ঢাকা ০৫:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১২০ টাকায় পুলিশের চাকরি, পড়াশোনার সঙ্গে দেশসেবার স্বপ্ন বুনছেন আনিসুল

  • প্রকাশঃ ০৮:৪৯:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫
  • / 60

মাত্র ১২০ টাকার আবেদন ফরম পূরণ করে বাংলাদেশ পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি পেলেন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান মোঃ আনিসুল ইসলাম খান। পরিবারের অর্থনৈতিক দুরবস্থার মাঝেও স্বপ্নকে হার মানতে দেননি ১৮ বছর বয়সী এই তরুণ। তার দৃঢ় মনোবল, কঠোর পরিশ্রম এবং অগাধ আত্মবিশ্বাস তাকে পৌঁছে দিয়েছে জীবনের এক নতুন অধ্যায়ে।

বর্তমানে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী আনিসুল জানান, ছোটবেলা থেকেই বাংলাদেশ পুলিশে যোগদানের স্বপ্ন ছিল। আমার বড় চাচা বাংলাদেশ পুলিশের একজন সাবেক এএসপি ছিলেন। সেই প্রেরণাতেই এগিয়ে গেছি।

পাঁচ সদস্যের পরিবারে বাবার চাকরি নেই গত ছয় মাস ধরে। সংসার চলছে মায়ের সেলাই মেশিন চালানো এবং বড় ভাইয়ের টিউশনির আয়ে। তবুও আনিসুল থেমে থাকেননি। তিনি বলেন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া নিয়ে অনেকেই আমাকে অবহেলা করেছে। বলেছে এতে ভবিষ্যত নেই। কিন্তু আমি বিশ্বাস করেছি প্রচেষ্টা করলে আল্লাহ নিশ্চয়ই পথ করে দেবেন।

এই চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া ছিল কঠিন। মাঠপরীক্ষা, লিখিত এবং মৌখিক তিন ধাপের প্রতিটিই ছিল চ্যালেঞ্জিং। আনিসুল জানান, “মাঠে দৌড় থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষার সময় নার্ভাস ছিলাম, কিন্তু নিজের উপর বিশ্বাস ছিল। আল্লাহর রহমতে সব উত্তীর্ণ হয়েছি।”

গত সপ্তাহে রাত ১০টা ৩০ মিনিটে যখন ফলাফল ঘোষণা করা হয়, আনিসুল নির্বাচিত হওয়ার খবর পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। “চোখে পানি এসে গিয়েছিল। বাবামায়ের মুখ মনে পড়ছিল বারবার। যখন বাড়ি ফিরে তাদের এই সুখবর জানালাম, তাদের চোখের আনন্দের ঝিলিক ভাষায় প্রকাশ করার মতো না,” বলেন তিনি।

তাঁর আগামী লক্ষ্য হলো চার মাসের প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে একজন সৎ, নিষ্ঠাবান পুলিশ সদস্য হিসেবে দেশ ও জনগণের সেবা করা। পাশাপাশি, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং-এর পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে চান তিনি, যাতে ভবিষ্যতে পুলিশের উচ্চ পদে উন্নীত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।

আনিসুল মনে করেন, এমন স্বল্প ব্যয়ে সরকারি চাকরির আবেদন দেশের তরুণদের জন্য একটি বড় সুযোগ। এভাবে যদি যোগ্যতা দিয়েই চাকরি মেলে, ঘুষ তদবির কমবে, দুর্নীতি কমবে, আর দেশটা আরও সুন্দর হবে, মন্তব্য করেন তিনি।

দেশের তরুণদের উদ্দেশে আনিসুল বলেন, স্বপ্ন দেখুন, চেষ্টা করুন, নিজেকে তৈরি করুন। অল্প খরচে চাকরির সুযোগ পেলেই জীবন বদলে যেতে পারে। শুধু প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস আর পরিশ্রমের।

বাংলাদেশ পুলিশের কনস্টেবল পদে নির্বাচিত হয়ে আনিসুল ইসলাম এখন শুধু নিজের পরিবারের মুখেই হাসি ফোটাননি, বরং হয়ে উঠেছেন হাজারো তরুণের অনুপ্রেরণার নাম।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন-“প্রজন্ম কথা

