ঢাকা ০৫:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোটের সম্ভাবনা নেই, এনসিপির জন্য দরজা খোলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশঃ ০১:২৩:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫
  • / 7

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ছবি: সংগৃহীত


দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আর কোনো নির্বাচনী জোট গঠন করতে চায় না বিএনপি। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।

ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমরা অতীতে রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে জামায়াতের সঙ্গে জোট করেছি। কিন্তু এবার তাদের সঙ্গে জোট করার প্রয়োজনীয়তা মনে করছি না।’

তিনি জানান, নির্বাচন তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত এনসিপির সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা থাকবে। তবে জোট গঠন হবে মূলত তাদের নিয়েই, যারা যুগপৎ আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামে বিএনপির সঙ্গে ছিল।

আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে সালাহউদ্দিন আহমেদ আশা প্রকাশ করেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই একটি অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচন ঘিরে যে দাবিদাওয়া তুলছে, তা মূলত তাদের বৃহত্তর রাজনৈতিক কৌশলেরই অংশ।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ আলোচনায় হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আলোচনাটা অপ্রয়োজনীয়ভাবে দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয়, যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে এটা শেষ হওয়া উচিত ছিল।’

সালাহউদ্দিন জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো প্রায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন কেবল সুপ্রিম কোর্টের রিভিউ শুনানির রায় বাকি। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ‘আমরা আশা করি, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদনের পক্ষে ইতিবাচক রায় দেবে।’

তবে সদ্য বিদায়ী প্রধান বিচারপতিকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রাখার বিষয়টি নিয়ে কিছু বিতর্ক আছে বলেও উল্লেখ করেন বিএনপির এই নেতা। তার ভাষায়, ‘বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে। যদি এর চেয়ে ভালো কোনো বিকল্পে ঐকমত্যে পৌঁছানো না যায়, তবে বর্তমান কাঠামোই বহাল থাকবে।’

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির বিরোধিতা করে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশ এখনো এই পদ্ধতির জন্য প্রস্তুত নয়। ভোটাররা সরাসরি তাদের পরিচিত প্রার্থীকেই ভোট দিতে চান। পিআর চালু হলে ভোটারদের উৎসাহ কমে যাবে, সংসদ দুর্বল হবে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেসব দেশে পিআর চলে, সেখানে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী। কিন্তু বাংলাদেশে এমপিরাই সরাসরি উন্নয়ন কার্যক্রমে যুক্ত থাকেন, ফলে এখানে এই পদ্ধতি কার্যকরভাবে কাজ করবে না।’

পিআর পদ্ধতিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনের সুযোগ কমে যাওয়ার আশঙ্কার কথাও তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এটি অন্যায় ও গণতন্ত্রবিরোধী। কিছু ছোট দল পিআরের পক্ষে থাকলেও এতে দুর্বল জোট সরকার গঠনের ঝুঁকি থাকে।’

আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমার দৃষ্টিতে আওয়ামী লীগ আর রাজনৈতিক দল নয়। তারা অনেক আগেই তাদের রাজনৈতিক আদর্শ ও চরিত্র হারিয়েছে। এখন তারা একটি মাফিয়া ধারা সংগঠনে পরিণত হয়েছে— একদলীয়, ফ্যাসিস্ট শক্তি।’

তিনি দাবি করেন, ১৯৭৫ সালের আগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কখনোই গণতন্ত্র চর্চা করেনি। ‘গণতন্ত্র তাদের ডিএনএতেই নেই,’ বলেন বিএনপির এই নেতা।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্মান করি। তবে প্রকৃত রাজনৈতিক ওজন আসে জনসমর্থন থেকে। কিছু ছোট দল বড় আওয়াজ তুললেও তারা খুব কমসংখ্যক জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করে।’

তিনি বলেন, বিএনপি এখনো নির্বাচনি জোট এবং জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়েই মনোযোগী। কীভাবে শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত কৌশল ঠিক হবে, তা নির্ভর করছে রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”

