ঢাকা ০২:৪১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইমেইল-ভীতি: কর্মস্থলের নতুন মানসিক চাপ, মুক্তির উপায় কী?

রুশাইদ আহমেদ
  • প্রকাশঃ ১০:৪৯:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫
  • / 4

বর্তমানে কর্মক্ষেত্রে ইমেইল এক অনিবার্য যোগাযোগের মাধ্যম। কিন্তু সামান্য ছুটি চাওয়া, কাজের ফলো-আপ বা সহজ কথোপকথনের জন্যও ইমেইল করতে গিয়ে অনেকে এক অদ্ভুত ভীতির শিকার হচ্ছেন।

বিশেষত জেন-জি প্রজন্মের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন মনোবিজ্ঞানীরা। নিয়মিত এই উদ্বেগ দীর্ঘমেয়াদে কর্মদক্ষতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলেও সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভারতের স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রাজীব মেহতা বলেন, ডিজিটাল যুগে বেড়ে ওঠা জেন-জি পেশাজীবনে প্রবেশ করে ইমেইল ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিকতা ও শিষ্টাচার নিয়ে সহজেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

তার মতে, যথাযথ টোন, সাইন-অফ, ইমোজি ব্যবহার, ফলো-আপের টাইমিং এসব নিয়ে অনিশ্চয়তা অনেককে মানসিক চাপের মধ্যে ফেলে দেয়। অনেকেই প্রতিটি শব্দ নিয়ে এত ভাবেন যে ইমেইল পাঠাতেই বিলম্ব হয়, তুচ্ছ বানান ভুলও তাদের কাছে বিশাল অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ফলে দেখা যায়, মনোযোগে ঘাটতি, উৎপাদনশীলতা হ্রাস, অনুপস্থিতি বেড়ে যাওয়া, নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার ভয়, নেতৃত্ব নিতে অনীহা এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব সব মিলিয়ে কর্মজীবনের গতি ব্যাহত হচ্ছে। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, অনেকে সরাসরি কথা বলা এড়িয়ে ইমেইলের উপরই নির্ভর করছেন। এটি এক ধরনের ‘anxious-avoidant behaviour’, যা ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথে অন্তরায়।

এই সমস্যা মোকাবিলায় কর্পোরেট পর্যায়ে কিছু বাস্তবধর্মী উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন হোমসফাই রিয়েলটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নেহা মিশ্রা (সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস)। তার প্রস্তাবগুলো হলো নিয়মিত স্বীকৃতি ও পুরস্কার কর্মীদের মানসিক চাপ কমাতে পারে। মাসিক ভিত্তিতে নেতৃত্ব, সৃজনশীলতা ও দলগত সহযোগিতার ভিত্তিতে স্বীকৃতি দিতে পারে প্রতিষ্ঠান।

প্রতিষ্ঠানের ক্যালেন্ডারে ‘ওয়েলনেস উইক’ রাখলে কর্মীরা ক্রীড়া, ইয়োগা বা অন্যান্য শারীরিক-মানসিক চর্চার মাধ্যমে ক্লান্তি দূর করতে পারেন। সহজে অ্যাক্সেসযোগ্য, অভিযোজনমুখী কাউন্সেলিং ও সাপোর্ট সিস্টেম থাকলে কর্মীরা মানসিক অবসাদ থেকে সহজে মুক্তি পেতে পারেন। নিয়মিত মুড সার্ভে করলে কর্মীদের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সেই তথ্যের ভিত্তিতে শাখা প্রধানরা কর্মীদের সমস্যা সমাধানে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে পারেন।

ইমেইল-ভীতি আপাতদৃষ্টিতে তুচ্ছ মনে হলেও এটি কর্মদক্ষতা, টিমওয়ার্ক ও নেতৃত্বের বিকাশে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই সময়মতো প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করাই হতে পারে টেকসই সমাধান।

সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”

শেয়ার করুন

ইমেইল-ভীতি: কর্মস্থলের নতুন মানসিক চাপ, মুক্তির উপায় কী?

প্রকাশঃ ১০:৪৯:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

বর্তমানে কর্মক্ষেত্রে ইমেইল এক অনিবার্য যোগাযোগের মাধ্যম। কিন্তু সামান্য ছুটি চাওয়া, কাজের ফলো-আপ বা সহজ কথোপকথনের জন্যও ইমেইল করতে গিয়ে অনেকে এক অদ্ভুত ভীতির শিকার হচ্ছেন।

বিশেষত জেন-জি প্রজন্মের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন মনোবিজ্ঞানীরা। নিয়মিত এই উদ্বেগ দীর্ঘমেয়াদে কর্মদক্ষতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলেও সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভারতের স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রাজীব মেহতা বলেন, ডিজিটাল যুগে বেড়ে ওঠা জেন-জি পেশাজীবনে প্রবেশ করে ইমেইল ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিকতা ও শিষ্টাচার নিয়ে সহজেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

তার মতে, যথাযথ টোন, সাইন-অফ, ইমোজি ব্যবহার, ফলো-আপের টাইমিং এসব নিয়ে অনিশ্চয়তা অনেককে মানসিক চাপের মধ্যে ফেলে দেয়। অনেকেই প্রতিটি শব্দ নিয়ে এত ভাবেন যে ইমেইল পাঠাতেই বিলম্ব হয়, তুচ্ছ বানান ভুলও তাদের কাছে বিশাল অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ফলে দেখা যায়, মনোযোগে ঘাটতি, উৎপাদনশীলতা হ্রাস, অনুপস্থিতি বেড়ে যাওয়া, নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার ভয়, নেতৃত্ব নিতে অনীহা এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব সব মিলিয়ে কর্মজীবনের গতি ব্যাহত হচ্ছে। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, অনেকে সরাসরি কথা বলা এড়িয়ে ইমেইলের উপরই নির্ভর করছেন। এটি এক ধরনের ‘anxious-avoidant behaviour’, যা ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথে অন্তরায়।

এই সমস্যা মোকাবিলায় কর্পোরেট পর্যায়ে কিছু বাস্তবধর্মী উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন হোমসফাই রিয়েলটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নেহা মিশ্রা (সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস)। তার প্রস্তাবগুলো হলো নিয়মিত স্বীকৃতি ও পুরস্কার কর্মীদের মানসিক চাপ কমাতে পারে। মাসিক ভিত্তিতে নেতৃত্ব, সৃজনশীলতা ও দলগত সহযোগিতার ভিত্তিতে স্বীকৃতি দিতে পারে প্রতিষ্ঠান।

প্রতিষ্ঠানের ক্যালেন্ডারে ‘ওয়েলনেস উইক’ রাখলে কর্মীরা ক্রীড়া, ইয়োগা বা অন্যান্য শারীরিক-মানসিক চর্চার মাধ্যমে ক্লান্তি দূর করতে পারেন। সহজে অ্যাক্সেসযোগ্য, অভিযোজনমুখী কাউন্সেলিং ও সাপোর্ট সিস্টেম থাকলে কর্মীরা মানসিক অবসাদ থেকে সহজে মুক্তি পেতে পারেন। নিয়মিত মুড সার্ভে করলে কর্মীদের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সেই তথ্যের ভিত্তিতে শাখা প্রধানরা কর্মীদের সমস্যা সমাধানে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে পারেন।

ইমেইল-ভীতি আপাতদৃষ্টিতে তুচ্ছ মনে হলেও এটি কর্মদক্ষতা, টিমওয়ার্ক ও নেতৃত্বের বিকাশে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই সময়মতো প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করাই হতে পারে টেকসই সমাধান।

সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”