বাউল–ফকিরের জটা কেটে দেওয়া কি সেবা, নাকি বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ?

- প্রকাশঃ ০১:৩৭:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / 39
অসহায়দের পরিচ্ছন্ন করার উদ্যোগ প্রশংসিত হলেও আধ্যাত্মিক সাধকদের ওপর জোর–জবরদস্তি ঘিরে উঠছে প্রশ্ন | ছবি: সংগৃহীত
রাস্তার অসহায় মানুষদের গোসল করিয়ে, চুল–নখ কেটে পরিষ্কার করে নতুন পোশাক পরিয়ে দেওয়ার মতো মানবিক উদ্যোগ বহু আগে থেকেই সমাজে প্রশংসিত। প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশেও অসংখ্য তরুণ ও স্বেচ্ছাসেবী দল এই কাজে এগিয়ে এসেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব কার্যক্রমের ভিডিও মুহূর্তেই ভাইরাল হয় এবং তা দেখে অনেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। নিঃসন্দেহে এটি মানবসেবার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিশেষ করে, বাউল–ফকির বা আধ্যাত্মিক সাধকদের জটা জোর করে কেটে দেওয়া কিংবা গেরুয়া পোশাক বদলে দেওয়ার ঘটনাকে ঘিরে তুমুল সমালোচনা চলছে।
সমাজে ‘অপরিচ্ছন্ন’ বা ‘পাগল’ হিসেবে পরিচিত মানুষদের পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করে মূল স্রোতে ফেরানোর প্রচেষ্টায় কোনো আপত্তি নেই। তাদের মশা–মাছি বা পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে মুক্তি দেওয়া অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যখন এই উদ্যোগের লক্ষ্যবস্তু হয় বাউল, ফকির কিংবা পীর–দরবেশ, তখন প্রশ্ন ওঠে—এটি কি সত্যিই সেবা, না কি ব্যক্তির ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ?
বাউল ও আধ্যাত্মিক সাধকদের কাছে জটা বা বিশেষ বেশভূষা কেবল বাহ্যিক সাজসজ্জা নয়। এটি তাদের দর্শন, বিশ্বাস এবং আত্মপরিচয়ের প্রতীক। সমাজের চোখে পোশাক ছেঁড়া বা চুল জটপাকানো ‘নোংরা’ মনে হলেও তাদের কাছে তা ত্যাগ ও সাধনার চিহ্ন। সেই বিশ্বাসের বিরুদ্ধে গিয়ে জোর করে পরিবর্তন চাপিয়ে দেওয়া মানবিকতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, বরং তা অবমাননার পর্যায়ে পড়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানবসেবা কখনো একতরফা হতে পারে না। মানসিকভাবে অসুস্থ কাউকে চিকিৎসার অংশ হিসেবে পরিচ্ছন্ন করা এক বিষয়, কিন্তু আধ্যাত্মিক চর্চার অংশ হিসেবে ধারণ করা জটা কেটে দেওয়া বা পোশাক ছিঁড়ে ফেলা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। সেবার নামে যদি কারো বিশ্বাস বা জীবনযাপনকে অবজ্ঞা করা হয়, তবে তা প্রকৃত অর্থে সহমর্মিতা নয়।
মানবিকতা মানে সম্মান ও সহানুভূতির সঙ্গে সাহায্য করা। সত্যিকারের সেবাকর্মীরা মানুষের কষ্ট দূর করার পাশাপাশি তাদের বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও পছন্দকেও সম্মান করেন। কাউকে জোর করে ‘স্বাভাবিক’ বানানোর চেষ্টার বদলে অনুমতি নিয়ে সহযোগিতা করাই আসল সেবা।
তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর উচিত তাদের কর্মীদের ব্যবহার ও ভাষার ওপর আরও গুরুত্ব দেওয়া, যাতে সেবার মহৎ উদ্দেশ্য কোনোভাবেই উগ্রতা, অহংকার বা জবরদস্তির কারণে ক্ষুণ্ন না হয়।