আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল | ফাইল ছবি
‘কোনো দলের ক্ষমতা হারানোর ভয় চলে গেলে তারা দানবে পরিণত হয়’—এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে ক্ষমতার জবাবদিহি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংযোগ স্পষ্ট করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ১১তম মানবাধিকার সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনের আয়োজন করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, “১৯৯১ থেকে ২০১২-১৩ পর্যন্ত সময়কাল ছিল বাংলাদেশের সেরা সময়। কারণ, তখন নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হতো এবং শান্তিপূর্ণ ক্ষমতার হস্তান্তর নিশ্চিত ছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার শাসনামলে বিশেষ করে ২০১৪ সালের পর থেকে এ ধারা ব্যাহত হয়। একপর্যায়ে দলটি মনে করে ক্ষমতা হারানোর আর ভয় নেই, ফলে তারা দানবীয় রূপ ধারণ করে যা আমরা বিগত সময়ের নানা নিপীড়ন, গুম, খুন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে প্রত্যক্ষ করেছি।
তিনি আরও বলেন, ‘‘মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাষ্ট্রের তিনটি প্রধান অঙ্গ—নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের কাঠামোগত সংস্কার জরুরি। কেবল আইন প্রণয়ন করলেই মানবাধিকার নিশ্চিত হবে না, এর জন্য প্রয়োজন গভীর অনুশীলন ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা।’’
সম্মেলনে আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, শুধু ক্ষতিপূরণ নয়, জুলাই ও তার আগের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এইচআরএসএস-এর চেয়ারপারসন শাহজাদা আল আমিন। বক্তব্য দেন মানবাধিকারকর্মী ও সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা মো. নুর খান, জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. একরামুল হক এবং শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক সাইফুদ্দিন আহমেদ।
সম্মেলনে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার থেকে কয়েকজন সদস্য উপস্থিত থেকে তাদের বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন, যা মুহূর্তে ভারি করে তোলে সম্মেলনস্থল।
সম্মেলনের মাধ্যমে বক্তারা সকলের মধ্যে মানবাধিকারের চর্চা, জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা এবং অবাধ নির্বাচনের জন্য জাতিগতভাবে ঐক্য গঠনের আহ্বান জানান।