ঢাকা ০৮:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের লাশ দিয়ে নির্মাণ করেছে

জুলাই-আগস্টের রক্তে ভেজা যে পথ ধরে আজ আপনি মুক্ত পরিবেশে সভা করেন

ছবি: মো. রাকিব শিকদার, সাধারণ সম্পাদক, সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল


জুলাই-আগস্টের রক্তাক্ত পথ বেয়ে আজ যারা মুক্ত পরিবেশে সভা-সমাবেশ করছেন, তাদের মনে রাখা উচিত এই পথ কেবল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তৈরি করেনি; এই পথে লাশ হয়ে শুয়ে থেকেছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও।

দীর্ঘদিন ধরে একটি ধ্যানধারণা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নাকি আত্মকেন্দ্রিক, স্বতন্ত্র মনোজগতের বাসিন্দা। আবাসিক হল নেই, গুণগত শিক্ষক সংকট আছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সনদ-সর্বস্ব এমন নানা অভিযোগের ভিড়ে তারা যেন দেশের প্রতি দায়বোধহীন এক শ্রেণি ছাত্রে পরিণত হয়েছে। আদর্শ, মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক চর্চায় তাদের দেখা যায় না বলেই অভিযোগ।

অন্যদিকে সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে ‘আন্দোলনের প্রাণ’, ‘দেশের রক্ষাকবচ’ হিসেবেই মনে করা হয়। আবাসিক জীবনের সুবিধায় তারা তাত্ত্বিক জ্ঞান ছাড়াও বাস্তবজীবনের প্রস্তুতি লাভ করে। সংকটে-সংগ্রামে, গণআন্দোলনে বুক পেতে দেয়।

কিন্তু ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী গণআন্দোলন এই ভ্রান্ত ধারণার ভীত নাড়িয়ে দিয়েছে। সেখানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাই প্রমাণ করেছে দেশের প্রয়োজনে তারাও প্রস্তুত, প্রয়োজনে জীবন দিয়েও। কোনো দ্বিধা, কোনো সঙ্কোচ ছিল না। বুকের তাজা রক্ত ও সাহসিকতা দিয়ে তারা ইতিহাসে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে।

তারপরও দুঃখজনকভাবে, এই আত্মত্যাগের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে একটি চক্র এখনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবহেলা করছে। কেউ কেউ ইউজিসির দোহাই দিয়ে প্রাইভেট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার চেষ্টায় লিপ্ত। উদ্দেশ্য একটাই এই শিক্ষার্থীদের মনোবল ভেঙে দেওয়া।

তারা জানে, যদি এই তরুণদের রাজনৈতিক সচেতনতা দমন করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে কোনো স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তারা আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। কোনো নেতৃত্বের প্রশ্নে তারা থাকবে না। দেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও তারা আর প্রবেশ করতে পারবে না।

কিন্তু সেই ষড়যন্ত্রকারীরা ভুলে গেছে এই প্রজন্ম জানে কীভাবে রাষ্ট্রের জন্য জীবন বিলিয়ে দিতে হয়। ভুলে গেছে, এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাই গণঅভ্যুত্থানের দিনে নিজের জীবনের মায়া না করে রক্ত দিয়েছে, যেন বাংলাদেশ মুক্ত হতে পারে ফ্যাসিবাদের ছোবল থেকে।

একজন সচেতন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি বলব আজ সময় এসেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণদের নতুন করে আত্মপ্রকাশের। আপনাদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে, নিজেদের অধিকার সম্পর্কে জানতে হবে এবং নিজস্ব নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে।

রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের প্রতিও আমার আহ্বান আপনারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অবজ্ঞা করবেন না। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে তারা যেমন রক্ত দিতে পারে, তেমনি আগামী দিনের নেতৃত্বও তারা দিতে পারবে। বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাখতে হলে এই তরুণদের সাহস, আদর্শ ও প্রজ্ঞাকে কাজে লাগাতেই হবে। ২০২৪-এর পরের বাংলাদেশ গঠনে এই তরুণদের আর পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”

