ঢাকা ১২:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে নাশকতার ছক: নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশঃ ০৮:২৭:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
  • / 7

শেখ হাসিনা | ছবি: সংগৃহীত


নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের একাংশ নতুন করে দেশব্যাপী অস্থিরতা তৈরির ছক আঁকছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে তথ্য পাওয়া গেছে। মূল উদ্দেশ্য বিএনপির নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রাজধানীতে একটি কনভেনশন হলে গোপন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালানো হয়।

গত বছরের ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকে পরাজিত রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ বিভিন্নভাবে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের চেষ্টা করে আসছে। ব্যর্থ হওয়া একাধিক প্রচেষ্টার পর সম্প্রতি আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে সংগঠনটির নিষিদ্ধ অংশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৮ জুলাই সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজধানীর একটি কনভেনশন হলে গোপন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এই কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের প্রায় ৪০০ জন নেতা-কর্মী অংশ নেন।

প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শেখর ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা বাহাউদ্দিন নাছিমের নির্দেশনার ভিত্তিতে পরিকল্পনা তুলে ধরা হয় বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যসূত্র জানায়। যদিও তারা বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন, তবে কর্মসূচি পরিচালনায় দায়িত্বে ছিলেন যুবলীগের নেতা সোহেল রানা এবং শামীমা নাসরিন শম্পা।

প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু ছিল: রাজপথে অবস্থান এবং গোপন জড়ো হওয়া, পরিচয় গোপন করে আত্মগোপনে থাকা, যোগাযোগের বিকল্প মাধ্যম ব্যবহার, বড় ধরনের নাশকতার প্রস্তুতি ও পরবর্তী পদক্ষেপ, শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের জন্য জনমত তৈরি। 

রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারীরা ব্যবহার করেন ছদ্মনাম। কেউ পরিচয় দেন রাজমিস্ত্রি, কেউ কার্পেন্টার বা কৃষি শ্রমিক হিসেবে। এতে সাধারণ চোখে বিষয়টি নজরে না পড়ায় প্রশিক্ষণ নির্বিঘ্নে শেষ করা সম্ভব হয়।

গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) এই কর্মসূচির তথ্য প্রথমে শনাক্ত করে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রাজধানীর ভাটারা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করে এবং এরপর ঢাকা থেকে ১৪ জনকে গ্রেফতার করে, যাদের দু’দফা রিমান্ডে নেওয়া হয়।

গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন শামীমা নাসরিন শম্পা এবং সোহেল রানা। শম্পার বাড়ি গোপালগঞ্জে এবং সোহেল রানার বরগুনায়। শম্পা জনশক্তি রপ্তানির নামে কনভেনশন হলটি ভাড়া নেন এবং কর্মসূচির আড়ালে রাজনীতিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালান।

২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে বড় ধরনের হামলার আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশব্যাপী সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে।

ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী যুগান্তরকে বলেন, পরাজিত রাজনৈতিক শক্তির অপতৎপরতার খবর আমরা পেয়েছি। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা সফল হতে পারবে না।

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সম্ভাব্য নাশকতার তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। ঢাকা রেঞ্জের সব জেলায় এসপিদের সর্বোচ্চ সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। ফ্যাসিবাদী চক্রকে কঠোরভাবে দমন করা হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”

শেয়ার করুন

শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে নাশকতার ছক: নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের

প্রকাশঃ ০৮:২৭:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫

শেখ হাসিনা | ছবি: সংগৃহীত


নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের একাংশ নতুন করে দেশব্যাপী অস্থিরতা তৈরির ছক আঁকছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে তথ্য পাওয়া গেছে। মূল উদ্দেশ্য বিএনপির নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রাজধানীতে একটি কনভেনশন হলে গোপন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালানো হয়।

গত বছরের ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকে পরাজিত রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ বিভিন্নভাবে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের চেষ্টা করে আসছে। ব্যর্থ হওয়া একাধিক প্রচেষ্টার পর সম্প্রতি আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে সংগঠনটির নিষিদ্ধ অংশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৮ জুলাই সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজধানীর একটি কনভেনশন হলে গোপন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এই কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের প্রায় ৪০০ জন নেতা-কর্মী অংশ নেন।

প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শেখর ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা বাহাউদ্দিন নাছিমের নির্দেশনার ভিত্তিতে পরিকল্পনা তুলে ধরা হয় বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যসূত্র জানায়। যদিও তারা বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন, তবে কর্মসূচি পরিচালনায় দায়িত্বে ছিলেন যুবলীগের নেতা সোহেল রানা এবং শামীমা নাসরিন শম্পা।

প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু ছিল: রাজপথে অবস্থান এবং গোপন জড়ো হওয়া, পরিচয় গোপন করে আত্মগোপনে থাকা, যোগাযোগের বিকল্প মাধ্যম ব্যবহার, বড় ধরনের নাশকতার প্রস্তুতি ও পরবর্তী পদক্ষেপ, শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের জন্য জনমত তৈরি। 

রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারীরা ব্যবহার করেন ছদ্মনাম। কেউ পরিচয় দেন রাজমিস্ত্রি, কেউ কার্পেন্টার বা কৃষি শ্রমিক হিসেবে। এতে সাধারণ চোখে বিষয়টি নজরে না পড়ায় প্রশিক্ষণ নির্বিঘ্নে শেষ করা সম্ভব হয়।

গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) এই কর্মসূচির তথ্য প্রথমে শনাক্ত করে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রাজধানীর ভাটারা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করে এবং এরপর ঢাকা থেকে ১৪ জনকে গ্রেফতার করে, যাদের দু’দফা রিমান্ডে নেওয়া হয়।

গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন শামীমা নাসরিন শম্পা এবং সোহেল রানা। শম্পার বাড়ি গোপালগঞ্জে এবং সোহেল রানার বরগুনায়। শম্পা জনশক্তি রপ্তানির নামে কনভেনশন হলটি ভাড়া নেন এবং কর্মসূচির আড়ালে রাজনীতিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালান।

২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে বড় ধরনের হামলার আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশব্যাপী সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে।

ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী যুগান্তরকে বলেন, পরাজিত রাজনৈতিক শক্তির অপতৎপরতার খবর আমরা পেয়েছি। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা সফল হতে পারবে না।

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সম্ভাব্য নাশকতার তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। ঢাকা রেঞ্জের সব জেলায় এসপিদের সর্বোচ্চ সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। ফ্যাসিবাদী চক্রকে কঠোরভাবে দমন করা হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”