তুরস্কে পুতিন-জেলেনস্কি সরাসরি বৈঠকে সম্মত: শান্তির পথে সম্ভাব্য অগ্রগতি

- প্রকাশঃ ০৫:৪৫:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫
- / 43
১১ মে ২০২৫ – ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ঘোষণা করেছেন যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তুরস্কে সরাসরি বৈঠকে বসতে প্রস্তুত। বৃহস্পতিবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাত নিরসনে এক সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই সিদ্ধান্ত আসে পুতিনের শনিবার রাতে ইস্তাম্বুলে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাবের পরপরই। প্রস্তাবটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এর আগে, এক বিশিষ্ট মার্কিন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জেলেনস্কিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান, যাতে করে যুদ্ধ আরও ভয়াবহ রূপ নেওয়ার আগেই সমাধানের পথ খোঁজা যায়। তিনি বলেন, এই বৈঠক কেবল দুই দেশের জন্য নয়, বিশ্ব শান্তির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তুরস্ক, একটি ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্র ও আগেও মধ্যস্থতার ভূমিকা পালনকারী দেশ হিসেবে, আলোচনার আয়োজক হতে সম্মত হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান পুতিনের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “আমরা শান্তির জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করতে প্রস্তুত।” উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত পূর্ববর্তী ইউক্রেন-রাশিয়া আলোচনাগুলোতেও তুরস্ক একটি নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আলোচনায় ভূমিকা রাখে।
জেলেনস্কি তার সম্মতির পাশাপাশি যুদ্ধবিরতির শর্তও পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আলোচনার আগে একটি পূর্ণাঙ্গ, স্থায়ী এবং নির্ভরযোগ্য যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে হবে,” যা তার প্রত্যাশা অনুযায়ী ১২ মে থেকে শুরু হওয়া উচিত। এই শর্ত ইউক্রেনের সতর্ক অবস্থানকে নির্দেশ করে—একটি যুদ্ধ যা ২০২৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত আনুমানিক ১০ লাখ প্রাণহানির কারণ হয়েছে।
২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল ও ডনবাস অঞ্চলে উত্তেজনার সূত্র ধরে শুরু হওয়া সংঘাত ২০২২ সালে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রিক আগ্রাসনের মাধ্যমে এক নতুন রূপ পায়। যুদ্ধ বন্ধে মিনস্ক চুক্তির মতো নানা উদ্যোগও ব্যর্থ হয়েছে। ফলে আসন্ন এই বৈঠক ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে—কেউ একে শান্তির সম্ভাব্য সূচনা হিসেবে দেখছেন, কেউ আবার সন্দিহান, কারণ অতীতের মতো এবারও আলোচনার ফলাফল ভেস্তে যেতে পারে রাজনৈতিক স্বার্থ ও অঙ্গীকারের অভাবে।
সাধারণ জনগণের প্রতিক্রিয়াও বিভক্ত। অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে শান্তির আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “এই যুদ্ধ অর্থহীন, এর দ্রুত সমাপ্তি প্রয়োজন।” অন্যদিকে কেউ কেউ জেলেনস্কির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, অভিযোগ করেছেন যে যুদ্ধটি রাজনৈতিক বা আর্থিক উদ্দেশ্যে দীর্ঘায়িত হয়েছে। একজন মন্তব্যকারী লিখেছেন, “ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা চাইলে এই যুদ্ধ থামাতে পারতেন, কিন্তু দুঃখজনকভাবে সাধারণ মানুষই এর সবচেয়ে বড় মূল্য দিচ্ছে।”
এখন সকলের দৃষ্টি তুরস্কের দিকে—এই বৈঠক সত্যিই শান্তির পথে এগিয়ে যাবে, নাকি এটি হবে আরেকটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা, যেটি ইতিহাসে শুধুই একটি হারানো সুযোগ হিসেবে থেকে যাবে।