধসে ১১ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকেলে ভবনটির দ্বিতীয় তলার বেলকনির ঢালাই চলাকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

ভবনটির নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে সিএসআই কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরের দিকে দ্বিতীয় তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়। বিকেল চারটার দিকে পূর্ব-দক্ষিণ কোণে কাজ চলাকালে হঠাৎ করেই কাঠামো নড়বড়ে হয়ে পড়ে এবং মুহূর্তেই ছাদ ধসে পড়ে। এতে ঢালাই কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা নিচে পড়ে গিয়ে কোমর, পিঠ ও হাঁটুতে গুরুতর আঘাত পান।

আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আহত ১১ জন শ্রমিককে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, তবে একজনের কোমরের আঘাত গুরুতর।

নিম্নমানের উপকরণ, বৃষ্টি ও গাফিলতি প্রশ্নে আলোচনায়
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণকাজে ব্যবহৃত রড অত্যন্ত চিকন ও নিম্নমানের। খুঁটি নির্মাণে কোথাও কোথাও লোহার পাইপের পরিবর্তে বাঁশ ও পাটের রশি ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া দুপুরে বৃষ্টির মধ্যে ঢালাই কাজ চলছিল, ফলে কাঠামো ভিজে দুর্বল হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ উঠেছে।

একজন শ্রমিক জানান, “দুপুরে কাজ শুরুর পর খাবার বিরতি শেষে আবার ঢালাই শুরু হলে বিকেলে হঠাৎ ছাদ ধসে পড়ে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেজাউল ইসলাম বলেন, “নির্মাণকাজে দুর্বল রড, জোড়াতালি ও অনিরাপদ খুঁটি ব্যবহারের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষার্থীদের চোখে পড়ছে। ভবিষ্যতে আমরা যে হলে উঠব, তার নিরাপত্তা নিয়ে এখন শঙ্কা তৈরি হয়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মাহবুবুর রহমান জানান, “ঘটনার পরপরই আমি সেখানে ছুটে যাই। আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়। কেন এমন হলো, সেটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

নির্মাণ প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী রাহাত হোসেন দিদার বলেন, “ছাদ ঢালাইয়ের আগে আমরা সবকিছু পর্যালোচনা করেছি। কিন্তু আকস্মিক বৃষ্টির কারণে খুঁটি দুর্বল হয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে।”

তবে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছিল কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সবসময় নিরাপত্তা নির্দেশনা মেনে চলতে বলি।” প্রকৌশল দপ্তরের গাফিলতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এটি আমাদের গাফিলতির ফল নয়, বরং একটি অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, “ছাদ ধসের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। পাশাপাশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হচ্ছে।”

এই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি দ্রুত তদন্ত ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা আর না ঘটে।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”

শেয়ার করুন

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ছাত্র হলের ছাদ ধস: আহত ১১ শ্রমিক, গঠিত তদন্ত কমিটি

প্রকাশঃ ১০:৫৩:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন একটি দশতলা ছাত্র হল ভবনের ছাদ ধসে ১১ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকেলে ভবনটির দ্বিতীয় তলার বেলকনির ঢালাই চলাকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

ভবনটির নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে সিএসআই কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরের দিকে দ্বিতীয় তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়। বিকেল চারটার দিকে পূর্ব-দক্ষিণ কোণে কাজ চলাকালে হঠাৎ করেই কাঠামো নড়বড়ে হয়ে পড়ে এবং মুহূর্তেই ছাদ ধসে পড়ে। এতে ঢালাই কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা নিচে পড়ে গিয়ে কোমর, পিঠ ও হাঁটুতে গুরুতর আঘাত পান।

আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আহত ১১ জন শ্রমিককে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, তবে একজনের কোমরের আঘাত গুরুতর।

নিম্নমানের উপকরণ, বৃষ্টি ও গাফিলতি প্রশ্নে আলোচনায়
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণকাজে ব্যবহৃত রড অত্যন্ত চিকন ও নিম্নমানের। খুঁটি নির্মাণে কোথাও কোথাও লোহার পাইপের পরিবর্তে বাঁশ ও পাটের রশি ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া দুপুরে বৃষ্টির মধ্যে ঢালাই কাজ চলছিল, ফলে কাঠামো ভিজে দুর্বল হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ উঠেছে।

একজন শ্রমিক জানান, “দুপুরে কাজ শুরুর পর খাবার বিরতি শেষে আবার ঢালাই শুরু হলে বিকেলে হঠাৎ ছাদ ধসে পড়ে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেজাউল ইসলাম বলেন, “নির্মাণকাজে দুর্বল রড, জোড়াতালি ও অনিরাপদ খুঁটি ব্যবহারের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষার্থীদের চোখে পড়ছে। ভবিষ্যতে আমরা যে হলে উঠব, তার নিরাপত্তা নিয়ে এখন শঙ্কা তৈরি হয়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মাহবুবুর রহমান জানান, “ঘটনার পরপরই আমি সেখানে ছুটে যাই। আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়। কেন এমন হলো, সেটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

নির্মাণ প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী রাহাত হোসেন দিদার বলেন, “ছাদ ঢালাইয়ের আগে আমরা সবকিছু পর্যালোচনা করেছি। কিন্তু আকস্মিক বৃষ্টির কারণে খুঁটি দুর্বল হয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে।”

তবে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছিল কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সবসময় নিরাপত্তা নির্দেশনা মেনে চলতে বলি।” প্রকৌশল দপ্তরের গাফিলতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এটি আমাদের গাফিলতির ফল নয়, বরং একটি অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, “ছাদ ধসের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। পাশাপাশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হচ্ছে।”

এই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি দ্রুত তদন্ত ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা আর না ঘটে।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”