সৌমেন মাস্টারমশাই গ্রামের চায়ের দোকানে বসে খবরের কাগজটা মন দিয়ে পড়ছিলেন। সকালের রোদ এসে পড়েছে দোকানের ঝাঁপিতে। গ্রামের মানুষজন যে যার কাজে বেরোবার আগে দু’দণ্ড এখানে বসে চা খেয়ে যায়, আর সাথে চলে রাজ্যের গল্প। আজ আলোচনার কেন্দ্রে সেই পুরনো বিষয় – রাজনীতি।
দেখলেন মাস্টারমশাই? লাল্টু এগিয়ে এসে একটা বেঞ্চি টেনে বসল, আবার কী সব হচ্ছে শহরে! নেতাগুলোর শুধু কথা আর কথা। কাজের বেলা…
সৌমেন মাস্টারমশাই হাসলেন। আরে বাবা, থামো তো একটু। খবরটা পুরো পড়ি। কাগজের পাতায় চোখ বুলিয়ে তিনি বললেন, আসলে লাল্টু, গণতন্ত্রটা একটা ঘড়ির মতো। কাঁটাগুলো যদি ঠিক দিকে না ঘোরে, তাহলে সময় মেলানো মুশকিল। রাজনীতি আবার ঘড়ি হল কী করে?
কেন হবে না মাস্টারমশাই চশমাটা নাকের ডগায় নামিয়ে বললেন, ঘড়ির যেমন অনেকগুলো ছোট ছোট অংশ থাকে, তেমনই গণতন্ত্রেও নানান স্তম্ভ আছে – সরকার, বিচার বিভাগ, জনগণ, সংবাদমাধ্যম। একটাও যদি ঠিক মতো কাজ না করে, তাহলে পুরো ব্যবস্থাটাই নড়বড়ে হয়ে যায়। পাশের টেবিলে বসা করিম চাচা এতক্ষণ চুপ করে শুনছিলেন। এবার মুখ খুললেন, ঠিক বলেছেন মাস্টার। আজকাল যা দেখছি, মনে হয় যেন ঘড়ির কাঁটাগুলো উল্টো দিকে ঘুরছে। যাদের কথা বলার কথা, তারা চুপ করে থাকে। যাদের কাজ করার কথা, তারা শুধু ভাষণ দেয়। আর ঐ যে ভোটের সময় কত প্রতিশ্রুতি দেয়, লাল্টু যোগ করলো, তারপর আর তাদের দেখাই পাওয়া যায় না। মনে হয় যেন ব্যাটারি ফুরিয়ে যাওয়া ঘড়ি!
মাস্টারমশাই দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। আসলে সমস্যাটা আমাদেরও। আমরা শুধু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকি, কিন্তু তার যত্ন নিই না। ঘড়িটাকে সময় মতো দম দিই না। নিজেদের অধিকার আর কর্তব্যের কথা ভুলে যাই।
তাহলে উপায়? করিম চাচা জানতে চাইলেন।
মাস্টারমশাই দৃঢ় স্বরে বললেন,উপায় একটাই, আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। ঘড়ির প্রতিটি কাঁটার দিকে নজর রাখতে হবে। ভুল দেখলে আওয়াজ তুলতে হবে। তবেই না এই গণতন্ত্রের ঘড়িটা ঠিক সময় দেবে। চা শেষ করে লাল্টু আর করিম চাচা উঠে দাঁড়ালো। তাদের চোখেমুখে একটা নতুন ভাব। মনে হল, মাস্টারমশাইয়ের কথাগুলো তাদের মনে গেঁথে গেছে।
সৌমেন মাস্টারমশাই আবার খবরের কাগজের পাতায় ডুব দিলেন। বাইরে রোদ আরও ঝলমলে হয়েছে। তিনি মনে মনে ভাবলেন, গণতন্ত্রের ঘড়ি হয়তো এখনই খারাপ সময় দেখাচ্ছে, কিন্তু যদি সবাই মিলে চেষ্টা করে, তবে একদিন ঠিকই আবার সুন্দর সময় আসবে। সেই দিনের অপেক্ষায় রইলেন তিনি।
কলমে : আবদুল্লাহ আল শাহিদ খান, ( বরিশাল )