শেয়ার করুন

বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোটের সম্ভাবনা নেই, এনসিপির জন্য দরজা খোলা

প্রকাশঃ ০১:২৩:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ছবি: সংগৃহীত


দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আর কোনো নির্বাচনী জোট গঠন করতে চায় না বিএনপি। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।

ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমরা অতীতে রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে জামায়াতের সঙ্গে জোট করেছি। কিন্তু এবার তাদের সঙ্গে জোট করার প্রয়োজনীয়তা মনে করছি না।’

তিনি জানান, নির্বাচন তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত এনসিপির সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা থাকবে। তবে জোট গঠন হবে মূলত তাদের নিয়েই, যারা যুগপৎ আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামে বিএনপির সঙ্গে ছিল।

আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে সালাহউদ্দিন আহমেদ আশা প্রকাশ করেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই একটি অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচন ঘিরে যে দাবিদাওয়া তুলছে, তা মূলত তাদের বৃহত্তর রাজনৈতিক কৌশলেরই অংশ।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ আলোচনায় হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আলোচনাটা অপ্রয়োজনীয়ভাবে দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয়, যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে এটা শেষ হওয়া উচিত ছিল।’

সালাহউদ্দিন জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো প্রায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন কেবল সুপ্রিম কোর্টের রিভিউ শুনানির রায় বাকি। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ‘আমরা আশা করি, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদনের পক্ষে ইতিবাচক রায় দেবে।’

তবে সদ্য বিদায়ী প্রধান বিচারপতিকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রাখার বিষয়টি নিয়ে কিছু বিতর্ক আছে বলেও উল্লেখ করেন বিএনপির এই নেতা। তার ভাষায়, ‘বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে। যদি এর চেয়ে ভালো কোনো বিকল্পে ঐকমত্যে পৌঁছানো না যায়, তবে বর্তমান কাঠামোই বহাল থাকবে।’

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির বিরোধিতা করে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশ এখনো এই পদ্ধতির জন্য প্রস্তুত নয়। ভোটাররা সরাসরি তাদের পরিচিত প্রার্থীকেই ভোট দিতে চান। পিআর চালু হলে ভোটারদের উৎসাহ কমে যাবে, সংসদ দুর্বল হবে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেসব দেশে পিআর চলে, সেখানে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী। কিন্তু বাংলাদেশে এমপিরাই সরাসরি উন্নয়ন কার্যক্রমে যুক্ত থাকেন, ফলে এখানে এই পদ্ধতি কার্যকরভাবে কাজ করবে না।’

পিআর পদ্ধতিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনের সুযোগ কমে যাওয়ার আশঙ্কার কথাও তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এটি অন্যায় ও গণতন্ত্রবিরোধী। কিছু ছোট দল পিআরের পক্ষে থাকলেও এতে দুর্বল জোট সরকার গঠনের ঝুঁকি থাকে।’

আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমার দৃষ্টিতে আওয়ামী লীগ আর রাজনৈতিক দল নয়। তারা অনেক আগেই তাদের রাজনৈতিক আদর্শ ও চরিত্র হারিয়েছে। এখন তারা একটি মাফিয়া ধারা সংগঠনে পরিণত হয়েছে— একদলীয়, ফ্যাসিস্ট শক্তি।’

তিনি দাবি করেন, ১৯৭৫ সালের আগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কখনোই গণতন্ত্র চর্চা করেনি। ‘গণতন্ত্র তাদের ডিএনএতেই নেই,’ বলেন বিএনপির এই নেতা।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্মান করি। তবে প্রকৃত রাজনৈতিক ওজন আসে জনসমর্থন থেকে। কিছু ছোট দল বড় আওয়াজ তুললেও তারা খুব কমসংখ্যক জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করে।’

তিনি বলেন, বিএনপি এখনো নির্বাচনি জোট এবং জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়েই মনোযোগী। কীভাবে শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত কৌশল ঠিক হবে, তা নির্ভর করছে রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”