ঘরের ভেতর শত্রু রেখে কতদূর এগোবে ইরান?

- প্রকাশঃ ০৫:৫৫:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
- / 78
১৩ জুন, মধ্যরাত। শান্ত তেহরানে হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে শহর। ইসরায়েলের চালানো বিমান হামলায় লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় ইরানের একাধিক সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা। প্রাণ হারান ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) আকাশ প্রতিরক্ষা প্রধান আমির আলী হাজিজাদেহ, আরও কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী।
পারমাণবিক কর্মসূচিকে থামাতে ইসরায়েল যে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ শুরু করেছে, এটিই এ হামলার অংশ বলে দাবি তেল আবিবের। আর এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় পরদিন থেকেই ‘ট্রু প্রমিজ’ নামের প্রতিশোধমূলক অভিযানে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে পাল্টা হামলা শুরু করে ইরান। তেল আবিব, হাইফা ও বাত ইয়ামে হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।
তবে এখন পর্যন্ত এই যুদ্ধের সবচেয়ে বড় মূল্য দিয়েছে ইরান। প্রাণ হারিয়েছেন ২২৪ জন, আহত হয়েছেন হাজারেরও বেশি। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সামরিক ও বেসামরিক উভয়ই আছেন।
তবে ইরানের জন্য এই বাইরের আগ্রাসনের চেয়েও বড় মাথাব্যথার কারণ ঘরের ভেতরের ভূত। বহু বছর ধরে ইরানে গোপনে সক্রিয় রয়েছে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। এতটাই সক্রিয় যে, অতীতে একাধিকবার এই সংস্থার হাতে নিহত হয়েছেন ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীরা।
২০০৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে পাঁচ বছরে পাঁচজন ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করে মোসাদ, এমন অভিযোগ তেহরানের। ২০১৮ সালে তেহরানের গোপন পারমাণবিক তথ্যভাণ্ডার থেকেও বিপুল পরিমাণ তথ্য চুরি করে নিয়ে যায় এই সংস্থা। সেই সময় ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেন তারা প্রায় ৫৫ হাজার গোপন নথি ও ৫৫ হাজার ডিজিটাল ফাইল উদ্ধার করেছে।
ইরান যদিও এই দাবিকে ‘শিশুসুলভ ও হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিল, তবে ২০২০ সালে রাজধানী তেহরানে বুলেটপ্রুফ গাড়িতে বসে থাকা অবস্থায় দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির স্থপতি মোহসেন ফাখরিজাদেহের হত্যাকাণ্ড কিংবা ২০২4 সালে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াহকে কাতারে হত্যা সব কিছুই একটি বড় চিত্রের দিকে ইঙ্গিত করে।
সবশেষ হামলায় ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেই প্রথমে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে ইসরায়েল। এ থেকে একটাই প্রশ্ন উঠে আসে ইরানের সামরিক ও গোয়েন্দা ব্যবস্থায় কি ভেতর থেকেই ফাঁস হচ্ছে তথ্য? সর্ষের ভেতর যদি ভূতই থাকে, তবে বাইরের শত্রু ঠেকানো সম্ভব কতটা?
ইরান এখন পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে প্রতিরোধের চেষ্টা করছে। ব্যালিস্টিক ও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলকে ঘায়েল করতে চাইছে। কিন্তু এই বহিরাগত সংঘাতের পাশাপাশি ঘরে বসে শত্রুর বীজ ধারণ করে দেশটি কতদূর টিকতে পারবে সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।