রাশিয়ার বোমারু ঘাঁটিতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা, ৪০টির বেশি বিমান ক্ষতিগ্রস্ত

- প্রকাশঃ ০৪:৩৬:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫
- / 26
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যবর্তী এক বিস্ময়কর মুহূর্তে ইউক্রেন ইতিহাসের অন্যতম সাহসী সামরিক অভিযান চালিয়েছে। “স্পাইডারওয়েব” কোডনামে পরিচালিত এই গোপন ড্রোন হামলায় রাশিয়ার অভ্যন্তরে অবস্থিত চারটি কৌশলগত বিমানঘাঁটি—মুরমানস্ক, ইর্কুৎস্ক, ইভানোভো এবং রিয়াজান—একযোগে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। হামলায় TU-95 ও TU-22 ধরনের কৌশলগত বোমারু বিমান এবং অত্যাধুনিক A-50 এরিয়াল ওয়ার্নিং সিস্টেমসহ অন্তত ৪০টি সামরিক বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এই জটিল সামরিক অভিযানটির পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল ১৮ মাস আগে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সরাসরি তত্ত্বাবধানে অভিযানটি বাস্তবায়ন করা হয়। ড্রোনগুলো প্রথম-পক্ষদৃষ্টিভঙ্গির (FPV) প্রযুক্তিনির্ভর এবং এগুলোকে রাশিয়ায় পাচার করা হয় কাঠের কেবিন-সংবলিত ট্রাকের মাধ্যমে। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী দূর থেকে কন্ট্রোলের মাধ্যমে কেবিনের ছাদ খুলে ড্রোনগুলো উড্ডয়ন করে টার্গেট ঘাঁটিগুলোর দিকে ধাবিত হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ড্রোন টার্গেট বিমানের দিকে ছুটে গিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে বিস্ফোরণ ঘটায়, যার ফলে বিস্ফোরণের ধোঁয়া আকাশে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই হামলা কেবলমাত্র প্রযুক্তি নয়— গোয়েন্দা কৌশল, গোপন লজিস্টিক্স ও সাহসিকতার এক যুগপৎ প্রকাশ।
হামলার পর রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এর সত্যতা স্বীকার করে একে “সন্ত্রাসী তৎপরতা” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তাদের দাবি, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় অনেক ড্রোন ধ্বংস করা গেলেও কিছু বিমান আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এ হামলা রাশিয়ার বহুল প্রচারিত এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতাও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
উক্ত ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া এক রাতেই ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে ৪৭২টি ড্রোন ও সাতটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, যা চলমান যুদ্ধের মধ্যে সর্ববৃহৎ রাত্রীকালীন আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই অভিযানের পর প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ঘোষণা করেছেন, ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল শান্তি আলোচনা অংশ নিতে ইস্তানবুলে রওনা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউক্রেনের এই কৌশলগত হামলা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ মোড় এনে দিতে পারে। এটি প্রমাণ করে যে, ইউক্রেন এখন রাশিয়ার অভ্যন্তরে গভীরভাবে আঘাত হানার সক্ষমতা অর্জন করেছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই হামলা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে ইউক্রেনের উদ্ভাবনী কৌশল ও সাহসিকতার প্রশংসা করেছেন, আবার কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন এই ঘটনার পর রাশিয়ার প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ আরও ভয়াবহ হতে পারে।
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধের বর্তমান ধারা ও ভবিষ্যৎ শান্তি আলোচনা এখন ইউক্রেনের এই কৌশলগত পদক্ষেপের ওপরই অনেকাংশে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
প্রতিবেদক: আলী আজগর ইসতিয়া
সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন-“প্রজন্ম কথা