জ্বলন্ত ভবনের সামনে বন্ধুর মতো পাশে দাঁড়ানো সেই কিশোর, নাম মোস্তফা

- প্রকাশঃ ০৮:৪০:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
- / 5
সাহসী কিশোরের নাম মো. আরমান হোসেন মোস্তফা | ছবি: সংগৃহীত
হায়দার আলী ভবনের সামনে আগুনে দগ্ধ এক কিশোরের কান্না—তার পাশে সাহসিকতার প্রতীক হয়ে দাঁড়ানো আরেক কিশোর। মুহূর্তে ভাইরাল হওয়া ছবিটি শুধু একটি দুর্ঘটনার নয়, বরং মানবিকতার নিঃশব্দ ভাষ্য।
২১ জুলাই, উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ভয়াবহ ঘটনায় একটি ভিডিও থেকে নেওয়া ছবিতে দেখা যায়, আহত এক কিশোরকে জড়িয়ে ধরে সাহায্যের জন্য চিৎকার করছে এক ছাত্র। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেই সাহসী কিশোরের নাম মো. আরমান হোসেন মোস্তফা (১৩)।
সে মাইলস্টোন স্কুলের বাংলা মাধ্যম শাখার ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরে বসবাস করা মোস্তফার পরিবারে বাবা রফিকুল ইসলাম, মা আয়েশা বেগম, এবং তিন ভাইবোন রয়েছেন।
বেলা একটার দিকে স্কুল ছুটির পর মোস্তফা যখন মাঠে ছিল, তখনই হায়দার আলী ভবনে ঘটে বিস্ফোরণ। আতঙ্কিত সবাই যখন দৌড়াদৌড়ি করছিল, তখন মোস্তফা দৌড়ে ছুটে যায় ঘটনাস্থলে। সেখানে সে দেখতে পায়—এক কিশোর দগ্ধ হয়ে ভবনের সামনে পড়ে আছে। সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে গিয়ে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে সে সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকে।
মোস্তফার মা বলেন, ওর গা আগুনে গরম হয়ে ছিল, রক্ত ঝরছিল। তাও মোস্তফা তাকেই ধরে রেখেছিল। চিৎকার করছিল—‘অক্সিজেন লাগবে!’
পরে একজন লোক এবং এক কলেজছাত্র এসে সহায়তা করেন। মোস্তফা ও ওই ছাত্র ছেলেটিকে স্কুলের চিকিৎসাকক্ষে নিয়ে যান। ঘটনার সময় মোস্তফার শরীর রক্তে ভেসে যায়। তার বড় ভাই মো. আবির প্রথমে ভেবেছিলেন, মোস্তফা আহত। পরে মোস্তফা জানায়, রক্ত ছিল সেই আহত ছেলের। পরবর্তীতে সে ফায়ার সার্ভিসকে পানি আনার কাজে সাহায্য করে এবং ধ্বংসাবশেষ অপসারণেও অংশ নেয়।
এই সাহসী কাণ্ডের পর তিনদিন ধরে মোস্তফা জ্বরে ভুগেছে, এখনো মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। কিন্তু তার মা-বাবা ও স্কুলের শিক্ষকরা বলছেন, মোস্তফার এই মানবিকতা ও সাহসিকতা তাদের গর্বিত করেছে।
মোস্তফার মা আয়েশা বেগম বলেন, আমার সন্তান কাউকে চেনে না, কিন্তু ছুটে গিয়েছে তাকে বাঁচাতে। সবাই দোয়া করুন, ও যেন ভবিষ্যতে আরও বড় মনের মানুষ হয়। যেখানে মানুষ নিরাপত্তার খোঁজে দৌড়ায়, সেখানে একজন কিশোর পেছনে না তাকিয়ে এগিয়ে গিয়েছে কারও জীবন রক্ষায়। মোস্তফা হয়ে উঠেছে সহানুভূতির এক নিরব নায়ক। সমাজের জন্য এমন শিশুদের গল্প আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয় আদর্শ কখনো বয়স দেখে না।