ঢাকা ০৪:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নেপালের সহিংসতায় হৃদয় ভাঙছে মোদির, তরুণদের শান্ত থাকার আহ্বান

প্রজন্ম কথা ডেস্ক
  • প্রকাশঃ ০১:০৭:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / 3

নেপালের স্থিতিশীলতা ও শান্তি ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, মোদি তরুণদের শান্ত থাকার আহ্বান জানালেন | ছবি: প্রজন্ম কথা


নেপালে চলমান সহিংস বিক্ষোভ ও ২২ জনের প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি নেপালের জনগণকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন এবং উল্লেখ করেছেন, প্রতিবেশী দেশের স্থিতিশীলতা, শান্তি ও সমৃদ্ধি ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্টে মোদি বলেন, “নেপালে যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তা হৃদয়বিদারক। বহু তরুণের প্রাণহানিতে আমি মর্মাহত। নেপালের স্থিতিশীলতা, শান্তি ও সমৃদ্ধি আমাদের কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। আমি নেপালের সকল ভাই-বোনদের প্রতি শান্তি বজায় রাখার বিনীত আহ্বান জানাচ্ছি।”

তিনি আরও জানান, নেপালের পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি বৈঠকে বসছে। মঙ্গলার দিন তিনি বন্যা দুর্গত পাঞ্জাব ও হিমাচল প্রদেশ পরিদর্শনকালে এই মন্তব্য করেন।

এর আগে, সোমবার নেপালে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সংসদ ভবনে হামলার চেষ্টা করেন। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ২০ জন নিহত এবং আরও শত শত মানুষ আহত হন। সহিংসতা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে এবং বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ ঘোষণা করে।

মঙ্গলবার নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাউডেলের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। পদত্যাগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, “সমস্যার সমাধান সহজতর এবং সাংবিধানিকভাবে রাজনৈতিক সমাধানের পথ সুগম করার জন্য পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

বিক্ষোভের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন জানিয়েছে, তাদের আন্দোলন ‘জেন-জি আন্দোলন’ নামে পরিচিত। এ আন্দোলনের লক্ষ্য সরকারের দুর্নীতি, বৈষম্য বৃদ্ধি এবং তরুণদের জন্য অর্থনৈতিক সুযোগের অভাবের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নেপালের প্রতি পাঁচজনের একজন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে এবং তরুণ বেকারত্বের হার ২২ শতাংশের বেশি।

মঙ্গলবার কারফিউ অমান্য করে বিক্ষোভকারীরা টায়ারে আগুন ধরিয়ে, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং রাজনীতিকদের বাড়িঘরে হামলা চালান। প্রধানমন্ত্রী অলির সরকারি বাসভবন ও সিংহ দরবার প্রশাসনিক ভবনের কিছু অংশেও আগুন দেওয়া হয়। ভারী ধোঁয়ার কারণে কাঠমান্ডুর প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়।

অলির পদত্যাগের খবরে উল্লসিত তরুণরা সংসদ ভবনে ঢুকে দেয়ালে ‘আমরা জিতেছি’ স্লোগান লিখে দেন। তবে আন্দোলনের নেতারা সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন এবং জানান, আন্দোলনের লক্ষ্য জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা, সহিংসতা নয়।

২০০৮ সালে ২৩৯ বছরের রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হওয়ার পর থেকে নেপাল রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভুগছে। গত ১৭ বছরে দেশটিতে ১৪টি সরকার ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু কোনো সরকারই পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেনি। অলি গত বছর চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন।

ভারতের জন্য নেপালের স্থিতিশীলতা কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন থাকা সত্ত্বেও, চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”

শেয়ার করুন

নেপালের সহিংসতায় হৃদয় ভাঙছে মোদির, তরুণদের শান্ত থাকার আহ্বান

প্রকাশঃ ০১:০৭:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নেপালের স্থিতিশীলতা ও শান্তি ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, মোদি তরুণদের শান্ত থাকার আহ্বান জানালেন | ছবি: প্রজন্ম কথা


নেপালে চলমান সহিংস বিক্ষোভ ও ২২ জনের প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি নেপালের জনগণকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন এবং উল্লেখ করেছেন, প্রতিবেশী দেশের স্থিতিশীলতা, শান্তি ও সমৃদ্ধি ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্টে মোদি বলেন, “নেপালে যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তা হৃদয়বিদারক। বহু তরুণের প্রাণহানিতে আমি মর্মাহত। নেপালের স্থিতিশীলতা, শান্তি ও সমৃদ্ধি আমাদের কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। আমি নেপালের সকল ভাই-বোনদের প্রতি শান্তি বজায় রাখার বিনীত আহ্বান জানাচ্ছি।”

তিনি আরও জানান, নেপালের পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি বৈঠকে বসছে। মঙ্গলার দিন তিনি বন্যা দুর্গত পাঞ্জাব ও হিমাচল প্রদেশ পরিদর্শনকালে এই মন্তব্য করেন।

এর আগে, সোমবার নেপালে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সংসদ ভবনে হামলার চেষ্টা করেন। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ২০ জন নিহত এবং আরও শত শত মানুষ আহত হন। সহিংসতা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে এবং বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ ঘোষণা করে।

মঙ্গলবার নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাউডেলের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। পদত্যাগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, “সমস্যার সমাধান সহজতর এবং সাংবিধানিকভাবে রাজনৈতিক সমাধানের পথ সুগম করার জন্য পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

বিক্ষোভের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন জানিয়েছে, তাদের আন্দোলন ‘জেন-জি আন্দোলন’ নামে পরিচিত। এ আন্দোলনের লক্ষ্য সরকারের দুর্নীতি, বৈষম্য বৃদ্ধি এবং তরুণদের জন্য অর্থনৈতিক সুযোগের অভাবের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নেপালের প্রতি পাঁচজনের একজন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে এবং তরুণ বেকারত্বের হার ২২ শতাংশের বেশি।

মঙ্গলবার কারফিউ অমান্য করে বিক্ষোভকারীরা টায়ারে আগুন ধরিয়ে, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং রাজনীতিকদের বাড়িঘরে হামলা চালান। প্রধানমন্ত্রী অলির সরকারি বাসভবন ও সিংহ দরবার প্রশাসনিক ভবনের কিছু অংশেও আগুন দেওয়া হয়। ভারী ধোঁয়ার কারণে কাঠমান্ডুর প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়।

অলির পদত্যাগের খবরে উল্লসিত তরুণরা সংসদ ভবনে ঢুকে দেয়ালে ‘আমরা জিতেছি’ স্লোগান লিখে দেন। তবে আন্দোলনের নেতারা সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন এবং জানান, আন্দোলনের লক্ষ্য জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা, সহিংসতা নয়।

২০০৮ সালে ২৩৯ বছরের রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হওয়ার পর থেকে নেপাল রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভুগছে। গত ১৭ বছরে দেশটিতে ১৪টি সরকার ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু কোনো সরকারই পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেনি। অলি গত বছর চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন।

ভারতের জন্য নেপালের স্থিতিশীলতা কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন থাকা সত্ত্বেও, চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”