ঢাকা ১২:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পি.আর. (PR) সিস্টেম: গণতন্ত্রের মুখোশে ভোটবিহীন গণনাটক

মোঃ রাকিব শিকদার | ঢাকা
  • প্রকাশঃ ০৮:১৩:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
  • / 15

বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে সংসদীয় নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। এর মধ্যে একটি বহুল আলোচিত পদ্ধতি হলো অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি, সংক্ষেপে পি.আর. (Proportional Representation) সিস্টেম।
অনেকে একে আধুনিক গণতন্ত্রের ‘আধুনিক সংস্করণ’ হিসেবে দেখতে চান। কিন্তু বাস্তবে পি.আর. পদ্ধতি কতটা গণতান্ত্রিক, তা নিয়ে আজ গভীর সন্দেহের অবকাশ তৈরি হয়েছে।

পি.আর. পদ্ধতির মূল ফাঁকিটা কোথায়? এখানে ভোটার সরাসরি কোনো প্রার্থীকে ভোট দেন না। বরং ভোট দেন একটি দলকে। এরপর সেই দল নিজের মতো করে একটি ‘প্রার্থী তালিকা’ তৈরি করে। এই তালিকায় থাকে দলের একনিষ্ঠ নেতা-কর্মী, আত্মীয়স্বজন, চাচা-খালু, ভাগিনা-ভাতিজা সবাই! নির্বাচনে দল যত আসন পাবে, সেই অনুপাতে তালিকার উপর থেকে নাম ধরে ধরে বেছে নেওয়া হবে কে হবেন এমপি!

আপনি হয়তো ভোট দেবেন আপনার এলাকার জনবান্ধব নেতাকে সংসদে পাঠানোর আশায়। কিন্তু আপনার ভোটে জেতা আসনে এমপি হবেন দলের চেয়ারম্যানের মামা যিনি কোনো দিন ভোটকেন্দ্রই দেখেননি! এভাবে ভোটার হয়ে পড়বেন এক প্রকার ‘অদৃশ্য অনুচর’। আর আসল ক্ষমতা চলে যাবে গুটিকয়েক দলীয় প্রধানের হাতে।

পি.আর. সিস্টেমে সাংসদ পদ হয়ে যাবে এক প্রকার ‘পুরস্কার’। দলের সেন্ট্রাল কমিটিতে ২০ বছর ধরে চা-পানি, তেল-মালিশ যিনি করেছেন, তিনিই একদিন সংসদে হুইপের নির্দেশে হাত তুলবেন। অথচ এই সাংসদের সঙ্গে আপনার এলাকার উন্নয়ন, সমস্যার সমাধান কোনো যোগাযোগই থাকবে না।

যেকোনো পাঁচজন মানুষ মিলে দল বানিয়ে সংসদে ঢুকে পড়বে ট্রাক পার্টি, ফেসবুক বিপ্লবী সংঘ, গুপ্ত বাংলা সংঘ এমন শত দল জন্ম নেবে। ইউটিউব লাইভে বলবে, “আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি, প্লিজ সাবস্ক্রাইব করেন!” অথচ জনগণ জানেই না এরা কে!

গ্রামের মাটি ছুঁয়ে বড় হওয়া, মানুষের পাশে থাকা এমন নেতারাও আর এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখবে না। কারণ এমপি হবেন সেই নেতা, যিনি ‘তেল দিয়ে’ নেতা হয়েছেন ভোট দিয়ে নয়।

জনগণের ভোট গণনার চেয়ে বড় কাজ হবে দল কত ভোট পেল, আর তালিকার কত নম্বর লোকটি এমপি হবে এই হিসাব রাখা। জনগণের ভোট থাকবে, কিন্তু নির্বাচিত প্রতিনিধি নির্বাচন করার ক্ষমতা থাকবে না!বাংলাদেশের জনগণই এ দেশের সকল ক্ষমতার উৎস। ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ভোটারকে প্রহসনের মুখোশে আটকে রাখা এ দেশের জনগণ মেনে নেবে না। পি.আর. পদ্ধতি আসলে ভোটবিহীন, দায়হীন, দলনির্ভর নেতাদের বাঁচানোর চক্রান্ত মাত্র।

যারা জানে, জনগণ তাদের ভোট দেবে না, তারা পি.আর. সিস্টেমের মুখোশ পরে ভোটের মাঠ থেকে পালানোর পথ খুঁজছে।বাংলাদেশের মানুষ ঠিকই জানে, নেতা বানাবে জনগণ দলীয় প্রধানের তালিকাভিত্তিক হুকুমে নয়। যিনি সত্যিকারের নেতা হতে চান, তাকে জনগণের কাছে যেতে হবে। ভোট চাইতে হবে, জবাবদিহি করতে হবে, জনগণের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। পি.আর. পদ্ধতিতে তা সম্ভব নয় এটি ভোটারের অদৃশ্য কারাগার। তাই বাংলাদেশের জনগণ পি.আর. নামক গণনাটক কখনোই মেনে নেবে না।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”

