ঢাকা ০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাই ঘোষণা পত্রের ২৮ দফায় যা যা আছে জেনেন একজনরে

মো. জিসান রহমান । মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি
  • প্রকাশঃ ১১:১৪:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫
  • / 2

ছবি: সংগৃহীত

‘ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪’-এর ধারাবাহিকতায় একটি ২৮ দফার ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সাংবিধানিক সংস্কারের বিষয়ে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঘোষণাপত্রে একদিকে যেমন স্বাধীনতার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে, তেমনি বলা হয়েছে, বিগত কয়েক দশকে গণতান্ত্রিক চেতনার বিপর্যয় ঘটেছে। এতে ১/১১ থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত নানা সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

জুলাই ঘোষণাপত্র: ২৮ দফা একনজরে

পটভূমি ও বৈধতা (১-৫)

১। পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে ২৩ বছরের লড়াইয়ের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
২। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারভিত্তিক রাষ্ট্র গড়তে জাতি সংগ্রাম করে।
৩। ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়নে কাঠামোগত দুর্বলতা ও বাকশাল চালুর সমালোচনা করা হয়।
৪। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লব বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথ তৈরি করে।
৫। ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তিত হয়।

ফ্যাসিবাদী শাসনের উত্থান ও পরিণতি (৬-১৫)

৬। ১/১১ এর পর শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি হয়।
৭। গত ১৬ বছরে সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান অগণতান্ত্রিকভাবে পরিবর্তন করা হয়।
৮। গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণের অভিযোগ তোলা হয়।
৯। আওয়ামী লীগ সরকারকে ফ্যাসিবাদী ও মাফিয়াচালিত বলে উল্লেখ করা হয়।
১০। তথাকথিত উন্নয়নের নামে দুর্নীতি ও পরিবেশ ধ্বংসের কথা বলা হয়।
১১। আন্দোলনকারীদের ওপর জেল-গুম-হামলা-মামলার উল্লেখ রয়েছে।
১২। বিদেশি খবরদারির বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমন করার অভিযোগ।
১৩। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ বলে উল্লেখ।
১৪। নিয়োগে দলীয়করণ ও কোটাভিত্তিক বৈষম্যের কথা বলা হয়।
১৫। বিরোধীদের ওপর দমনপীড়ন ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কারণে জনগণের ক্ষোভের কথা উল্লেখ।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও বিজয় (১৬–১৮)

১৬। ছাত্র-জনতার গণবিক্ষোভ দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
১৭। আন্দোলনে নারী-শিশুসহ প্রায় এক হাজার মানুষ নিহত হয়; সামরিক বাহিনীর একটি অংশ জনগণের পক্ষে অবস্থান নেয়।
১৮। ৫ আগস্ট গণভবন অভিমুখে লংমার্চের মাধ্যমে সরকার পতন ঘটে; শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগে বাধ্য হন।

নতুন শাসনব্যবস্থা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা (১৯–২৮)

১৯। এই গণঅভ্যুত্থান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও বৈধ বলে দাবি করা হয়।
২০। ৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।
২১। জনগণ বৈষম্য, দুর্নীতি ও ফ্যাসিবাদমুক্ত রাষ্ট্র গঠনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
২২। রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধন করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা।
২৩। বিগত ১৬ বছরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ ও দুর্নীতির বিচার করার অঙ্গীকার।
২৪। আন্দোলনের শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা; শহীদ পরিবার ও আহতদের সুরক্ষা দেওয়া হবে।
২৫। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংসদ গঠন করে সাংবিধানিক সংস্কার সম্পন্ন হবে।
২৬। পরিবেশ ও জলবায়ু সহিষ্ণু উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের অঙ্গীকার।
২৭। ‘ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪’-কে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে ঘোষণাপত্রটি সংশোধিত সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
২৮। এই ঘোষণাপত্রকে ৫ আগস্ট ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বিশেষ ঘোষণা ও প্রতিশ্রুতি:  শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ স্বীকৃতি,   আহত আন্দোলনকারীদের আইনি ও রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা,   গণতান্ত্রিক অন্তর্বর্তী সরকারের স্বীকৃতি,   শাসনব্যবস্থায় নতুন কাঠামোর প্রতিশ্রুতি,   সাংবিধানিক সংস্কার ও টেকসই উন্নয়নের দিশা

ঘোষণাপত্রটি একটি পক্ষের রাজনৈতিক রূপরেখা হিসেবে প্রকাশিত হলেও চলমান পরিস্থিতিতে এটি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আরও প্রতিক্রিয়া, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ সময়ের সঙ্গে সামনে আসবে।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”

