ঢাকা ০৪:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে

ছাদ ধসে আহত ১১ শ্রমিক, নির্মাণে অনিয়ম ও অনুমতি ছাড়াই ঢালাইয়ের অভিযোগ

ইকবাল মাহমুদ । ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
  • প্রকাশঃ ১১:২১:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫
  • / 7

ছাদ ধসের পেছনে নির্মাণ ত্রুটি, ইউজিসির তদন্তে উঠে আসছে চমকপ্রদ তথ্য | ছবি: প্রজন্ম কথা 


ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ১০ তলা ছাত্র হল ভবনের ছাদ ধসের ঘটনা তদন্তে এসেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।

রোববার (৩ আগস্ট) দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ইউজিসির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে গঠিত প্রতিনিধি দলটি। এতে সদস্য সচিব হিসেবে ছিলেন সহকারী পরিচালক (প্রকৌশলী) তানভির মোরশেদ, অতিরিক্ত পরিচালক সুরাইয়া ফারহানা এবং সিনিয়র সহকারী পরিচালক (প্রকৌশলী) মোশারফ হোসেন।

তারা পরিদর্শনের সময় নির্মাণাধীন ভবনের খুঁটির ঘনত্ব, মধ্যবর্তী দূরত্ব, কাজটি নকশা অনুযায়ী হয়েছে কি না, পপিং, স্টেজিং, সেন্টারিং, সাটারিং এবং ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রীসহ সব কিছু খতিয়ে দেখেন। বিশেষ নজর দেন স্টিলের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের মতো অনিয়মের দিকেও।

তদন্ত চলাকালে প্রকৌশল দপ্তর ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীদের মধ্যে দোষারোপের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহাত হোসেন দিদার বলেন, “সাইট ইঞ্জিনিয়ারকে কিছু ত্রুটির কথা জানানো হয়েছিল। সেগুলো ঠিক করে অনুমতি নেওয়ার পর ঢালাই শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু পরে দেখি, তারা অনুমতি ছাড়াই ঢালাই শুরু করে দিয়েছে।”

অন্যদিকে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাইট ইঞ্জিনিয়ার দাবি করেন, তারা অনুমতি ছাড়া কোনো কাজ করেন না। তার ভাষায়, “সকালবেলা ঢালাই শুরু করার সময় ইঞ্জিনিয়ার উপস্থিত ছিলেন এবং তার সামনেই কাজ শুরু হয়। ছবি ও ভিডিও প্রমাণও আছে। অনুমতি না থাকলে তিনি নিশ্চয়ই বাধা দিতেন।”
তবে এ অনুমতির কোনো লিখিত প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেননি।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. মোফাছিরুল ইসলাম বলেন, “ব্যস্ততার কারণে আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে পারিনি।”

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছাদ ধসের মূল উৎসস্থল ছিল ভবনের করিডোর অংশ। সেখানে বিম ও কলামের সংযোগ যথাযথ ছিল না বলেও অভিযোগ ওঠে। যদিও প্রকল্প পরিচালক দাবি করেন, একই নকশায় ছাত্রী হল ভবন নির্মাণ হয়েছে, তাই ত্রুটির সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, “১০ তলা ভবনের নকশা অনুযায়ী কলামের ভেতর ছিদ্র করে বিমের রড ঢোকানোর পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। তদন্তেই বোঝা যাবে কোথাও কোনো ত্রুটি ছিল কি না। প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।”

পরিদর্শন শেষে সিনিয়র সহকারী পরিচালক মোশারফ হোসেন বলেন, “ধ্বংসাবশেষ দেখে মনে হয়েছে, রড সঠিকভাবে বসানো হয়েছিল। তবে প্রাথমিকভাবে আমরা মনে করছি, খুঁটির ঘনত্ব ও দূরত্ব, স্ক্যাফোল্ডিং এবং স্ট্রাকচারাল ডিজাইনে গড়মিল রয়েছে। সিডিউলে বাঁশ ব্যবহারের কথা না থাকলেও এখানে তা দেখা গেছে। ভবনের উচ্চতা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ‘ডেসিং’ও ছিল না।”

তিনি আরও বলেন, “ঢালাইয়ের সময় সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সম্মিলিত চেকলিস্ট থাকার কথা, কিন্তু তা এখন পর্যন্ত পাইনি।”

তদন্ত দলের আহ্বায়ক মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, “কমিটি সরেজমিনে বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখেছে এবং তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে প্রয়োজনীয় নথিপত্র চাওয়া হয়েছে। সেগুলো হাতে পেলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের যৌথ অনুমোদনের ভিত্তিতে পিএমইউ কীভাবে নির্মাণের বৈধতা দিয়েছে, তাও তদন্তের আওতায় আসবে। তদন্ত শেষে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।”

উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্রোহী হলের পাশে নির্মাণাধীন ১০ তলা ছাত্রাবাস ভবনের দ্বিতীয় তলার সঙ্গে সংযুক্ত পার্কিং অংশের ছাদ ধসে পড়ে। এতে অন্তত ১১ জন নির্মাণশ্রমিক আহত হন। এর পরদিনই (১ আগস্ট) ইউজিসি চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”

