ঢাকা ১১:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মেট্রোরেলে নিরাপত্তাহীনতা: অবহেলার মাশুল

গোলাম মোস্তফা
  • প্রকাশঃ ১২:৩৪:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
  • / 16

টাইলসের ফুটপাতে পড়ে আছে আবুল কালামের নিথর রক্তাক্ত দেহ। তার স্ত্রীর কান্না বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে, আর শিশুটি বুঝতেই পারছে না কী হারিয়েছে | ছবি: প্রজন্ম কথা


রাজধানীর বুকে আধুনিক নগর পরিবহনের প্রতীক হিসেবে গড়ে ওঠা ঢাকা মেট্রোরেল এখন পর্যন্ত নাগরিকদের কাছে এক গর্বের প্রতীক। কিন্তু অতি সম্প্রতি ফার্মগেট মেট্রোরেল স্টেশনের কাছে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনা সেই গর্বকে গভীর শোকে পরিণত করেছে। রবিবার, ২৬ অক্টোবর দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে মেট্রোরেলের পিলার থেকে খুলে পড়া একটি বেয়ারিং প্যাডের আঘাতে আবুল কালাম (৩৬) নামে এক তরুণের মৃত্যু ঘটে। এমন একটি দুর্ঘটনা কেবল একটি পরিবারের নয়, পুরো সমাজের জন্যই বেদনাদায়ক ও অশোভন এক সতর্কবার্তা।

বেয়ারিং প্যাড হলো মেট্রোরেলের অবকাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা রেলপথের ভারসাম্য ও কম্পন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এই ধরনের উপকরণ আলগা হয়ে নিচে পড়ে যাওয়া কোনোভাবেই সাধারণ ঘটনা নয়; এটি সরাসরি রক্ষণাবেক্ষণের ত্রুটি, তদারকির ঘাটতি এবং নিরাপত্তা সংস্কৃতির দুর্বলতার স্পষ্ট প্রমাণ। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো—এটি প্রথম ঘটনা নয়। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বরও একইভাবে একটি বেয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছিল, যদিও তখন প্রাণহানি ঘটেনি। কিন্তু কোনো দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা না নেওয়াই যে এই মৃত্যুর কারণ, তা স্পষ্ট হয়ে গেছে।


আরও পড়ুন

মাজার নিয়ে বিতর্ক : শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি


এই দুর্ঘটনা আমাদের সামনে নগর উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত নিরাপত্তা নিয়ে এক গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। আমরা কি কেবল প্রকল্প শেষ করার দৌড়ে নিরাপত্তার প্রশ্নটি উপেক্ষা করছি? প্রতিদিন হাজারো মানুষ যে মেট্রোরেল ব্যবহার করেন, তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কতটা মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে? এমন একটি অত্যাধুনিক ব্যবস্থায় যেখানে প্রতিটি যন্ত্রাংশ নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করার কথা, সেখানে বারবার একই ধরনের ত্রুটি ঘটায় দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।

মেট্রোরেলের মতো বৃহৎ প্রকল্পে নিয়মিত মেইনটেন্যান্স, গুণমান পরীক্ষা এবং সুরক্ষা নিরীক্ষা (Safety Audit) বাধ্যতামূলক। অথচ বাস্তবে দেখা যায়, অনেক সময়ই এসব কাজ কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকে। প্রকল্প শেষ হওয়ার পর ‘অপারেশনাল সেফটি’ নিয়ে যে নিয়মিত মনিটরিং বা পর্যবেক্ষণের কথা বলা হয়, তার বাস্তবায়ন খুবই দুর্বল। এ অবস্থায় রাজধানীর সবচেয়ে ব্যস্ত এলাকাগুলোর একটিতে মেট্রোরেলের অংশ খুলে পড়ে মৃত্যুর ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা নয়, এটি ব্যবস্থাপনাগত ব্যর্থতা।

এখন সময় এসেছে, কর্তৃপক্ষকে ‘দুঃখপ্রকাশ’ বা ‘তদন্ত চলছে’—এই সাধারণ প্রতিক্রিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব ও দায়বদ্ধ পদক্ষেপ গ্রহণের। প্রথমত, অবিলম্বে এই দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। শুধু প্রকৌশলগত নয়, প্রশাসনিক ও রক্ষণাবেক্ষণজনিত ব্যর্থতাগুলোকেও চিহ্নিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রতিটি স্টেশনের ওভারহেড অংশে নিয়মিত সেফটি চেক ও লোড টেস্টিং নিশ্চিত করতে হবে। এতে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী পরিদর্শন সংস্থা যুক্ত করা যেতে পারে।

