সমুদ্র না বন? কার উপর টিকে আছে আমাদের নিঃশ্বাস?

- প্রকাশঃ ০৭:৫০:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫
- / 41
বহু বছর ধরে সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, দক্ষিণ আমেরিকার অ্যামাজন রেইনফরেস্টকে বলা হয় “পৃথিবীর ফুসফুস”। দাবি করা হয়, এই বনভূমি বিশ্বের মোট প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের প্রায় ২০ শতাংশ সরবরাহ করে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে ভিন্ন এক সত্য পৃথিবীর প্রধান অক্সিজেন সরবরাহকারী আসলে মহাসাগরের অতিক্ষুদ্র উদ্ভিদ।
পরিবেশবিষয়ক আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট ‘বিউটি অব প্ল্যানেট’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীর মোট অক্সিজেনের প্রায় ৫০% থেকে ৮০% উৎপাদন করে সামুদ্রিক ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন নামের অতিক্ষুদ্র এককোষী জীব। সূর্যের আলো ও কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করে তারা ফটোসিনথেসিসের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে অক্সিজেন তৈরি করে, যা সরাসরি পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, “প্রোক্লোরোকক্কাস” নামের একটি ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন প্রজাতি একাই পৃথিবীতে তৈরি হওয়া মোট অক্সিজেনের প্রায় ২০% সরবরাহ করে। এর মানে হলো, আমাদের প্রতিটি শ্বাসে ব্যবহৃত অক্সিজেনের প্রতি পাঁচ ভাগের এক ভাগ আসে এই অদৃশ্য জীবের কাছ থেকে।
অন্যদিকে, অ্যামাজন রেইনফরেস্ট নিঃসন্দেহে একটি বিশাল এবং জটিল ইকোসিস্টেম, যা বিপুল পরিমাণে কার্বন ধরে রাখে ও ফটোসিনথেসিসের মাধ্যমে অক্সিজেন তৈরি করে। তবে এই বনাঞ্চলের গাছপালা ও মাটির নিচে থাকা মাইক্রোবায়াল জীবেরাই বেশিরভাগ অক্সিজেন ব্যবহার করে ফেলে। ফলে অ্যামাজন থেকে নিট অক্সিজেন পরিবেশে সরবরাহের পরিমাণ খুবই সীমিত।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞানী ইয়াদভিন্দার মালহি বলেন, “অ্যামাজন বন অক্সিজেন উৎপন্ন করলেও সেই অক্সিজেনের বৃহৎ অংশ বনের নিজস্ব শ্বাস-প্রশ্বাস ও পচনপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে আবার ব্যবহৃত হয়।”
এই প্রশ্নের উত্তর সমুদ্র। বিশেষত, ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন ও অন্যান্য সামুদ্রিক এককোষী উদ্ভিদের সম্মিলিত কার্যকলাপ আমাদের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অক্সিজেন উৎস হিসেবে কাজ করছে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রদূষণ যদি এদের সংখ্যা হ্রাস করে, তবে ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী অক্সিজেন সংকট তৈরি হতে পারে।