একজন নূরা পাগলাঃ অতঃপর

- প্রকাশঃ ১২:৪০:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / 6
গোলাম মোস্তফা, কলামিস্ট ও ফিচার লেখক | ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ ও জঘন্য ঘটনা পুরো জাতিকে স্তম্ভিত করেছে—নূরা পাগলা নামক এক ব্যক্তির মৃতদেহ মাজার থেকে তুলে নিয়ে তা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি শুধু আইন ভঙ্গ নয়, এটি মানবিক, ধর্মীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের এক চরম অবক্ষয়। মৃত মানুষও ইসলামী বিধি মোতাবেক মর্যাদা পায়, এবং সেই মর্যাদা রক্ষা করা আমাদের নৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক দায়িত্ব। আমরা যারা এই বর্বরতা করেছি, তারা কেবল মৃত ব্যক্তির পরিবারকে নয়, পুরো সমাজকে আহত করেছি।
এ ধরনের ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আইন প্রয়োগ যথাযথভাবে না হওয়ায়, সামাজিক চেতনার বিকাশ না হওয়ায় মানবিকতার অভাব থেকেই এমন জঘন্যতম কাজ সংঘটিত হয়েছে। মৃতদেহের প্রতি শ্রদ্ধা আমাদের ধর্মীয় সংস্কৃতি, মানবিক এবং নৈতিকতার মৌলিক অংশ। এ ধরনের কুরুচিপূর্ণ কর্মকাণ্ড সমাজে ন্যায়, শান্তি ও নৈতিকতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে, ফেলবে।
সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনকে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। অপরাধীদের শনাক্ত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কেউ এমন বর্বরতা করার সাহস না পায়। পাশাপাশি, আমাদের সমাজে নৈতিক শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে এই ধরনের নৃশংসতা পুনরায় সংঘটিত না হয়।
আমরা যদি আজও নির্বিকার থাকি, তাহলে শুধু মৃত ব্যক্তির মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে না, পুরো সমাজের নৈতিক ভিত্তিই ভেঙে পড়বে। এই ঘটনার মাধ্যমে আমাদের প্রত্যেককে উপলব্ধি করতে হবে—মানবিকতা ছাড়া কোনো সভ্যতা টিকে থাকতে পারে না। আইন, নৈতিকতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও মানবিক চেতনাই একমাত্র সুরক্ষার মাধ্যম, যা আমাদেরকে এমন বর্বরতা থেকে রক্ষা করতে পারে।
আমরা শৈশব থেকে জেনে আসছি কবরের পাশ দিয়ে গেলে কবরবাসীকে সালাম দিতে হয়। সে ভালো কিংবা মন্দ সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। তার পরিচয় সে কবরবাসী।
আমরা সকলেই জানি মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থ করার পর সে যদি পাপী হয় তাহলে মহান আল্লাহ পাকের তরফ থেকে শাস্তি শুরু হয়ে যাবে। আর যদি পণ্যবান হয় তাহলে আল্লাহ পাকের তরফ থেকে পুরস্কৃত হবে। সে তখন সম্পূর্ণভাবে মহান আল্লাহ পাকের নির্দেশে ফেরেশতাদের দায়িত্বে রয়েছে। ওখানে আমাদের কোন কাজ নেই।
হাদীস শরীফে এসেছে, এক ইহুদির লাশ বহন করে নিয়ে যাচ্ছিল এক দল ইহুদি। সে লাশ দেখে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে দাঁড়ালেন। সাহাবীগণ বললেন হুজুর এটা তো ইহুদির মরদেহ। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তাতে কি হয়েছে, সে কি মানুষ নয়।
(বুখারী শরীফ হাদিস নাম্বার ১৩১২) – (মুসলিম শরীফ হাদিস নং ৯৬১)
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ পাক বলেন, হে হাবিব আমি আপনাকে সমগ্র জগতের জন্য রহমত হিসাবে প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়া আয়াত ১০৭) তিনি আমাদের জন্য রহমত তিনি আমাদের জন্য সুপারিশকারী।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবন আদর্শই পবিত্র কুরআন শরীফের সরল ব্যাখ্যা। তাই দুনিয়ার সকল মুসলমানদের মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন আদর্শ অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে সর্বাঙ্গীন মুক্তি। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে হেদায়েত দান করুন। আমিন।