তৃতীয়ত, মানবজীবনের নিরাপত্তা যেন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায়, সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে। প্রকল্পের পরিচালনাকারী সংস্থা ও মেট্রোরেলের রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিটের মধ্যে দায়বদ্ধতার চেইন স্পষ্ট করতে হবে—কে কোন দায়িত্বে, কোন সময়কালে মেইনটেন্যান্স না করায় এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার উত্তর দিতে হবে। কেবল ‘অজানা ত্রুটি’ বলে দায় এড়ানোর প্রবণতা রোধ করতে হবে।


আরও পড়ুন

একজন নূরা পাগলাঃ অতঃপর


চতুর্থত, এই ধরনের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি মানবিক সহায়তা দেওয়া জরুরি। নিহত আবুল কালামের পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা ও ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা উচিত। কিন্তু ক্ষতিপূরণ কোনোভাবেই প্রাণহানির বিকল্প হতে পারে না; প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনা।

আমরা ভুলে গেলে চলবে না—মেট্রোরেল কেবল একটি যানবাহন নয়, এটি আমাদের জাতীয় ভাবমূর্তির অংশ। উন্নয়নের প্রতিটি ধাপেই নিরাপত্তা, গুণমান ও মানবজীবনের মূল্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। উন্নয়ন তখনই অর্থবহ হয় যখন সেটি নিরাপদ, টেকসই ও মানুষের জন্য কল্যাণকর হয়।

মেট্রোরেলের এই দুর্ঘটনা আমাদের সতর্ক করছে—উন্নয়নের কাঠামো নয়, নিরাপত্তার ভিত্তিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত হবে ঘটনাটিকে একটি একক ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ হিসেবে না দেখে এটি থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং অবকাঠামোগত নিরাপত্তা ব্যবস্থার পুনর্মূল্যায়ন করা। অন্যথায়, আগামী দিনে আরও বড় দুর্ঘটনা রোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

ফার্মগেটের মেট্রোরেল দুর্ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; এটি আমাদের নগর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থার গভীর ত্রুটির প্রতিচ্ছবি। আজ যদি যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে উন্নয়নের প্রতীক মেট্রোরেলই পরিণত হতে পারে নাগরিক আতঙ্কের প্রতীকে। এখনই সময়—অবহেলার নয়, জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের।

 – গোলাম মোস্তফা, ফিচার্স রাইটার ও কলামিস্ট

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”

শেয়ার করুন

মেট্রোরেলে নিরাপত্তাহীনতা: অবহেলার মাশুল

প্রকাশঃ ১২:৩৪:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

টাইলসের ফুটপাতে পড়ে আছে আবুল কালামের নিথর রক্তাক্ত দেহ। তার স্ত্রীর কান্না বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে, আর শিশুটি বুঝতেই পারছে না কী হারিয়েছে | ছবি: প্রজন্ম কথা


রাজধানীর বুকে আধুনিক নগর পরিবহনের প্রতীক হিসেবে গড়ে ওঠা ঢাকা মেট্রোরেল এখন পর্যন্ত নাগরিকদের কাছে এক গর্বের প্রতীক। কিন্তু অতি সম্প্রতি ফার্মগেট মেট্রোরেল স্টেশনের কাছে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনা সেই গর্বকে গভীর শোকে পরিণত করেছে। রবিবার, ২৬ অক্টোবর দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে মেট্রোরেলের পিলার থেকে খুলে পড়া একটি বেয়ারিং প্যাডের আঘাতে আবুল কালাম (৩৬) নামে এক তরুণের মৃত্যু ঘটে। এমন একটি দুর্ঘটনা কেবল একটি পরিবারের নয়, পুরো সমাজের জন্যই বেদনাদায়ক ও অশোভন এক সতর্কবার্তা।

বেয়ারিং প্যাড হলো মেট্রোরেলের অবকাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা রেলপথের ভারসাম্য ও কম্পন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এই ধরনের উপকরণ আলগা হয়ে নিচে পড়ে যাওয়া কোনোভাবেই সাধারণ ঘটনা নয়; এটি সরাসরি রক্ষণাবেক্ষণের ত্রুটি, তদারকির ঘাটতি এবং নিরাপত্তা সংস্কৃতির দুর্বলতার স্পষ্ট প্রমাণ। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো—এটি প্রথম ঘটনা নয়। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বরও একইভাবে একটি বেয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছিল, যদিও তখন প্রাণহানি ঘটেনি। কিন্তু কোনো দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা না নেওয়াই যে এই মৃত্যুর কারণ, তা স্পষ্ট হয়ে গেছে।


