ঢাকা ০১:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রূপকারের তুলির মায়াবী আঁচড— লাল ইটের সাম্রাজ্য ববি ক্যাম্পাসে শরতের শুভ্রতা

আবদুল্লাহ আল শাহিদ খান | ববি প্রতিনিধি
  • প্রকাশঃ ০২:০৬:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫
  • / 21

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কাশফুলের জোয়ার- লাল ইটের সাম্রাজ্যে শরতের নীরব কবিতা | ছবি: প্রজন্ম কথা


শরতের আকাশ—এ তো শুধু নীলিমা নয়, যেন এক বিশাল ক্যানভাস, আর সেই ক্যানভাসের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন এক অদৃশ্য রূপকার। তাঁর তুলির ডগায় আলো আর মেঘের কারুকাজে ভরে উঠছে দিগন্ত। নীল আকাশের বুকে তিনি আঁকছেন শুভ্র মেঘের ভেলা—যা ভেসে চলেছে কীর্তনখোলা নদীর ধার বেয়ে। নদীর জলে সেই মেঘের প্রতিবিম্ব, সেই আলোছায়ার লীলা, যেন এক ঐশ্বরিক শান্তিতে ভরিয়ে তুলছে চারপাশ।

রূপকার তখন মগ্ন তাঁর আদিম সৌন্দর্যের সৃষ্টিতে। হঠাৎ তাঁর দৃষ্টি পড়ল এক আধুনিক বিস্ময়ের দিকে—নদীর পাড় থেকে কিছুটা দূরে লাল ইটের সাম্রাজ্য, দৃঢ়তা আর জ্ঞানালোকের প্রতীক। এ যেন প্রকৃতির বুকে এক রক্তিম অঙ্গীকার—বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ক্যাম্পাস। বিকেলের রাঙা সূর্যের আলো যখন ছুঁয়ে যায় এই স্থাপত্য, তখন তা অগ্নিকণার মতো ঝলমল করে ওঠে।

রূপকার মুগ্ধ হলেন এই ৫৩ একরের জ্ঞানতীর্থের গাম্ভীর্যে। ভাবলেন, এত দৃঢ়তা ও স্থাপত্যের গৌরবের পরও কোথাও যেন কোমলতার এক শূন্যতা রয়ে গেছে। আর তখনই যেন তিনি তুলির শেষ মায়াবী আঁচড়টি দিলেন—আলতো হাতে এঁকে দিলেন কাশফুলের আলপনা।

সবুজ প্রান্তরে, লাল ইটের দেয়ালের পাশে শুভ্র কাশফুলেরা যেন হাসি ফুটিয়ে বলছে—ঋতুর রানী শরৎ নেমেছে ববি ক্যাম্পাসে। বাতাসে দুলছে হাজারো সাদা পালক, যেগুলো লাল স্থাপত্যের রুক্ষতাকে নরম করে তুলেছে এক স্বর্গীয় কোমলতায়। মনে হয়, শরৎ যেন নিজেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিশেষ আয়োজন করেছে।

যদি কবি জীবনানন্দ দাশ আজ এখানে এসে দাঁড়াতেন, হয়তো তাঁর মন ভরে উঠত ‘আবার আসিব ফিরে’-এর মতো চিরন্তন আকাঙ্ক্ষায়। হয়তো তিনি লিখে ফেলতেন নতুন কোনো পঙ্‌ক্তি—এই লাল ইট, নদী আর শুভ্র কাশফুলের মিলনে জন্ম নেওয়া সেই অনন্ত রূপের কথা।

প্রতি শরৎ এলেই তাই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভিড় করেন অসংখ্য দর্শনার্থী। শহরের কোলাহল ছেড়ে তাঁরা ছুটে আসেন এই শান্ত নৈসর্গে, যেখানে প্রকৃতি ও স্থাপত্য একে অন্যকে জড়িয়ে থাকে নীরব ভালোবাসায়।

বরিশাল শহর থেকে আসা এক দর্শনার্থী মুগ্ধ হয়ে বলেন, ছবিতে ও ভিডিওতে অনেকবার দেখেছি এই কাশফুল, কিন্তু নিজ চোখে দেখার জন্যই স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে চলে এলাম। সত্যিই ছবির মতোই সুন্দর।

অন্যদিকে, ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী কাজি তাওহিদুল ইসলাম অভি বলেন, প্রতিবছর অনলাইনে দেখি শরৎ এলেই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় যেন কাশফুলে সেজে ওঠে। মনে হয় কাশফুলের এক স্বর্গরাজ্য! তাই ঢাকায় ফেরার পথে ভাবলাম, এই সৌন্দর্যটা সরাসরি না দেখে ফেরা যায় না।

শুধু বহিরাগত দর্শনার্থী নয়, ববি শিক্ষার্থীরাও প্রতিদিন মুগ্ধ হন নিজেদের ক্যাম্পাসের এই রূপে।

মার্কেটিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী খাইরুল ইসলাম মাহিম বলেন, এই কাশফুল আমাদের ক্যাম্পাসের ‘সফট পাওয়ার’। বিকেলের অবসরে কাশফুলের বুক চিরে হাঁটলে সব ক্লান্তি মিলিয়ে যায়। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে এই দৃশ্য দেখতে—এটা আমাদের জন্য গর্বের।

কাশফুলের এই শুভ্রতা শুধু ঋতু পরিবর্তনের নয়, বরং ববি ক্যাম্পাসের জন্য রূপকারের এক নীরব আশীর্বাদ। এখানে প্রকৃতি ও জ্ঞান একসঙ্গে গড়ে তুলেছে এক চিরন্তন মৈত্রী—যেখানে দৃঢ়তার মধ্যেও কোমলতার, আর কাঠিন্যের মধ্যেও প্রেমের প্রকাশ ঘটে।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”

