ঢাকা ০৩:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চোখের সামনেই লুট: শেখ হাসিনার পতন থেকে লন্ডন পর্যন্ত অর্থ পাচারের তথ্যচিত্র

প্রজন্ম কথা ডেস্ক
  • প্রকাশঃ ১১:২৫:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / 16

বাংলাদেশের হারানো বিলিয়ন: চোখের সামনেই চুরি শিরোনামে তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে লন্ডনভিত্তিক দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস | ছবি: ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া


লন্ডনভিত্তিক প্রভাবশালী দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস (এফটি) বৃহস্পতিবার প্রচার করেছে নতুন একটি তথ্যচিত্র—“বাংলাদেশের হারানো বিলিয়ন: চোখের সামনেই চুরি”। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ পাচার এবং তা পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়েছে।

এফটির দাবি, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনকালে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে। তথ্যচিত্রে বলা হয়, এসব অর্থের বড় অংশ গেছে যুক্তরাজ্যে, যেখানে রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীরা বিলাসবহুল সম্পত্তি কিনেছেন।

তথ্যচিত্রের শুরুতে শেখ হাসিনার পতনের প্রেক্ষাপট দেখানো হয়। কোটাব্যবস্থা সংস্কারের প্রতিবাদ থেকে শুরু হয়ে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগে ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা–নেত্রীসহ বিক্ষোভকারীরা এতে বক্তব্য দেন।

এফটি জানিয়েছে, হাসিনা পরিবারের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি কেনা ও দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য ছিলেন, তাঁর নামও এসেছে একাধিক সম্পত্তি কেলেঙ্কারির সঙ্গে। যদিও তিনি অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন।

তথ্যচিত্রে বলা হয়, ব্যাংক দখল, ভূয়া ঋণ, আমদানি–রপ্তানিতে ভুয়া মূল্যায়ন এবং হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করা হয়েছে। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্যে ৩০০টির বেশি সম্পত্তি থাকার তথ্যও উপস্থাপন করা হয়।

ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি আবদুল মান্নান অভিযোগ করেন, ডিজিএফআইয়ের চাপে তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। এরপর শাসকদল–ঘনিষ্ঠরা ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের ধারণা অনুযায়ী, এস আলম গ্রুপ একাই প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তথ্যচিত্রে বলেন, লুট হওয়া সব অর্থ ফেরত আনা সম্ভব না হলেও প্রমাণ সংগ্রহ করে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা জরুরি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুর্নীতি মোকাবিলা ও আর্থিক খাত সংস্কার ছাড়া টেকসই সমাধান সম্ভব নয়।

এফটি তাদের প্রতিবেদনে সতর্ক করেছে, শেখ হাসিনার পতনের পর নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি হলেও দুর্নীতি দমনে সংস্কার না হলে বাংলাদেশ আবারও একই চক্রে আটকে পড়তে পারে।

তথ্যচিত্রটির শেষ অংশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক রাফিয়া রেহনুমা হৃদি বলেন, আমাদের ভয়, আমরা হয়তো শহীদদের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারব না।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”

শেয়ার করুন

চোখের সামনেই লুট: শেখ হাসিনার পতন থেকে লন্ডন পর্যন্ত অর্থ পাচারের তথ্যচিত্র

প্রকাশঃ ১১:২৫:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের হারানো বিলিয়ন: চোখের সামনেই চুরি শিরোনামে তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে লন্ডনভিত্তিক দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস | ছবি: ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া


লন্ডনভিত্তিক প্রভাবশালী দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস (এফটি) বৃহস্পতিবার প্রচার করেছে নতুন একটি তথ্যচিত্র—“বাংলাদেশের হারানো বিলিয়ন: চোখের সামনেই চুরি”। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ পাচার এবং তা পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়েছে।

এফটির দাবি, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনকালে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে। তথ্যচিত্রে বলা হয়, এসব অর্থের বড় অংশ গেছে যুক্তরাজ্যে, যেখানে রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীরা বিলাসবহুল সম্পত্তি কিনেছেন।

তথ্যচিত্রের শুরুতে শেখ হাসিনার পতনের প্রেক্ষাপট দেখানো হয়। কোটাব্যবস্থা সংস্কারের প্রতিবাদ থেকে শুরু হয়ে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগে ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা–নেত্রীসহ বিক্ষোভকারীরা এতে বক্তব্য দেন।

এফটি জানিয়েছে, হাসিনা পরিবারের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি কেনা ও দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য ছিলেন, তাঁর নামও এসেছে একাধিক সম্পত্তি কেলেঙ্কারির সঙ্গে। যদিও তিনি অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন।

তথ্যচিত্রে বলা হয়, ব্যাংক দখল, ভূয়া ঋণ, আমদানি–রপ্তানিতে ভুয়া মূল্যায়ন এবং হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করা হয়েছে। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্যে ৩০০টির বেশি সম্পত্তি থাকার তথ্যও উপস্থাপন করা হয়।

ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি আবদুল মান্নান অভিযোগ করেন, ডিজিএফআইয়ের চাপে তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। এরপর শাসকদল–ঘনিষ্ঠরা ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের ধারণা অনুযায়ী, এস আলম গ্রুপ একাই প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তথ্যচিত্রে বলেন, লুট হওয়া সব অর্থ ফেরত আনা সম্ভব না হলেও প্রমাণ সংগ্রহ করে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা জরুরি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুর্নীতি মোকাবিলা ও আর্থিক খাত সংস্কার ছাড়া টেকসই সমাধান সম্ভব নয়।

এফটি তাদের প্রতিবেদনে সতর্ক করেছে, শেখ হাসিনার পতনের পর নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি হলেও দুর্নীতি দমনে সংস্কার না হলে বাংলাদেশ আবারও একই চক্রে আটকে পড়তে পারে।

তথ্যচিত্রটির শেষ অংশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক রাফিয়া রেহনুমা হৃদি বলেন, আমাদের ভয়, আমরা হয়তো শহীদদের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারব না।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”