ঢাকা ০৫:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সপ্নপূরণের পথে ১৯ মুখ, মৌলভীবাজারে পুলিশের কনস্টেবল পদে নির্বাচিত যারা

  • প্রকাশঃ ০৩:৩৭:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫
  • / 52

আমার বাবার ছোট একটা চায়ের দোকান। পুলিশের ইউনিফর্ম পরা ছিল আমার স্বপ্ন। আজ সেটা বাস্তব হতে যাচ্ছে! কথাগুলো বলতে বলতে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার এক নবনিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবলের।

এমনই অনেক গল্পে গাঁথা একটি দিন ছিল ২৯ মে। মৌলভীবাজার পুলিশ লাইন্সের ড্রিল শেডে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ, কিন্তু একেবারে ব্যতিক্রমধর্মী এক উপলক্ষে— বাংলাদেশ পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ১৯ জনের প্রাথমিক নিয়োগ ঘোষণা।

নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও পুলিশ সুপার জনাব এম. কে. এইচ. জাহাঙ্গীর হোসেন, পিপিএম-সেবা যখন ফলাফল ঘোষণা করেন, তখন অনেকের চোখে ছিল আনন্দের অশ্রু। নির্বাচিতদের মধ্যে কেউ এসেছেন চা-বাগানের ভেতর থেকে, কেউ জেলেপাড়ার ছোট একটি ঘর থেকে, কেউ বা একমাত্র উপার্জনক্ষম ভাইয়ের স্বপ্নপূরণে নেমেছিলেন পথে।

নবনিযুক্তদের একজন নারী কনস্টেবল বললেন, গ্রামে মেয়েরা আজও পুলিশের চাকরিকে সাহসিকতার পেশা মনে করে ভয় পায়। আমি সেই ভয়কে জয় করে দেখাতে চাই, আমিও পারি।

এ বছর মৌলভীবাজার জেলায় ট্রেইনি কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিল প্রায় ২৮১ জন প্রার্থী। তিন ধাপের শারীরিক সক্ষমতা যাচাই শেষে তারা লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়। এরপর ২৯ মে অনুষ্ঠিত হয় চূড়ান্ত মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা, যেখানে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে বাছাই সম্পন্ন হয়।

পুলিশ সুপার বলেন, আমরা কাউকে সুপারিশে নেইনি। যোগ্যতা আর মেধাই এখানে একমাত্র মানদণ্ড। প্রত্যেক প্রার্থী আমাদের সন্তুষ্ট করেছে তাদের আন্তরিকতা, নৈতিকতা এবং দেশসেবার আগ্রহ দিয়ে।

ফলাফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচিতদের মুখে ছিল হাসি, কিন্তু পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মা-বাবাদের চোখে ছিল গর্বে ছলছল জল। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে মিষ্টিমুখ ও ফুল দিয়ে সংবর্ধনা জানানো হয়। ছিল ছবি তোলা, গলায় গলায় হাত রেখে বন্ধুত্ব গড়া যারা আগামীতে একসঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিনিধিত্ব করবে।

এই নিয়োগের মাধ্যমে শুধু ১৯ জনের জীবনে পরিবর্তন আসেনি, বদলে গেছে ১৯টি পরিবারের গল্প। হয়তো কেউ টিনের চালা বদলাবেন এবার, কেউ ছোট ভাইকে পড়াতে পারবেন ঢাকার কলেজে। আর সবচেয়ে বড় কথা  বাংলাদেশ পুলিশে যুক্ত হলো কিছু সৎ, সাহসী, স্বপ্নবান মুখ।

প্রতিবেদক: হিমান পুরকায়স্থ

শেয়ার করুন

সপ্নপূরণের পথে ১৯ মুখ, মৌলভীবাজারে পুলিশের কনস্টেবল পদে নির্বাচিত যারা

প্রকাশঃ ০৩:৩৭:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

আমার বাবার ছোট একটা চায়ের দোকান। পুলিশের ইউনিফর্ম পরা ছিল আমার স্বপ্ন। আজ সেটা বাস্তব হতে যাচ্ছে! কথাগুলো বলতে বলতে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার এক নবনিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবলের।

এমনই অনেক গল্পে গাঁথা একটি দিন ছিল ২৯ মে। মৌলভীবাজার পুলিশ লাইন্সের ড্রিল শেডে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ, কিন্তু একেবারে ব্যতিক্রমধর্মী এক উপলক্ষে— বাংলাদেশ পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ১৯ জনের প্রাথমিক নিয়োগ ঘোষণা।

নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও পুলিশ সুপার জনাব এম. কে. এইচ. জাহাঙ্গীর হোসেন, পিপিএম-সেবা যখন ফলাফল ঘোষণা করেন, তখন অনেকের চোখে ছিল আনন্দের অশ্রু। নির্বাচিতদের মধ্যে কেউ এসেছেন চা-বাগানের ভেতর থেকে, কেউ জেলেপাড়ার ছোট একটি ঘর থেকে, কেউ বা একমাত্র উপার্জনক্ষম ভাইয়ের স্বপ্নপূরণে নেমেছিলেন পথে।

নবনিযুক্তদের একজন নারী কনস্টেবল বললেন, গ্রামে মেয়েরা আজও পুলিশের চাকরিকে সাহসিকতার পেশা মনে করে ভয় পায়। আমি সেই ভয়কে জয় করে দেখাতে চাই, আমিও পারি।

এ বছর মৌলভীবাজার জেলায় ট্রেইনি কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিল প্রায় ২৮১ জন প্রার্থী। তিন ধাপের শারীরিক সক্ষমতা যাচাই শেষে তারা লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়। এরপর ২৯ মে অনুষ্ঠিত হয় চূড়ান্ত মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা, যেখানে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে বাছাই সম্পন্ন হয়।

পুলিশ সুপার বলেন, আমরা কাউকে সুপারিশে নেইনি। যোগ্যতা আর মেধাই এখানে একমাত্র মানদণ্ড। প্রত্যেক প্রার্থী আমাদের সন্তুষ্ট করেছে তাদের আন্তরিকতা, নৈতিকতা এবং দেশসেবার আগ্রহ দিয়ে।

ফলাফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচিতদের মুখে ছিল হাসি, কিন্তু পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মা-বাবাদের চোখে ছিল গর্বে ছলছল জল। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে মিষ্টিমুখ ও ফুল দিয়ে সংবর্ধনা জানানো হয়। ছিল ছবি তোলা, গলায় গলায় হাত রেখে বন্ধুত্ব গড়া যারা আগামীতে একসঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিনিধিত্ব করবে।

এই নিয়োগের মাধ্যমে শুধু ১৯ জনের জীবনে পরিবর্তন আসেনি, বদলে গেছে ১৯টি পরিবারের গল্প। হয়তো কেউ টিনের চালা বদলাবেন এবার, কেউ ছোট ভাইকে পড়াতে পারবেন ঢাকার কলেজে। আর সবচেয়ে বড় কথা  বাংলাদেশ পুলিশে যুক্ত হলো কিছু সৎ, সাহসী, স্বপ্নবান মুখ।

প্রতিবেদক: হিমান পুরকায়স্থ