প্রাসঙ্গিক

শেয়ার করুন

জুলাই ঘোষণা পত্রের ২৮ দফায় যা যা আছে জেনেন একজনরে

প্রকাশঃ ১১:১৪:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫

‘ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪’-এর ধারাবাহিকতায় একটি ২৮ দফার ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সাংবিধানিক সংস্কারের বিষয়ে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঘোষণাপত্রে একদিকে যেমন স্বাধীনতার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে, তেমনি বলা হয়েছে, বিগত কয়েক দশকে গণতান্ত্রিক চেতনার বিপর্যয় ঘটেছে। এতে ১/১১ থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত নানা সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

জুলাই ঘোষণাপত্র: ২৮ দফা একনজরে

পটভূমি ও বৈধতা (১-৫)

১। পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে ২৩ বছরের লড়াইয়ের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
২। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারভিত্তিক রাষ্ট্র গড়তে জাতি সংগ্রাম করে।
৩। ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়নে কাঠামোগত দুর্বলতা ও বাকশাল চালুর সমালোচনা করা হয়।
৪। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লব বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথ তৈরি করে।
৫। ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তিত হয়।

ফ্যাসিবাদী শাসনের উত্থান ও পরিণতি (৬-১৫)

৬। ১/১১ এর পর শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি হয়।
৭। গত ১৬ বছরে সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান অগণতান্ত্রিকভাবে পরিবর্তন করা হয়।
৮। গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণের অভিযোগ তোলা হয়।
৯। আওয়ামী লীগ সরকারকে ফ্যাসিবাদী ও মাফিয়াচালিত বলে উল্লেখ করা হয়।
১০। তথাকথিত উন্নয়নের নামে দুর্নীতি ও পরিবেশ ধ্বংসের কথা বলা হয়।
১১। আন্দোলনকারীদের ওপর জেল-গুম-হামলা-মামলার উল্লেখ রয়েছে।
১২। বিদেশি খবরদারির বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমন করার অভিযোগ।
১৩। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ বলে উল্লেখ।
১৪। নিয়োগে দলীয়করণ ও কোটাভিত্তিক বৈষম্যের কথা বলা হয়।
১৫। বিরোধীদের ওপর দমনপীড়ন ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কারণে জনগণের ক্ষোভের কথা উল্লেখ।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও বিজয় (১৬–১৮)

১৬। ছাত্র-জনতার গণবিক্ষোভ দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
১৭। আন্দোলনে নারী-শিশুসহ প্রায় এক হাজার মানুষ নিহত হয়; সামরিক বাহিনীর একটি অংশ জনগণের পক্ষে অবস্থান নেয়।
১৮। ৫ আগস্ট গণভবন অভিমুখে লংমার্চের মাধ্যমে সরকার পতন ঘটে; শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগে বাধ্য হন।

নতুন শাসনব্যবস্থা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা (১৯–২৮)

১৯। এই গণঅভ্যুত্থান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও বৈধ বলে দাবি করা হয়।
২০। ৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।
২১। জনগণ বৈষম্য, দুর্নীতি ও ফ্যাসিবাদমুক্ত রাষ্ট্র গঠনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
২২। রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধন করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা।
২৩। বিগত ১৬ বছরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ ও দুর্নীতির বিচার করার অঙ্গীকার।
২৪। আন্দোলনের শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা; শহীদ পরিবার ও আহতদের সুরক্ষা দেওয়া হবে।
২৫। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংসদ গঠন করে সাংবিধানিক সংস্কার সম্পন্ন হবে।
২৬। পরিবেশ ও জলবায়ু সহিষ্ণু উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের অঙ্গীকার।
২৭। ‘ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪’-কে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে ঘোষণাপত্রটি সংশোধিত সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
২৮। এই ঘোষণাপত্রকে ৫ আগস্ট ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বিশেষ ঘোষণা ও প্রতিশ্রুতি:  শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ স্বীকৃতি,   আহত আন্দোলনকারীদের আইনি ও রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা,   গণতান্ত্রিক অন্তর্বর্তী সরকারের স্বীকৃতি,   শাসনব্যবস্থায় নতুন কাঠামোর প্রতিশ্রুতি,   সাংবিধানিক সংস্কার ও টেকসই উন্নয়নের দিশা

ঘোষণাপত্রটি একটি পক্ষের রাজনৈতিক রূপরেখা হিসেবে প্রকাশিত হলেও চলমান পরিস্থিতিতে এটি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আরও প্রতিক্রিয়া, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ সময়ের সঙ্গে সামনে আসবে।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”