শেয়ার করুন

পি.আর. (PR) সিস্টেম: গণতন্ত্রের মুখোশে ভোটবিহীন গণনাটক

প্রকাশঃ ০৮:১৩:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে সংসদীয় নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। এর মধ্যে একটি বহুল আলোচিত পদ্ধতি হলো অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি, সংক্ষেপে পি.আর. (Proportional Representation) সিস্টেম।
অনেকে একে আধুনিক গণতন্ত্রের ‘আধুনিক সংস্করণ’ হিসেবে দেখতে চান। কিন্তু বাস্তবে পি.আর. পদ্ধতি কতটা গণতান্ত্রিক, তা নিয়ে আজ গভীর সন্দেহের অবকাশ তৈরি হয়েছে।

পি.আর. পদ্ধতির মূল ফাঁকিটা কোথায়? এখানে ভোটার সরাসরি কোনো প্রার্থীকে ভোট দেন না। বরং ভোট দেন একটি দলকে। এরপর সেই দল নিজের মতো করে একটি ‘প্রার্থী তালিকা’ তৈরি করে। এই তালিকায় থাকে দলের একনিষ্ঠ নেতা-কর্মী, আত্মীয়স্বজন, চাচা-খালু, ভাগিনা-ভাতিজা সবাই! নির্বাচনে দল যত আসন পাবে, সেই অনুপাতে তালিকার উপর থেকে নাম ধরে ধরে বেছে নেওয়া হবে কে হবেন এমপি!

আপনি হয়তো ভোট দেবেন আপনার এলাকার জনবান্ধব নেতাকে সংসদে পাঠানোর আশায়। কিন্তু আপনার ভোটে জেতা আসনে এমপি হবেন দলের চেয়ারম্যানের মামা যিনি কোনো দিন ভোটকেন্দ্রই দেখেননি! এভাবে ভোটার হয়ে পড়বেন এক প্রকার ‘অদৃশ্য অনুচর’। আর আসল ক্ষমতা চলে যাবে গুটিকয়েক দলীয় প্রধানের হাতে।

পি.আর. সিস্টেমে সাংসদ পদ হয়ে যাবে এক প্রকার ‘পুরস্কার’। দলের সেন্ট্রাল কমিটিতে ২০ বছর ধরে চা-পানি, তেল-মালিশ যিনি করেছেন, তিনিই একদিন সংসদে হুইপের নির্দেশে হাত তুলবেন। অথচ এই সাংসদের সঙ্গে আপনার এলাকার উন্নয়ন, সমস্যার সমাধান কোনো যোগাযোগই থাকবে না।

যেকোনো পাঁচজন মানুষ মিলে দল বানিয়ে সংসদে ঢুকে পড়বে ট্রাক পার্টি, ফেসবুক বিপ্লবী সংঘ, গুপ্ত বাংলা সংঘ এমন শত দল জন্ম নেবে। ইউটিউব লাইভে বলবে, “আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি, প্লিজ সাবস্ক্রাইব করেন!” অথচ জনগণ জানেই না এরা কে!

গ্রামের মাটি ছুঁয়ে বড় হওয়া, মানুষের পাশে থাকা এমন নেতারাও আর এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখবে না। কারণ এমপি হবেন সেই নেতা, যিনি ‘তেল দিয়ে’ নেতা হয়েছেন ভোট দিয়ে নয়।

জনগণের ভোট গণনার চেয়ে বড় কাজ হবে দল কত ভোট পেল, আর তালিকার কত নম্বর লোকটি এমপি হবে এই হিসাব রাখা। জনগণের ভোট থাকবে, কিন্তু নির্বাচিত প্রতিনিধি নির্বাচন করার ক্ষমতা থাকবে না!বাংলাদেশের জনগণই এ দেশের সকল ক্ষমতার উৎস। ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ভোটারকে প্রহসনের মুখোশে আটকে রাখা এ দেশের জনগণ মেনে নেবে না। পি.আর. পদ্ধতি আসলে ভোটবিহীন, দায়হীন, দলনির্ভর নেতাদের বাঁচানোর চক্রান্ত মাত্র।

যারা জানে, জনগণ তাদের ভোট দেবে না, তারা পি.আর. সিস্টেমের মুখোশ পরে ভোটের মাঠ থেকে পালানোর পথ খুঁজছে।বাংলাদেশের মানুষ ঠিকই জানে, নেতা বানাবে জনগণ দলীয় প্রধানের তালিকাভিত্তিক হুকুমে নয়। যিনি সত্যিকারের নেতা হতে চান, তাকে জনগণের কাছে যেতে হবে। ভোট চাইতে হবে, জবাবদিহি করতে হবে, জনগণের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। পি.আর. পদ্ধতিতে তা সম্ভব নয় এটি ভোটারের অদৃশ্য কারাগার। তাই বাংলাদেশের জনগণ পি.আর. নামক গণনাটক কখনোই মেনে নেবে না।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”