মা: ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও অপরিশোধ্য ঋণের প্রতীক

- প্রকাশঃ ০৮:৩৬:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫
- / 31
মা হলো এই পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র এবং মায়াবী সম্পর্ক।পৃথিবীর সবচেয়ে মধুরতম ডাক ” মা”। ছোট্ট এ শব্দের অতলে লুকানো থাকে মায়ের গভীর স্নেহ-মমতা, অকৃত্রিম দরদ ও ভালোবাসা।বিশ্বমন্ডলে মায়ের কোনো তুলনা নেই। সব ধর্মেগ্রন্থেই মায়ের গুরুত্ব সবার ঊর্ধ্বে বর্ণিত হয়েছে।মায়ের ঋণ অপরিশোধ্য অর্থাৎ এমন ঋণ যা কোনো দিন কেউ পরিশোধ করতে পারে না।বিশ্বমন্ডলে মায়ের কোনো তুলনা নেই।মায়ের সম্মান এই পৃথিবীর সবকিছুর ঊর্ধ্বে।এই মাকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাতে কোনো আনুষ্ঠানিক দিনক্ষণের প্রয়োজন হয় না। মায়ের জন্য প্রতিদিনই সন্তানের ভালোবাসা থাকে।তার পরেও মায়ের সম্মানে একটি বিশেষ দিনকে মায়ের ভালোবাসার প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছে।
মা দিবসের ইতিহাস অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, এর সুচনা নিয়ে বেশ কিছু মতভেদ রয়েছে।কিছু মত অনুসারে, প্রাচীন গ্রিসে মাতৃদেবী সিবেলের উদ্দেশ্যে পালিত একটি উৎসব এর মাধ্যমে মুলত মা দিবসের প্রচলন শুরু হয়। অন্যদিকে কেউ কেউ মনে করেন যে, ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে মায়েদের সম্মানে একটি নির্দিষ্ট রোববার পালিত হতো এমন একটি উৎসব, যা মাদারিং সানডে নামে পরিচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবসের প্রচলন শুরু হয় আনা জারভিসের উদ্যোগে। তার মা আনা মেরি জারভিস ছিলেন একজন সমাজকর্মী এবং অনাথদের সেবায় তার অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। ১৯০৫ সালে আনা মেরি জারভিসের মৃত্যুরবরন করেন।
১৯০৭ সালের এক রোববার আনা মারিয়া স্কুলের বক্তব্যে মায়ের জন্য একটি দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। আনা জার্ভিস ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর ও ওহাইওর মাঝামাঝি ওয়েবস্টার জংশন এলাকার বাসিন্দা।এরপর
আনা জারভিস মা দিবসকে একটি জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করার জন্য প্রচারণা চালান।
ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে ‘মাদারিং সানডে’ নামের এক অনুষ্ঠান পালন করা হত। যা মূলত ছিল মায়েদের সম্মান প্রদর্শনের জন্য। এছাড়াও বিভিন্ন সময় মাকে সম্মান জানাতে বিভিন্ন জাতি এমন অনেক আচার অনুষ্ঠান পালন করত।পরবর্তীতে আনা জারভিস এর প্রচেষ্টার ফলে ১৯১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মাকিন কংগ্রেস এ মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।
এভাবেই মুলত যাত্রা শুরু হয় মা দিবসের । এরই ধারাবাহিকতায় আমেরিকার পাশাপাশি মা দিবস এখন বাংলাদেশসহ অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, রাশিয়া ও জার্মানসহ শতাধিক দেশে ভালোবাসা ও মর্যাদার সঙ্গে পালিত হচ্ছে।এক গবেষণায় দেখা গেছে, অন্য বিশেষ দিনগুলোর চেয়ে এ দিনটিতে সবচেয়ে বেশি ফোন কল হয়। উইকিপিডিয়া অনুসারে মা দিবসের তাৎপর্যের মূলে আছে তিনটি বিষয়- ১. সব মায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ২. সব মাতৃত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং ৩. সমাজে মায়েদের প্রভাবের প্রতিফলন।মায়ের জন্য ভালোবাসা অকৃত্রিম, চিরন্তন ও অনাবিল। জন্মের পর প্রথম মায়ের স্পর্শ পেয়ে দেহ-মনে শিহরণ জাগে মানব দেহের।মা হলো আমাদের প্রথম স্পর্শ, প্রথম শব্দ, প্রথম ভালোবাসা এবং এমন একটি বন্ধু যে আমাদের সকল বাধা বিপত্তি ও সমস্যায় আমাদের পাশে থেকে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে।
পৃথিবীর সব মায়েরাই বিশ্ব মা দিবসে ভালো থাকুক। সুস্থ থাকুক। যাদের মা কালের নিয়মে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করেছে, সেই মায়েরাও যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক।বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মা দিবস শুধু একটি
আনুষ্ঠানিকতা নয় বরং সন্তানদের দায়িত্ববোধ জাগ্রত করার একটি দিন।চাইলে আজকের এই বিশেষ দিনটি বরাদ্দ করতে পারেন আপনার মায়ের জন্য। বছরের অন্যান্য দিনগুলো মাকে ভালোবাসি বলতে না পারলেও আজ বলুন। মায়ের সঙ্গে সময় কাটান। উপহার দিতে পারেন মায়ের কোনো পছন্দের জিনিস । মাকে নিয়ে ঘুরতে বের হতে পারেন একসঙ্গে ডিনার করলেন মায়ের পছন্দের কোনো রেস্তোরাঁয় তার প্রিয় খাবারগুলো দিয়ে।আর সব দ্বীধা ভুলে গিয়ে বলে দিন “মা ভালোবাসি তোমায়”
লেখা: আমির ফয়সাল