শেয়ার করুন

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে

ছাদ ধসে আহত ১১ শ্রমিক, নির্মাণে অনিয়ম ও অনুমতি ছাড়াই ঢালাইয়ের অভিযোগ

প্রকাশঃ ১১:২১:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫

ছাদ ধসের পেছনে নির্মাণ ত্রুটি, ইউজিসির তদন্তে উঠে আসছে চমকপ্রদ তথ্য | ছবি: প্রজন্ম কথা 


ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ১০ তলা ছাত্র হল ভবনের ছাদ ধসের ঘটনা তদন্তে এসেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।

রোববার (৩ আগস্ট) দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ইউজিসির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে গঠিত প্রতিনিধি দলটি। এতে সদস্য সচিব হিসেবে ছিলেন সহকারী পরিচালক (প্রকৌশলী) তানভির মোরশেদ, অতিরিক্ত পরিচালক সুরাইয়া ফারহানা এবং সিনিয়র সহকারী পরিচালক (প্রকৌশলী) মোশারফ হোসেন।

তারা পরিদর্শনের সময় নির্মাণাধীন ভবনের খুঁটির ঘনত্ব, মধ্যবর্তী দূরত্ব, কাজটি নকশা অনুযায়ী হয়েছে কি না, পপিং, স্টেজিং, সেন্টারিং, সাটারিং এবং ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রীসহ সব কিছু খতিয়ে দেখেন। বিশেষ নজর দেন স্টিলের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের মতো অনিয়মের দিকেও।

তদন্ত চলাকালে প্রকৌশল দপ্তর ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীদের মধ্যে দোষারোপের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহাত হোসেন দিদার বলেন, “সাইট ইঞ্জিনিয়ারকে কিছু ত্রুটির কথা জানানো হয়েছিল। সেগুলো ঠিক করে অনুমতি নেওয়ার পর ঢালাই শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু পরে দেখি, তারা অনুমতি ছাড়াই ঢালাই শুরু করে দিয়েছে।”

অন্যদিকে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাইট ইঞ্জিনিয়ার দাবি করেন, তারা অনুমতি ছাড়া কোনো কাজ করেন না। তার ভাষায়, “সকালবেলা ঢালাই শুরু করার সময় ইঞ্জিনিয়ার উপস্থিত ছিলেন এবং তার সামনেই কাজ শুরু হয়। ছবি ও ভিডিও প্রমাণও আছে। অনুমতি না থাকলে তিনি নিশ্চয়ই বাধা দিতেন।”
তবে এ অনুমতির কোনো লিখিত প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেননি।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. মোফাছিরুল ইসলাম বলেন, “ব্যস্ততার কারণে আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে পারিনি।”

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছাদ ধসের মূল উৎসস্থল ছিল ভবনের করিডোর অংশ। সেখানে বিম ও কলামের সংযোগ যথাযথ ছিল না বলেও অভিযোগ ওঠে। যদিও প্রকল্প পরিচালক দাবি করেন, একই নকশায় ছাত্রী হল ভবন নির্মাণ হয়েছে, তাই ত্রুটির সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, “১০ তলা ভবনের নকশা অনুযায়ী কলামের ভেতর ছিদ্র করে বিমের রড ঢোকানোর পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। তদন্তেই বোঝা যাবে কোথাও কোনো ত্রুটি ছিল কি না। প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।”

পরিদর্শন শেষে সিনিয়র সহকারী পরিচালক মোশারফ হোসেন বলেন, “ধ্বংসাবশেষ দেখে মনে হয়েছে, রড সঠিকভাবে বসানো হয়েছিল। তবে প্রাথমিকভাবে আমরা মনে করছি, খুঁটির ঘনত্ব ও দূরত্ব, স্ক্যাফোল্ডিং এবং স্ট্রাকচারাল ডিজাইনে গড়মিল রয়েছে। সিডিউলে বাঁশ ব্যবহারের কথা না থাকলেও এখানে তা দেখা গেছে। ভবনের উচ্চতা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ‘ডেসিং’ও ছিল না।”

তিনি আরও বলেন, “ঢালাইয়ের সময় সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সম্মিলিত চেকলিস্ট থাকার কথা, কিন্তু তা এখন পর্যন্ত পাইনি।”

তদন্ত দলের আহ্বায়ক মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, “কমিটি সরেজমিনে বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখেছে এবং তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে প্রয়োজনীয় নথিপত্র চাওয়া হয়েছে। সেগুলো হাতে পেলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের যৌথ অনুমোদনের ভিত্তিতে পিএমইউ কীভাবে নির্মাণের বৈধতা দিয়েছে, তাও তদন্তের আওতায় আসবে। তদন্ত শেষে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।”

উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্রোহী হলের পাশে নির্মাণাধীন ১০ তলা ছাত্রাবাস ভবনের দ্বিতীয় তলার সঙ্গে সংযুক্ত পার্কিং অংশের ছাদ ধসে পড়ে। এতে অন্তত ১১ জন নির্মাণশ্রমিক আহত হন। এর পরদিনই (১ আগস্ট) ইউজিসি চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”