শেয়ার করুন

রূপকারের তুলির মায়াবী আঁচড— লাল ইটের সাম্রাজ্য ববি ক্যাম্পাসে শরতের শুভ্রতা

প্রকাশঃ ০২:০৬:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কাশফুলের জোয়ার- লাল ইটের সাম্রাজ্যে শরতের নীরব কবিতা | ছবি: প্রজন্ম কথা


শরতের আকাশ—এ তো শুধু নীলিমা নয়, যেন এক বিশাল ক্যানভাস, আর সেই ক্যানভাসের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন এক অদৃশ্য রূপকার। তাঁর তুলির ডগায় আলো আর মেঘের কারুকাজে ভরে উঠছে দিগন্ত। নীল আকাশের বুকে তিনি আঁকছেন শুভ্র মেঘের ভেলা—যা ভেসে চলেছে কীর্তনখোলা নদীর ধার বেয়ে। নদীর জলে সেই মেঘের প্রতিবিম্ব, সেই আলোছায়ার লীলা, যেন এক ঐশ্বরিক শান্তিতে ভরিয়ে তুলছে চারপাশ।

রূপকার তখন মগ্ন তাঁর আদিম সৌন্দর্যের সৃষ্টিতে। হঠাৎ তাঁর দৃষ্টি পড়ল এক আধুনিক বিস্ময়ের দিকে—নদীর পাড় থেকে কিছুটা দূরে লাল ইটের সাম্রাজ্য, দৃঢ়তা আর জ্ঞানালোকের প্রতীক। এ যেন প্রকৃতির বুকে এক রক্তিম অঙ্গীকার—বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ক্যাম্পাস। বিকেলের রাঙা সূর্যের আলো যখন ছুঁয়ে যায় এই স্থাপত্য, তখন তা অগ্নিকণার মতো ঝলমল করে ওঠে।

রূপকার মুগ্ধ হলেন এই ৫৩ একরের জ্ঞানতীর্থের গাম্ভীর্যে। ভাবলেন, এত দৃঢ়তা ও স্থাপত্যের গৌরবের পরও কোথাও যেন কোমলতার এক শূন্যতা রয়ে গেছে। আর তখনই যেন তিনি তুলির শেষ মায়াবী আঁচড়টি দিলেন—আলতো হাতে এঁকে দিলেন কাশফুলের আলপনা।

সবুজ প্রান্তরে, লাল ইটের দেয়ালের পাশে শুভ্র কাশফুলেরা যেন হাসি ফুটিয়ে বলছে—ঋতুর রানী শরৎ নেমেছে ববি ক্যাম্পাসে। বাতাসে দুলছে হাজারো সাদা পালক, যেগুলো লাল স্থাপত্যের রুক্ষতাকে নরম করে তুলেছে এক স্বর্গীয় কোমলতায়। মনে হয়, শরৎ যেন নিজেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিশেষ আয়োজন করেছে।

যদি কবি জীবনানন্দ দাশ আজ এখানে এসে দাঁড়াতেন, হয়তো তাঁর মন ভরে উঠত ‘আবার আসিব ফিরে’-এর মতো চিরন্তন আকাঙ্ক্ষায়। হয়তো তিনি লিখে ফেলতেন নতুন কোনো পঙ্‌ক্তি—এই লাল ইট, নদী আর শুভ্র কাশফুলের মিলনে জন্ম নেওয়া সেই অনন্ত রূপের কথা।

প্রতি শরৎ এলেই তাই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভিড় করেন অসংখ্য দর্শনার্থী। শহরের কোলাহল ছেড়ে তাঁরা ছুটে আসেন এই শান্ত নৈসর্গে, যেখানে প্রকৃতি ও স্থাপত্য একে অন্যকে জড়িয়ে থাকে নীরব ভালোবাসায়।

বরিশাল শহর থেকে আসা এক দর্শনার্থী মুগ্ধ হয়ে বলেন, ছবিতে ও ভিডিওতে অনেকবার দেখেছি এই কাশফুল, কিন্তু নিজ চোখে দেখার জন্যই স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে চলে এলাম। সত্যিই ছবির মতোই সুন্দর।

অন্যদিকে, ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী কাজি তাওহিদুল ইসলাম অভি বলেন, প্রতিবছর অনলাইনে দেখি শরৎ এলেই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় যেন কাশফুলে সেজে ওঠে। মনে হয় কাশফুলের এক স্বর্গরাজ্য! তাই ঢাকায় ফেরার পথে ভাবলাম, এই সৌন্দর্যটা সরাসরি না দেখে ফেরা যায় না।

শুধু বহিরাগত দর্শনার্থী নয়, ববি শিক্ষার্থীরাও প্রতিদিন মুগ্ধ হন নিজেদের ক্যাম্পাসের এই রূপে।

মার্কেটিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী খাইরুল ইসলাম মাহিম বলেন, এই কাশফুল আমাদের ক্যাম্পাসের ‘সফট পাওয়ার’। বিকেলের অবসরে কাশফুলের বুক চিরে হাঁটলে সব ক্লান্তি মিলিয়ে যায়। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে এই দৃশ্য দেখতে—এটা আমাদের জন্য গর্বের।

কাশফুলের এই শুভ্রতা শুধু ঋতু পরিবর্তনের নয়, বরং ববি ক্যাম্পাসের জন্য রূপকারের এক নীরব আশীর্বাদ। এখানে প্রকৃতি ও জ্ঞান একসঙ্গে গড়ে তুলেছে এক চিরন্তন মৈত্রী—যেখানে দৃঢ়তার মধ্যেও কোমলতার, আর কাঠিন্যের মধ্যেও প্রেমের প্রকাশ ঘটে।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”