শেয়ার করুন

১২০ টাকায় পুলিশের চাকরি, পড়াশোনার সঙ্গে দেশসেবার স্বপ্ন বুনছেন আনিসুল

প্রকাশঃ ০৮:৪৯:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫

মাত্র ১২০ টাকার আবেদন ফরম পূরণ করে বাংলাদেশ পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি পেলেন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান মোঃ আনিসুল ইসলাম খান। পরিবারের অর্থনৈতিক দুরবস্থার মাঝেও স্বপ্নকে হার মানতে দেননি ১৮ বছর বয়সী এই তরুণ। তার দৃঢ় মনোবল, কঠোর পরিশ্রম এবং অগাধ আত্মবিশ্বাস তাকে পৌঁছে দিয়েছে জীবনের এক নতুন অধ্যায়ে।

বর্তমানে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী আনিসুল জানান, ছোটবেলা থেকেই বাংলাদেশ পুলিশে যোগদানের স্বপ্ন ছিল। আমার বড় চাচা বাংলাদেশ পুলিশের একজন সাবেক এএসপি ছিলেন। সেই প্রেরণাতেই এগিয়ে গেছি।

পাঁচ সদস্যের পরিবারে বাবার চাকরি নেই গত ছয় মাস ধরে। সংসার চলছে মায়ের সেলাই মেশিন চালানো এবং বড় ভাইয়ের টিউশনির আয়ে। তবুও আনিসুল থেমে থাকেননি। তিনি বলেন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া নিয়ে অনেকেই আমাকে অবহেলা করেছে। বলেছে এতে ভবিষ্যত নেই। কিন্তু আমি বিশ্বাস করেছি প্রচেষ্টা করলে আল্লাহ নিশ্চয়ই পথ করে দেবেন।

এই চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া ছিল কঠিন। মাঠপরীক্ষা, লিখিত এবং মৌখিক তিন ধাপের প্রতিটিই ছিল চ্যালেঞ্জিং। আনিসুল জানান, “মাঠে দৌড় থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষার সময় নার্ভাস ছিলাম, কিন্তু নিজের উপর বিশ্বাস ছিল। আল্লাহর রহমতে সব উত্তীর্ণ হয়েছি।”

গত সপ্তাহে রাত ১০টা ৩০ মিনিটে যখন ফলাফল ঘোষণা করা হয়, আনিসুল নির্বাচিত হওয়ার খবর পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। “চোখে পানি এসে গিয়েছিল। বাবামায়ের মুখ মনে পড়ছিল বারবার। যখন বাড়ি ফিরে তাদের এই সুখবর জানালাম, তাদের চোখের আনন্দের ঝিলিক ভাষায় প্রকাশ করার মতো না,” বলেন তিনি।

তাঁর আগামী লক্ষ্য হলো চার মাসের প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে একজন সৎ, নিষ্ঠাবান পুলিশ সদস্য হিসেবে দেশ ও জনগণের সেবা করা। পাশাপাশি, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং-এর পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে চান তিনি, যাতে ভবিষ্যতে পুলিশের উচ্চ পদে উন্নীত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।

আনিসুল মনে করেন, এমন স্বল্প ব্যয়ে সরকারি চাকরির আবেদন দেশের তরুণদের জন্য একটি বড় সুযোগ। এভাবে যদি যোগ্যতা দিয়েই চাকরি মেলে, ঘুষ তদবির কমবে, দুর্নীতি কমবে, আর দেশটা আরও সুন্দর হবে, মন্তব্য করেন তিনি।

দেশের তরুণদের উদ্দেশে আনিসুল বলেন, স্বপ্ন দেখুন, চেষ্টা করুন, নিজেকে তৈরি করুন। অল্প খরচে চাকরির সুযোগ পেলেই জীবন বদলে যেতে পারে। শুধু প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস আর পরিশ্রমের।

বাংলাদেশ পুলিশের কনস্টেবল পদে নির্বাচিত হয়ে আনিসুল ইসলাম এখন শুধু নিজের পরিবারের মুখেই হাসি ফোটাননি, বরং হয়ে উঠেছেন হাজারো তরুণের অনুপ্রেরণার নাম।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন-“প্রজন্ম কথা