ছবি: সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জের ইটনায় বিনা পারিশ্রমিকে জীবনের অর্ধশত বছর ধরে কবর খুঁড়ে সেবা করে যাওয়া সেই ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ মনু মিয়া (৬৭) আর নেই। শনিবার (২৮ জুন) সকালে নিজ গ্রাম আলগাপাড়ায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মনু মিয়ার মৃত্যুতে তার গ্রাম ও আশপাশের এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

মনু মিয়ার মৃত্যুতে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে রাজধানীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে যাওয়া বাতিল করেছেন দেশের জনপ্রিয় নাট্য অভিনেতা খায়রুল বাসার। শনিবার সন্ধ্যায় সেই অনুষ্ঠানে ‘শ্রেষ্ঠ নাট্য অভিনেতা’র পুরস্কার গ্রহণ করার কথা ছিলো তার। কিন্তু তিনি সবকিছু ছাপিয়ে শেষ বিদায় জানাতে ছুটে গেছেন মনু মিয়ার জানাজায়।

অভিনেতা খায়রুল বাসার গণমাধ্যমকে জানান, মনু মিয়ার মতো মানুষের জন্য কোনো পুরস্কার নয়, মানুষের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধাই যথেষ্ট। উনার মতো মানুষের সেবা আর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। তাই আজ উনার পাশে থাকাটাই আমার জন্য সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

এ বছরের মে মাসে কিছু দুষ্কৃতকারী মনু মিয়ার লাল রঙের প্রিয় ঘোড়াটি হত্যা করে। সেই ঘটনায় অসুস্থ হয়ে পড়েন মনু মিয়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনার খবর দেখে খায়রুল বাসার হাসপাতালে ছুটে যান, তার পাশে দাঁড়ান। ঘোড়া কিনে দিতে চাইলেও বিনয়ের সঙ্গে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন মনু মিয়া। সেই থেকেই অভিনেতার মনে মনু মিয়ার প্রতি এক গভীর শ্রদ্ধা গড়ে ওঠে।

মনু মিয়ার ভাতিজা শফিকুল ইসলাম জানান, চাচা মানুষের শেষ বিদায়ে সেবা দিতে গিয়ে নিজের দিকে খেয়ালই রাখেননি। বিনিময়ে কখনো কিছু চাননি। শেষ সময়েও তিনি শুধু দোয়া চেয়েছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, ঝড়-জলাবদ্ধতা, রাত-বিরাত কোনো কিছুই তাকে আটকাতে পারেনি। লাল ঘোড়ার পিঠে চড়ে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে গিয়ে অন্তত তিন হাজারের বেশি কবর খুঁড়েছেন তিনি। রাজধানীর বনানী কবরস্থানসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তার খোঁড়া কবর এখনো মানুষের মানবিক গল্প হয়ে বেঁচে আছে।

বিকেলে নিজ গ্রামে জানাজা শেষে ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ মনু মিয়াকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে—এবার তাকে আরেকজন খুঁড়বে, যে কবর তিনি আজীবন বিনা পারিশ্রমিকে অন্যদের জন্য খুঁড়েছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”