ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক যুগ পর শিবিরের উত্থান: ডাকসুর তিন শীর্ষ পদে আধিপত্য

- প্রকাশঃ ১২:২৩:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / 2
ডাকসু নির্বাচনে ভিপি, জিএস, এজিএস পদে শিবিরের জয়। ২৮ পদের মধ্যে ৯টিতে বিজয়ী ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট | ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বিপুল জয় পেয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’। ভিপি, জিএস ও এজিএসসহ ১২টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ৯টিতে জয়ী হয়েছেন জোটটির প্রার্থীরা।
ভিপি (সহসভাপতি) পদে জয়ী হয়েছেন শিবিরের নেতা মো. আবু সাদিক কায়েম। তিনি পেয়েছেন ১৪ হাজার ৪২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান পান ৫ হাজার ৭০৮ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন পান ৩ হাজার ৮৮৩ এবং স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের উমামা ফাতেমা পান ৩ হাজার ৩৮৯ ভোট। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংসদের প্রার্থী আবদুল কাদের পান ১ হাজার ১০৩ এবং প্রতিরোধ পর্ষদের তাসনিম আফরোজ ইমি পান ৬৮ ভোট।
জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে জয়ী হয়েছেন শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ। তিনি পেয়েছেন ১০ হাজার ৭৯৪ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের শেখ তানভীর বারি হামিম পান ৫ হাজার ২৮৩ ভোট। প্রতিরোধ পর্ষদের প্রার্থী বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের মেঘমল্লার বসু পান ৪ হাজার ৯৪৯ ভোট।
এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) পদে জয়ী হয়েছেন শিবিরের মুহা. মহিউদ্দীন খান। তিনি পেয়েছেন ১১ হাজার ৭৭২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের তানভীর আল হাদী মায়েদ পান ৫ হাজার ৬৪ ভোট।
এ ছাড়া শিবির–সমর্থিত প্যানেল থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক, আন্তর্জাতিক সম্পাদক, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক, ক্রীড়া সম্পাদক, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক, মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক এবং ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন প্রার্থীরা।
তবে শিবিরের বাইরে থেকে সমাজসেবা সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবাইর বিন নেছারী, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ এবং গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী সানজিদা আহমেদ তন্বি।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ঢাবির আটটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়। উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট সম্পন্ন হলেও পরে ভোটগণনা ঘিরে বিভিন্ন পক্ষ অনিয়মের অভিযোগ তোলে। চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয় বুধবার সকাল সাড়ে আটটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে।
ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান ফল প্রত্যাখ্যান করে ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘পরিকল্পিত কারচুপির এই ফলাফল অনুমান করেছিলাম। এই প্রহসন আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।’ স্বতন্ত্র প্রার্থী উমামা ফাতেমাও ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন অবশ্য নির্বাচনকে সফল দাবি করে বলেন, এই ডাকসুর মাধ্যমে আমরা একটি মডেল তৈরি করেছি। আশা করি, বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলো এই অভিজ্ঞতা অনুসরণ করবে।
দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর ঢাবি ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে সক্রিয় রাজনীতি করতে পারেনি ইসলামী ছাত্রশিবির। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে তারা প্রকাশ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করে। মাত্র এক বছরের মাথায় ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিয়ে তারা ব্যাপক সাফল্য পেল।