মেয়ের আয়ে সংসার চলে, কটূক্তি সইতে না পেরে টেনিস খেলোয়াড় মেয়েকে গুলি করে মারলেন বাবা

- প্রকাশঃ ০৭:৩২:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫
- / 7
ভারতের হরিয়ানার গুরগাঁওয়ে রাজ্য পর্যায়ের এক টেনিস খেলোয়াড়কে গুলি করে হত্যা করেছেন তাঁর বাবা। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে মেয়ের আয়ে সংসার চলে এমন কটূক্তি সহ্য করতে না পেরেই তিনি এ হত্যাকাণ্ড ঘটান বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিহত রাধিকা যাদব (২৫) ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজের অবস্থান তৈরি করছিলেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, রাধিকা একসময় রাজ্য পর্যায়ের সিঙ্গেলস ও ডাবলস টেনিসে র্যাঙ্কিংয়ে ছিলেন। কয়েক বছর আগে একটি চোট পেয়ে পেশাদার খেলা ছেড়ে দেন। এরপর নিজের টেনিস একাডেমি গড়ে কোচিং চালাতেন। এ ছাড়া সমাজের উচ্চপর্যায়ের অনেককেই ব্যক্তিগতভাবে প্রশিক্ষণ দিতেন তিনি।
পুলিশ বলছে, রাধিকার বাবা দীপক যাদব (৫৪) স্থানীয়ভাবে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে প্রায়ই শুনতেন—তাঁর সংসার চলে মেয়ের টাকায়। এ নিয়ে মানসিক চাপে ছিলেন দীপক। পুলিশ কর্মকর্তা বিনোদ কুমার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘মেয়ের আয়ে নির্ভরশীল বলে এলাকার লোকেরা দীপককে তাচ্ছিল্য করত। বহুবার মেয়েকে একাডেমি বন্ধ করতে বলেছেন তিনি, কিন্তু রাধিকা তা শোনেনি।’
পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার (৯ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গুরগাঁও জেলার সুশান্ত লোক-টু এলাকার বাসায় নিজের লাইসেন্সকৃত রিভলবার দিয়ে রাধিকাকে লক্ষ্য করে পাঁচটি গুলি ছোড়েন দীপক। এর মধ্যে তিনটি গুলি লাগে রাধিকাকে। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
মেয়েকে গুলি করার সময় বাড়ির অন্য কক্ষে ছিলেন দীপকের স্ত্রী। হাসপাতালে খবর দেওয়ার পর পুলিশ এসে নিহতের চাচা কুলদীপকে পায়। পরে পুলিশ দীপককে আটক করে এবং ওই রিভলবারটি জব্দ করে। সন্ধ্যায় তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
রাধিকার মৃত্যুর পর জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় হওয়া নিয়েও বাবার সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব ছিল। ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, ইনস্টাগ্রামে রাধিকা কোচিং ও টেনিস বিষয়ক রিল বানাতেন। বাবা দীপক মনে করতেন, এসব পরিবারের জন্য লজ্জার বিষয়। গ্রামের বাড়িতে গেলেই তাঁকে এ নিয়ে তির্যক কথা শুনতে হতো।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, নিহত রাধিকা খুবই প্রাণবন্ত ও মেধাবী খেলোয়াড় ছিলেন। অল ইন্ডিয়া টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের রেকর্ড অনুযায়ী, অনূর্ধ্ব-১৮ পর্যায়ে তাঁর সিঙ্গেলস র্যাঙ্কিং ছিল ৩৫তম, ডাবলসে ৫৩তম। আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশনের (আইটিএফ) তালিকায়ও ছিলেন তিনি।
স্থানীয় ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পবন যাদব বলেন, এলাকার কিছু মানুষ রাধিকার সাফল্য সহ্য করতে পারেনি। তারা তাঁর খেলার রিল নিয়েও কটূক্তি করত।
রাধিকার কোচিংয়ে আসা এক শিক্ষার্থী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে বলেন, রাধিকা বলত, তার বাবা-মা রক্ষণশীল মানসিকতার। তবুও সে সবার চেয়ে আলাদা ছিল—দারুণ খেলোয়াড়, দারুণ মানুষ।
এ ঘটনার পর গুরগাঁও পুলিশ ৫৬ নম্বর সেক্টরের থানায় হত্যা মামলা (এফআইআর) রুজু করেছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি।
এলাকাবাসী বলছেন, যে বাবা একদিন আগে বলেছিলেন, ‘মেয়েকে ভালোবাসেন’, সেই বাবাই পরদিন এমন নারকীয় কাজ করবেন—কথা ছিল না।