আরও পড়ুন

মাজার নিয়ে বিতর্ক : শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি


এই দুর্ঘটনা আমাদের সামনে নগর উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত নিরাপত্তা নিয়ে এক গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। আমরা কি কেবল প্রকল্প শেষ করার দৌড়ে নিরাপত্তার প্রশ্নটি উপেক্ষা করছি? প্রতিদিন হাজারো মানুষ যে মেট্রোরেল ব্যবহার করেন, তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কতটা মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে? এমন একটি অত্যাধুনিক ব্যবস্থায় যেখানে প্রতিটি যন্ত্রাংশ নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করার কথা, সেখানে বারবার একই ধরনের ত্রুটি ঘটায় দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।

মেট্রোরেলের মতো বৃহৎ প্রকল্পে নিয়মিত মেইনটেন্যান্স, গুণমান পরীক্ষা এবং সুরক্ষা নিরীক্ষা (Safety Audit) বাধ্যতামূলক। অথচ বাস্তবে দেখা যায়, অনেক সময়ই এসব কাজ কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকে। প্রকল্প শেষ হওয়ার পর ‘অপারেশনাল সেফটি’ নিয়ে যে নিয়মিত মনিটরিং বা পর্যবেক্ষণের কথা বলা হয়, তার বাস্তবায়ন খুবই দুর্বল। এ অবস্থায় রাজধানীর সবচেয়ে ব্যস্ত এলাকাগুলোর একটিতে মেট্রোরেলের অংশ খুলে পড়ে মৃত্যুর ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা নয়, এটি ব্যবস্থাপনাগত ব্যর্থতা।

এখন সময় এসেছে, কর্তৃপক্ষকে ‘দুঃখপ্রকাশ’ বা ‘তদন্ত চলছে’—এই সাধারণ প্রতিক্রিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব ও দায়বদ্ধ পদক্ষেপ গ্রহণের। প্রথমত, অবিলম্বে এই দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। শুধু প্রকৌশলগত নয়, প্রশাসনিক ও রক্ষণাবেক্ষণজনিত ব্যর্থতাগুলোকেও চিহ্নিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রতিটি স্টেশনের ওভারহেড অংশে নিয়মিত সেফটি চেক ও লোড টেস্টিং নিশ্চিত করতে হবে। এতে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী পরিদর্শন সংস্থা যুক্ত করা যেতে পারে।

তৃতীয়ত, মানবজীবনের নিরাপত্তা যেন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায়, সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে। প্রকল্পের পরিচালনাকারী সংস্থা ও মেট্রোরেলের রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিটের মধ্যে দায়বদ্ধতার চেইন স্পষ্ট করতে হবে—কে কোন দায়িত্বে, কোন সময়কালে মেইনটেন্যান্স না করায় এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার উত্তর দিতে হবে। কেবল ‘অজানা ত্রুটি’ বলে দায় এড়ানোর প্রবণতা রোধ করতে হবে।


আরও পড়ুন

একজন নূরা পাগলাঃ অতঃপর


চতুর্থত, এই ধরনের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি মানবিক সহায়তা দেওয়া জরুরি। নিহত আবুল কালামের পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা ও ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা উচিত। কিন্তু ক্ষতিপূরণ কোনোভাবেই প্রাণহানির বিকল্প হতে পারে না; প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনা।

আমরা ভুলে গেলে চলবে না—মেট্রোরেল কেবল একটি যানবাহন নয়, এটি আমাদের জাতীয় ভাবমূর্তির অংশ। উন্নয়নের প্রতিটি ধাপেই নিরাপত্তা, গুণমান ও মানবজীবনের মূল্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। উন্নয়ন তখনই অর্থবহ হয় যখন সেটি নিরাপদ, টেকসই ও মানুষের জন্য কল্যাণকর হয়।

মেট্রোরেলের এই দুর্ঘটনা আমাদের সতর্ক করছে—উন্নয়নের কাঠামো নয়, নিরাপত্তার ভিত্তিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত হবে ঘটনাটিকে একটি একক ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ হিসেবে না দেখে এটি থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং অবকাঠামোগত নিরাপত্তা ব্যবস্থার পুনর্মূল্যায়ন করা। অন্যথায়, আগামী দিনে আরও বড় দুর্ঘটনা রোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

ফার্মগেটের মেট্রোরেল দুর্ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; এটি আমাদের নগর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থার গভীর ত্রুটির প্রতিচ্ছবি। আজ যদি যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে উন্নয়নের প্রতীক মেট্রোরেলই পরিণত হতে পারে নাগরিক আতঙ্কের প্রতীকে। এখনই সময়—অবহেলার নয়, জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের।

 – গোলাম মোস্তফা, ফিচার্স রাইটার ও কলামিস্ট

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”