জনপ্রিয় সংবাদ

মাভাবিপ্রবির সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের লাশ দিয়ে নির্মাণ করেছে

জুলাই-আগস্টের রক্তে ভেজা যে পথ ধরে আজ আপনি মুক্ত পরিবেশে সভা করেন

প্রকাশঃ ০১:৪১:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

ছবি: মো. রাকিব শিকদার, সাধারণ সম্পাদক, সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল


জুলাই-আগস্টের রক্তাক্ত পথ বেয়ে আজ যারা মুক্ত পরিবেশে সভা-সমাবেশ করছেন, তাদের মনে রাখা উচিত এই পথ কেবল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তৈরি করেনি; এই পথে লাশ হয়ে শুয়ে থেকেছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও।

দীর্ঘদিন ধরে একটি ধ্যানধারণা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নাকি আত্মকেন্দ্রিক, স্বতন্ত্র মনোজগতের বাসিন্দা। আবাসিক হল নেই, গুণগত শিক্ষক সংকট আছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সনদ-সর্বস্ব এমন নানা অভিযোগের ভিড়ে তারা যেন দেশের প্রতি দায়বোধহীন এক শ্রেণি ছাত্রে পরিণত হয়েছে। আদর্শ, মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক চর্চায় তাদের দেখা যায় না বলেই অভিযোগ।

অন্যদিকে সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে ‘আন্দোলনের প্রাণ’, ‘দেশের রক্ষাকবচ’ হিসেবেই মনে করা হয়। আবাসিক জীবনের সুবিধায় তারা তাত্ত্বিক জ্ঞান ছাড়াও বাস্তবজীবনের প্রস্তুতি লাভ করে। সংকটে-সংগ্রামে, গণআন্দোলনে বুক পেতে দেয়।

কিন্তু ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী গণআন্দোলন এই ভ্রান্ত ধারণার ভীত নাড়িয়ে দিয়েছে। সেখানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাই প্রমাণ করেছে দেশের প্রয়োজনে তারাও প্রস্তুত, প্রয়োজনে জীবন দিয়েও। কোনো দ্বিধা, কোনো সঙ্কোচ ছিল না। বুকের তাজা রক্ত ও সাহসিকতা দিয়ে তারা ইতিহাসে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে।

তারপরও দুঃখজনকভাবে, এই আত্মত্যাগের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে একটি চক্র এখনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবহেলা করছে। কেউ কেউ ইউজিসির দোহাই দিয়ে প্রাইভেট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার চেষ্টায় লিপ্ত। উদ্দেশ্য একটাই এই শিক্ষার্থীদের মনোবল ভেঙে দেওয়া।

তারা জানে, যদি এই তরুণদের রাজনৈতিক সচেতনতা দমন করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে কোনো স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তারা আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। কোনো নেতৃত্বের প্রশ্নে তারা থাকবে না। দেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও তারা আর প্রবেশ করতে পারবে না।

কিন্তু সেই ষড়যন্ত্রকারীরা ভুলে গেছে এই প্রজন্ম জানে কীভাবে রাষ্ট্রের জন্য জীবন বিলিয়ে দিতে হয়। ভুলে গেছে, এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাই গণঅভ্যুত্থানের দিনে নিজের জীবনের মায়া না করে রক্ত দিয়েছে, যেন বাংলাদেশ মুক্ত হতে পারে ফ্যাসিবাদের ছোবল থেকে।

একজন সচেতন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি বলব আজ সময় এসেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণদের নতুন করে আত্মপ্রকাশের। আপনাদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে, নিজেদের অধিকার সম্পর্কে জানতে হবে এবং নিজস্ব নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে।

রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের প্রতিও আমার আহ্বান আপনারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অবজ্ঞা করবেন না। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে তারা যেমন রক্ত দিতে পারে, তেমনি আগামী দিনের নেতৃত্বও তারা দিতে পারবে। বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাখতে হলে এই তরুণদের সাহস, আদর্শ ও প্রজ্ঞাকে কাজে লাগাতেই হবে। ২০২৪-এর পরের বাংলাদেশ গঠনে এই তরুণদের আর পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”