নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক সমীকরণ: তিন প্রধান জোটের ছক, বিএনপি-জামায়াত একসাথে নয়

- প্রকাশঃ ১০:০৫:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫
- / 2
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। দলগুলো নিজেদের মতো করে ভোটের মাঠে সক্রিয় হয়ে ভোটারদের কাছে ধরনা দিচ্ছে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দুই-একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ার শর্ত জুড়লেও শেষ পর্যন্ত তারাও ভোটের লড়াইয়ে থাকছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এসব ঘোষণা আসন সমঝোতার কৌশল মাত্র।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সামনে মূলত তিনটি রাজনৈতিক জোট গড়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। সময় যত এগোচ্ছে, ফেব্রুয়ারির নির্ধারিত নির্বাচনকে ঘিরে জোট সম্প্রসারণ প্রক্রিয়ায় তৎপরতা বাড়ছে। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ১২ দল, সমমনা জোট ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ বেশ কয়েকটি দল বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত করেছে। একইসঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চ, এবি পার্টি, এনসিপি ও গণ-অধিকার পরিষদের সঙ্গে বিএনপি নেতৃত্বাধীন হাইকমান্ডের নিয়মিত বৈঠক ও যোগাযোগ চলছে।
তবে বিএনপি স্পষ্ট করে জানিয়েছে, তারা কোনোভাবেই জামায়াতের সঙ্গে জোটে যাবে না। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (চরমোনাই পীরের দল) এবং হেফাজতের মামুনুলপন্থী অংশকে নিয়ে আলাদা একটি ইসলামী জোট গঠনের চেষ্টা চলছে।
রাজনৈতিক মহলের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এনসিপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, এবি পার্টি, গণ-অধিকার পরিষদসহ কয়েকটি দল পৃথক জোট গঠনের প্রস্তুতি নিলেও শেষ পর্যন্ত তারা বিএনপির সঙ্গে একীভূত হতে পারে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, যেসব দল নির্বাচনে না যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে, তা আসলে দর-কষাকষির কৌশল। সবাই নির্বাচনমুখী।
আসন বণ্টন নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিএনপি ৬০টির বেশি আসন ছাড়তে রাজি নয়, অন্যদিকে এনসিপি চাইছে ৩০টি আসন। জামায়াতও অন্তত ৫০টি আসন দাবি করছে। ফলে দর-কষাকষি চললেও বিএনপি এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যায়নি।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগকেও জাতীয় পার্টির (জাপা) ওপর ভর করতে হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি আদালতের আদেশে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের ওপর থেকে স্থগিতাদেশ উঠিয়ে নেওয়ায় দলটি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকদের একটি অংশ জাতীয় পার্টিকে বিকল্প হিসেবে দেখতেও পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী মনে করেন, ভোটই গণতন্ত্রের প্রথম সোপান। যারা নির্বাচনে না যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে তারাও শেষ পর্যন্ত ভোটে অংশ নেবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, যুগপৎ আন্দোলনে থাকা শরিকদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চলছে। জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠনের লক্ষ্যে বিএনপি ইতিবাচক রয়েছে।
অন্যদিকে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানান, ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চললেও বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই।
সব মিলিয়ে আগামী নির্বাচনে অন্তত তিনটি প্রধান জোট গড়ে উঠবে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তবে শেষ মুহূর্তে দর-কষাকষি ও সমঝোতার ভিত্তিতে জোটের রূপরেখায় বড় পরিবর্তন আসতে পারে বলেও তারা আভাস দিয়েছেন।