ঢাকা ০৭:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অভ্যুত্থানের অগ্রসেনানী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের দাবি কতটা যৌক্তিক?

  • প্রকাশঃ ০৫:৫২:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫
  • / 49

বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে। ১৯৯১ সালে দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং ১৯৯২ সালে সরকার কর্তৃক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিবন্ধন আইন চালুর মাধ্যমে এই অধ্যায়ের সূচনা ঘটে। কারণে ভাষা আন্দোলন থেকে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন পর্যন্ত দেশের ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলনগুলোতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরাসরি অংশগ্রহণ দেখা যায়নি। তবে সময়ের পরিবর্তনে তারা ধীরে ধীরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে।

২০১৫ সালের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উল্লেখযোগ্যভাবে সক্রিয় ছিল। তবে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে তাদের ভূমিকা স্মরণীয় অনস্বীকার্য হয়ে থাকবে।

সরকারি চাকরিতে যৌক্তিক কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন পরিণত হয় একটি স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরির প্রতি আগ্রহ তুলনামূলক কম থাকলেও—বেশিরভাগই উদ্যোক্তা, বেসরকারি চাকরি বা বিদেশমুখী—তবুও তারা দেশের স্বার্থে রাস্তায় নেমে আন্দোলনের অন্যতম চালিকাশক্তি হয়ে ওঠে। এই স্পিরিট কোনো পূর্বপরিকল্পনার অংশ ছিল না, ছিল হৃদয়ের অন্তঃস্থ প্রেরণা থেকে জাতির ডাকে সাড়া দেওয়া।

আগস্ট পর্যন্ত চলা আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে, তা ছিল নিঃস্বার্থ এবং আত্মত্যাগে ভরা। তবে এটিকে চূড়ান্ত বিজয় হিসেবে ধরলে ভুল হবে; এটি ছিল কেবল মুক্তির সূচনা। সরকারহীন পরিস্থিতি, নৈরাজ্য, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, সড়ক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা দুর্যোগকালীন মানবিক সহায়তার মধ্য দিয়ে আন্দোলনের স্পিরিটকে ধারণ করে চূড়ান্ত লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে তরুণ সমাজ।

বাংলাদেশের ১১৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় তিন লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এতদিন পর্যন্ত তাদের অনেকেই ‘রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয়’ বলে বিবেচিত হতো। কিন্তু অভ্যুত্থানের সময় তারা প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করেছে, তারা যথেষ্ট সচেতন এবং দেশের প্রয়োজনে নিজেদের সর্বোচ্চ ত্যাগ দিতেও প্রস্তুত।

এই প্রেক্ষাপটে যে প্রশ্নটি এখন বারবার সামনে আসছে তা হলো—এই বিশাল ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিত্বের জন্য কি কোনো আনুষ্ঠানিক কাঠামো আছে? দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীবান্ধব, অরাজনৈতিক ছাত্র সংসদ বা প্রতিনিধি কাঠামো এখনো অনুপস্থিত।

গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে একটি সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল শিক্ষার্থীদের স্বার্থরক্ষাকারী ছাত্র সংসদ প্ল্যাটফর্ম এখন কেবল প্রয়োজন নয়, অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। প্ল্যাটফর্ম শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গড়ে তুলতে পারে একটি জবাবদিহিমূলক, সচেতন কার্যকর প্রজন্ম, যারা কেবল নিজেদের নয়, দেশ সমাজের ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে।

লেখা: মোখলেছুর রহমান ইমরোজ

শেয়ার করুন

অভ্যুত্থানের অগ্রসেনানী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের দাবি কতটা যৌক্তিক?

প্রকাশঃ ০৫:৫২:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫

বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে। ১৯৯১ সালে দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং ১৯৯২ সালে সরকার কর্তৃক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিবন্ধন আইন চালুর মাধ্যমে এই অধ্যায়ের সূচনা ঘটে। কারণে ভাষা আন্দোলন থেকে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন পর্যন্ত দেশের ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলনগুলোতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরাসরি অংশগ্রহণ দেখা যায়নি। তবে সময়ের পরিবর্তনে তারা ধীরে ধীরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে।

২০১৫ সালের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উল্লেখযোগ্যভাবে সক্রিয় ছিল। তবে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে তাদের ভূমিকা স্মরণীয় অনস্বীকার্য হয়ে থাকবে।

সরকারি চাকরিতে যৌক্তিক কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন পরিণত হয় একটি স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরির প্রতি আগ্রহ তুলনামূলক কম থাকলেও—বেশিরভাগই উদ্যোক্তা, বেসরকারি চাকরি বা বিদেশমুখী—তবুও তারা দেশের স্বার্থে রাস্তায় নেমে আন্দোলনের অন্যতম চালিকাশক্তি হয়ে ওঠে। এই স্পিরিট কোনো পূর্বপরিকল্পনার অংশ ছিল না, ছিল হৃদয়ের অন্তঃস্থ প্রেরণা থেকে জাতির ডাকে সাড়া দেওয়া।

আগস্ট পর্যন্ত চলা আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে, তা ছিল নিঃস্বার্থ এবং আত্মত্যাগে ভরা। তবে এটিকে চূড়ান্ত বিজয় হিসেবে ধরলে ভুল হবে; এটি ছিল কেবল মুক্তির সূচনা। সরকারহীন পরিস্থিতি, নৈরাজ্য, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, সড়ক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা দুর্যোগকালীন মানবিক সহায়তার মধ্য দিয়ে আন্দোলনের স্পিরিটকে ধারণ করে চূড়ান্ত লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে তরুণ সমাজ।

বাংলাদেশের ১১৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় তিন লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এতদিন পর্যন্ত তাদের অনেকেই ‘রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয়’ বলে বিবেচিত হতো। কিন্তু অভ্যুত্থানের সময় তারা প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করেছে, তারা যথেষ্ট সচেতন এবং দেশের প্রয়োজনে নিজেদের সর্বোচ্চ ত্যাগ দিতেও প্রস্তুত।

এই প্রেক্ষাপটে যে প্রশ্নটি এখন বারবার সামনে আসছে তা হলো—এই বিশাল ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিত্বের জন্য কি কোনো আনুষ্ঠানিক কাঠামো আছে? দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীবান্ধব, অরাজনৈতিক ছাত্র সংসদ বা প্রতিনিধি কাঠামো এখনো অনুপস্থিত।

গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে একটি সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল শিক্ষার্থীদের স্বার্থরক্ষাকারী ছাত্র সংসদ প্ল্যাটফর্ম এখন কেবল প্রয়োজন নয়, অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। প্ল্যাটফর্ম শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গড়ে তুলতে পারে একটি জবাবদিহিমূলক, সচেতন কার্যকর প্রজন্ম, যারা কেবল নিজেদের নয়, দেশ সমাজের ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে।

লেখা: মোখলেছুর রহমান ইমরোজ